“কোনকালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারী,

প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী”

 

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সবাই নিজেদের স্থান থেকে অংশগ্রহণ করেছেন। ছিনিয়ে এনেছেন বিজয়। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও পিছিয়ে ছিলেন না।মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিজের জীবন এমনকি মানসম্মানের কথা না ভেবে দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে তারাও ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, স্বাধীন করেছিলেন দেশমাতৃকা কে।

 

তারা শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণই করেন নি, বরং বিভিন্ন সময়ে আড়ালে থেকে সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

আজকের ব্লগে আমরা ইতিহাসের পাতায় খুঁজে বেড়াবো, দেখবো ১৯৭১ সালে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানগুলো।

 

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের প্রত্যক্ষ অবদানঃ

 

স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরুষরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। যুদ্ধ করেছিলেন। নারীরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। প্রশিক্ষন নিয়েছেন। কখনো সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, আবার কখনো কখনো অংশ নিয়েছেন গেরিলাযুদ্ধে।

দেশের স্বাধীনতা অর্জনের স্বার্থে কোনোকিছুকেই পরোয়া করেন নি। এছাড়াও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করা,সেবা করার মাধ্যমেও অনেক সাহায্য করেছেন।

বিশেষ করে যুদ্ধের সময় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন অনেক সাহসী বাঙালি নারী। তাদের মধ্যে তারামন বিবি, শিরিন বানু মিতিল,কাঁকন বিবি, রওশন আরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। পুরুষের পোষাকে যুদ্ধ করেছেন শিরিন বানু, আলেয়া বেগম সহ আরো অনেকে। পিরোজপুরের ভাগীরথী আত্বত্যাগ করেছেন এসব নারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোবরা, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেখানে মেয়েদের তিন রকম ট্রেনিং দেয়া হতো। যেমন সিভিল ডিফেন্স,নার্সিং,অস্ত্র চালনা ও গেরিলা আক্রমণ।

ভারতে শরণার্থী শিবিরে ডাক্তার, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেক নারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সেবা করেছেন।

 

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের পরোক্ষ অবদানঃ

 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নারীরা পরোক্ষ ভাবে যে অবদান রেখেছেন তা ব্যাখ্যাতীত। অনেক নারী যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও তারা বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এছাড়াও তাদের রান্না করে খাইয়েছেন, কখনো মায়ের মতন, কখনো বোনের মতন পরম মমতায় সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

অনেক নারী মুক্তিযুদ্ধর সময় মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। রাজাকার বা পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে তাদের বাঁচিয়েছেন।

সবচাইতে দুঃসাহসিক কাজ ছিল, পাকিস্তানিদের গোপন তথ্য সংগ্রহ করা, যা খুব সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করে নারীরা বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

এসকল নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপাসনা রায়, নিপা রানী, কানন দেবী,সুধারানী কর, পূর্ণিমা রানীর নাম উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক চিকিৎসা যারা দিয়েছেন তাদের মধ্যে প্রীতি রানী, শুক্লা রানী, হেমলতা দেব সহ আরো অনেকেই অসামান্য অবদান রেখেছেন।

 

এমন হাজারো অবদান রয়েছে যা আমাদের লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে আজো! তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত যেমন, “মুক্তির গান” “হাংগর দি গ্রেনেড” এমন আরো চলচিত্র রয়েছে, যা দেখলে এর অনেকাংশ আন্দাজ করে নেয়া যায়।তখনকার সময়ে নারীদের ভূমিকা কেমন ছিল সেই ব্যাপারে ধারনা পাওয়া যায়।

 

মুক্তিজুদ্ধে অনেক নারী কবি সাহিত্যিক গণের ভূমিকা রয়েছে। যারা কবিতা গানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন। অনুপ্রাণিত করেছেন। সেলিনা বানু ঝুঁকি থাকা সত্বেও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে তাদের মনোবল ধরে রাখতে এবং উজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকেও অনেক নারী শিল্পী অংশ নিয়েছিলেন।

 

শাহনাজ রহমতুল্লাহর ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’ গান সহ কল্যাণী ঘোষের ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ এ রকম আরো অজস্র গান মানুষের বুকে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছে, সুর শুনে মানুষ শিহরিত হয়েছে আর ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশরক্ষার সংগ্রামে।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য আত্বত্যাগ ও কৃতিত্বের ফলে মোট ৬৭২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে দুজন নারী, ডাক্তার সিতারা বেগমতারামন বিবি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।

শুধুমাত্র আজকের সমাজ নয়, মুক্তিযুদ্ধর সময় থেকেই আমাদের দেশ ও সমাজে নারীদের অসামান্য ভূমিকার এই ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে, নারীরা অসহায় নন। আমাদের সমাজ পরিবার, বা রাষ্ট্রে নারীদের নারীদের অবদান রাখার সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে সাম্যের দেশ সমৃদ্ধের দেশ, আমাদের সোনার বাংলাদেশ!

 

এরকম আরও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

লেখক :

আব্দুল্লাহ আর রাফী

ইন্টার্ন,

কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,

YSSE