ইংরেজি বিভাগে পড়ে শুধু শিক্ষতার পেশা বেছে নিতে হয় এমন গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে আনিকা ওয়াহাব কন্টেন্ট রাইটিংকে বেছে নেন। বর্তমানে একটি মার্কেটিং কোম্পানিতে কন্টেন্ট রাইটার পদে চাকরি করছেন তিনি। এছাড়াও তিনি YSSE এর কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্টে মেন্টর হিসেবে। তার এই সফরের গল্প শুনব এই পর্বে।

YSSE: আমাদের অতিথির সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানতে চাচ্ছি এবং বর্তমানে আপনি কোথায় আছেন সেটা জানতে চাচ্ছি।

A: আমি আনিকা ওয়াহাব। আমি বর্তমানে color clipping এর সাথে যুক্ত আছি; এটা একটি ফটো পোস্ট প্রসিসিং কোম্পানি কিন্তু আমি এদের সাথে কন্টেন্ট রাইটার হিসাবে যুক্ত আছি এবং এই প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে আছি। আমার মূলত কাজ হচ্ছে ব্লগ লেখা। ঠিক এক বছর আগে আমি YSSE তে যুক্ত হয়েছিলাম, এরপরে আমি চাকরিতে যোগ দেই।

YSSE: শিক্ষা জীবন সম্পর্কে কিছু জানতে চাচ্ছি।

A: আমার স্কুল ছিল মনিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কলেজ ছিল শহীদ বীর উত্তম আনোয়ার গার্লস কলেজ। স্কুল কলেজে আমি ব্যবসা শিক্ষা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলাম।

আর আমি ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক (UAP) থেকে ইংরেজি সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্বে ব্যাচেলর করেছি। এখনও মাস্টার্স করা হয়নি। ইংরেজি বিভাগে পড়ার কারণেই আমার লেখালেখির জগতে আসা হয়েছে।

আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তে কেটেছে স্কুল জীবনে,কলেজ জীবন আমি তেমন উপভোগ করিনি তবে বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের আরেকটি সেরা অধ্যায় ছিল।

YSSE: আপনার লেখালেখির জার্নি শুরু হয়েছিল কিভাবে?

A: এই জার্নির পিছনে অনেক বড় গল্প আছে। আমার লেখালেখির জগতে আসা হয়েছিল মূলত অন্য এক কারণে। আমি যখন ইংরেজি বিভাগে যাই তখন একটা কমন কথা খুব শুনছি যে, “ইংরেজিতে পড়ে কি হবা? টিচারই তো হবা।” তখন থেকে একটা সিদ্ধান্ত নেই যে আর যাই হোক, শিক্ষকতা পেশায় যাবো না।

সিনিয়রদের সাথে বিভিন্ন কথা বার্তায় শুনতাম যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করা জরুরি, তা না হলে পরবর্তীতে চাকরি জীবনে খুব সমস্যায় পড়তে হবে। এদিক থেকে আমি পরিষ্কার ছিলাম যে আমাকে কিছু করতে হবে। কিন্তু যেহেতু মেয়ে ছিলাম এবং আমার বাসা মিরপুরে, যাতায়াতে সমস্যা তাই আমার জন্য ভার্সিটির বাইরে সময় বের করে কিছু করাটা কষ্টসাধ্য ছিল।

ওইমুহূর্তে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে HUB নামে একটা অর্গানাইজেশন আসে যারা মূলত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেই একটি সেশন আয়োজন করে। তারা মূলত সেচ্ছাসেবক চাইছিলেন যারা ইংরেজিতে ভালো এবং এই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা উপকৃত হবে। সেখানে আমি যোগ দেই সেচ্ছাসবক হিসাবে।

এই প্রতিষ্ঠানে আমাদের কাজ ছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের সাথে কথা বলা এবং ইংলিশ স্পিকিং এর একটা ভিত তৈরি করে দেওয়া। যেহেতু এটা ৪০ দিনের একটা সেশন ছিল তাই শুধু বেসিক স্পিকিং স্কিল এবং টেকনিক শিখানোই আমাদের দায়িত্ত্ব ছিল। এর জার্নির মাধ্যমে আমি অনেক কিছু শিখেছি, বেশ কিছু সার্টিফিকেট পাই। একটা সময় পরে যখন প্রতিষ্ঠানের নীতি পরিবর্তন হয়,তখন তাদের সাথে আমাদের অনলাইন কার্যক্রমও শেষ হয়।

ওইটা যখন শেষ হয় তখন আমার এক বন্ধুর মাধ্যেমে আমি Aims Initiative Foundation এর সম্পর্কে জানতে পারি যারা অসচ্ছল শিশুদের নিয়ে কাজ করে। সেখানে আমি সেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেই এবং “সবার জন্য বই” প্রজেক্ট এ কাজ শুরু করি। এই প্রজেক্টের মূল কাজ অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব স্কুল আছে সেখানে লাইব্রেরী তৈরি করা। এসব লাইব্রেরির জন্য বই কালেক্ট করা এবং ওসব লাইব্রেরীতে পৌঁছে দেওয়া।

কিন্তু আমি অনফিল্ড কাজ করার সুযোগ তেমন পাইনি,তাই অনলাইনে যতটুকু সম্ভব পোস্ট করা, ক্যাপশন লেখা, ভিডিও এডিট করার কাজগুলো করে দিতাম।

আমাকে Aims Initiative Foundation ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর তাহিয়া আপু আমাকে বললেন যে তাদের “ভলান্টিয়ার স্টোরিজ” নামে নতুন একটা প্ল্যাটফর্ম আছে,সেখানে আমি লেখক হিসাবে যোগ দিতে চাই কিনা। যেহেতু আমি সাহিত্যের শিক্ষার্থী,তাই আমার কাছে গল্প পড়তে বেশ ভালো লাগতো,তাই সেখানে আমি অ্যাপ্লাই করি। আমি মনে করি এখানে এপ্লাই করা আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। সেখানে আমার কাজ ছিল বিভিন্ন সেচ্ছাসেবকের জীবনের গল্প শুনা এবং সেগুলো শর্ট স্টোরি আকারে পাবলিশ করা। এর সুবাদে আমার নানান রক কিমের গল্প শুনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার লেখার প্রতি আগ্রহ আছে এবং এই আগ্রহ লালন করা উচিত।

করোনার সময় আমি চেয়েছিলাম অনলাইনে কিছু কাজ করতে, করোনা শেষের দিকে আমি YSSE তে যোগ দেই, ততদিনে আমার লেখালেখি পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। তখন আমার সাথে অনেকেই ছিল; বর্তমান ডিরেক্টর ফারজানা আপু তখন আমাদের হেড ছিলেন এবং সবার সাথেই ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এরপরে চাকরি ক্ষেত্রেও আমি লেখালেখিকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।

YSSE: আপনার পড়াশুনার ক্ষেত্র কি কোনো ভাবে আপনার কন্টেন্ট রাইটিং এ সাহায্য করেছে?

A: শুধু সাহায্য নয়, বিশাল বড় ভূমিকা রেখেছে। ইংরেজি বিভাগে অনেক গল্প পড়তে হয়, এছাড়াও যদি কেউ লেখক হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই ভালো পড়ুয়া হতে হবে। আমার যদি কোনো গল্প ভালো লাগে তাহলে আমি সেটা নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি; যেমন লেখক, ক্রিটিক দের মতামত, ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি করা। ইংরেজি বিভাগে পড়াশুনা এগুলো ছাড়া অসম্ভব; চরিত্রের বিশ্লেষণ করা, থিম বুঝা অত্যন্ত জরুরি। তাই যখন ভলান্টারি স্টোরিজ পড়তাম সেগুলো আমি আমার পড়া গল্পের সাথে রিলেট করার চেষ্টা করতাম এবং যখন লিখতে যেতাম আমাকে মাথায় রাখতে হতো যে আমি পক্ষপাতিত্ব করতে পারবো না। এই ব্যাপার গুলো শিখেছি আমি এই ইংরেজি সাহিত্য পড়ার জন্যই।

এধরনের আরো ব্লগ পড়তে  এখানে ক্লিক করুন

লেখক,
নুসরাত জাহান সোনিয়া
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE.