প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করাটাকেই বলা হয় ওভার থিংকিং (over thinking)। এই অতিরিক্ত চিন্তার(over thinking) ফলে মানুষের মাঝে শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকারের সমস্যার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে মানুষ তার কাজের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলে একসময় তা রুপ নেয় ডিপ্রেশনে(Depression)। ডিপ্রেশন থেকেই তারা নানা ধরনের নিজের ক্ষতি করতে থাকে। অতিরিক্ত চিন্তা থেকে যদি বেরিয়ে আসা যায় তবে জীবনের চলার পথ অনেকটাই সহজ হয়। তখন কর্মে উৎসাহ ফিরে আসে এবং নিজেকে তখন উপরে তোলার চেষ্টা চলতে থাকে। অভার থিংকিং থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিচের পন্থাগুলো অবলম্বন করতে পারেন-

১. সমস্যা খুব কমই সমস্যা 

আপনি দেখবেন যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করছেন সেগুলো আসলে তেমন কোন সমস্যাই নয় অথচ আপনি ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। তাই সবার প্রথমে আপনি আপনার আসল সমস্যা চিহ্নিত করুন তাহলে দেখতে পারবেন ওই সমস্যার সাথে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যা জড়িয়ে আছে। আসল সমস্যাটি সমাধানের পথ বের করতে চেষ্টা করুন। একটি বড় সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে অনেকগুলো ছোট ছোট সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যাবে। ধরুন আপনি বাসার বাইরে কোন হোস্টেলে থাকেন আপনি ভাবলেন আপনার ট্যুর সামনে পরিক্ষার পর যেতে হবে কিন্তু কিছুদিন পরই আপনার পরিক্ষা। আপনি পরিক্ষার কথা চিন্তা করছেন যে কি পড়বেন, কিভাবে পড়বেন কিন্তু আপনি পড়তে বসছেন না আবার ট্যুর কবে যাবেন কিভাবে যাবেন সেগুলো চিন্তা করছেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রথম কাজ হলো পরিক্ষা পড়া শেষ করা  তারপর বাকি কাজ করা।

২. আত্ম প্রত্যাখ্যান এড়ানো

নিজেকে ছোট ভাববেন না। আপনি পারবেন না, আপনাকে দিয়ে হবে না, আপনাকে চাকরিতে চয়েজ  করবে না এসব ভেবে ডিপ্রেসেড হয়ে পড়বেন না। যে কাজটি করতে মনে সংকোচ সৃষ্টি হয় মেই কাজটিই সাহস নিয়ে করার চেষ্টা করুন। কোন সুযোগ সামনে আসার পর আপনার যদি মনে হয় এই কাজটি আপনার জন্য প্রাপ্য নয় তাহলে মনে সাহস নিয়ে কাজটি করে ফেলুন। আপনার লেখা কোন আর্টিকেল যদি আপনার কাছে তেমন ভালো না লাগে, তাহলে এই ভালো না লাগাকে পিছনে রেখে আর্টিকেলটি পাবলিশ করার চেষ্টা করুন। চাকরির এপ্লাই করার ক্ষেত্রে ই-মেইল করার সময় আপনার মনে যদি দ্বন্দ্ব থাকে এটা ভেবে যে তারা রিপ্লাই দিবে না তাহলেও ওই ই-মেইলে নিজের সিভি ড্রপ করে দিন। নিজেকে এই বিষয়টিতে আপনি কখনোই অভার থিংকিং করবেন না। 

৩. সময় অনুযায়ী নিরবতা

সময় সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ। সময়ের বহমানতায় অনেক কিছুই পাল্টে যায়। যে বিষয় নিয়ে আজ আপনি সবচাইতে বেশি দুশ্চিন্তা করছেন কিছুদিন পর হয়তো সেই চিন্তার কথা আপনার মনেও থাকবে না। আর সবচাইতে বড় কথা বেশি সমস্যা বেশি চিন্তার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়। আপনি নিরব থেকে আপনার পরিস্থিতি ও সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবার চেষ্টা করুন। এতে করে অনেক কিছুরই উত্তর পেয়ে যাবেন এবং সমাধান পাওয়াটা সহজ হবে। আপনি যত বেশি চিন্তা করবেন আপনার সমস্যার জটিলতা তত বেশি বাড়তে থাকবে।

৪. নিজেকে প্রশ্ন করা

আপনি যদি আপনার অতীরের কাজ নিয়ে বেশি বেশি ভাবতে থাকেন তবে একসময় আপনার মাঝে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হবে যা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন বর্তমানে আমার কাছে এমন কোন সুযোগ আছে কি না যে, অতীতের যে কাজটি আমি করে ফেলেছি তা মুছে দিতে পারবে বা ভবিষ্যতে ইতিবাচকতার সৃষ্টি করবে? আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে এখনই সেই কাজটি করে ফেলুন।  এরফলে আপনার দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে। নিজেকে প্রশ্ন করবেন এ কাজটি করলে ভবিষ্যতে কি হতে পারে এর ফলে আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও করা লাগতে পারে।

৫. গ্রহণ বা মেনে নেওয়ার মানসিকতা

পৃথিবীর সবকিছুই আপনার মনমতো হবে না। আপনি যে জিনিসটি পছন্দ করেন সেটি আপনার মনের মতো করে নাও হতে পারে, আপনি একটা পরিকল্পনা করলেন সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়িত নাও হতে পারে। এসব বিষয় আপনাকে মানতে হবে। মেনে না নিয়ে আপনি যদি ভাবতে বসেন এটা এরকম হলো না কেন, ওটা ওরকম হলো কেনো, সে এভাবে কেনো বললো তাহলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবে পড়বে। একই টিমে কাজ করতে গেলে আপনি যদি সর্বদা নিজের চিন্তাগুলোকে প্রয়োগ করতে যান তাহলে সেখানে বাধা আসবেই। টিমের সকলের মতামত ও চিন্তাকে প্রায়োরিটি দিয়ে সবচাইতে ভালো আইডিয়া বের করে আনতে হবে। আপনি যদি এটা ভেবে বসে থাকেন আপনার আইডিয়া কেনো চয়েজ করা হলো না তাহলে আপনারই ভুল হবে। আপনাকে বুঝতে হবে, সহ্য করতে হবে এবং  কিছু কিছু বিষয় ভুলে যেতে হবে তবেই আপনি শান্তি পাবেন।

নিজেকে ভালো রাখতে ও ভালোবাসতে হলে সর্বপ্রথম অতিরিক্ত চিন্তা আপনাকে বাদ দিতে হবে তবেই না আপনি আপনার ব্যক্তিগত,পারিবারিক, সামাজিকভাবে একটি সুন্দর ও শান্তিময় মন লালন করতে পারবেন। 

আরো ব্লগ পেতে এখানে ক্লিক করুন।

 

লেখিকা

মোসা.লুভনা আক্তার

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং বিভাগ

YSSE