ত্বকের ওপরে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট অক্ষরমালা। আরও ভালো করে বলতে গেলে সম্পূর্ণ অর্থবহ বাক্য। পাশাপাশি ডুডল-চিত্রও। না এসব রং তুলিতে চিএিত কোন লেখা!  না কোনো ট্যাটু।

 

বছর সাতেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল ব্রুকলিনের শিল্পী আরিয়ানা পেজ রাসেলের এমনই অদ্ভুত শিল্পকর্ম। এক ঝলক দেখলে মনে হবে ত্বকে যেন প্লাস্টিক সার্জারি করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সেইসব শব্দ রাশিকে। কিন্তু প্লাস্টিক সার্জারিও আদতে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সেই পদ্ধতি অবলম্বন করলে, ত্বকে প্রতিদিন নতুন শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলা এক কথায় অসম্ভব। 

 

তবে এই শিল্পকর্মের রহস্য কী?

না তেমন কোনো বিশেষ প্রযুক্তি নয়। এই শিল্পকর্মের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে একটি বিশেষ রোগ। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ডার্মোগ্রাফিজম (Dermatographism)। চলতি কথায় ‘স্কিন রাইটিং’, ত্বকের লেখা নামেও পরিচিত এই অসুখ। আর এই অসুখকেই শিল্পের ‘মাধ্যম’ করে নিয়েছিলেন আরিয়ানা রাসেল। 

তবে শুধু আরিয়ানাই নয়। এই বিশেষ চর্মরোগকে কাজে লাগিয়ে ত্বকের ওপর নিছক বার্তা লেখার প্রচলন বহু প্রাচীন। আর এই চর্ম-লিখনশৈলী পরিচিত ডার্মাটোগ্রাফিয়া নামে। চলতি কথায় ‘স্কিন রাইটিং’-ও বলা হয়ে থাকে এই শিল্পকে। অসুখ নিয়েও মানুষ ছেলেখেলা করতে পারে, তারই প্রত্যক্ষ প্রমাণ ডার্মাটোগ্রাফিয়া…

 

সহজ কথায় বলতে গেলে, ত্বকের অতি-সংবেদনশীলতাই ডার্মোগ্রাফিজমের কারণ। কোনো ধারালো বস্তু দিয়ে ত্বকে আঁচড় কাটলে, ত্বক ফুলে যায়, উত্থাপিত হয়, অথবা স্ফীত রেখায় ঢেকে যায়। তবে এই চিহ্নগুলি 30 মিনিটেরও কম সময়ে চলে যায় এবং মিলিয়েও যায় সেই আঁচড়ের দাগ। 

 

তবে ডার্মোগ্রাফিজম আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই আঁচড়চিহ্নই বেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ফুটে থাকে। সৃষ্টি করে ত্বক-প্রদাহ। কখনো আবার অ্যালার্জির মতো প্রতিক্রিয়া কিংবা গভীর ক্ষতও তৈরি হয় সামান্যতম আঘাতেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের ৫ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত এই বিরল রোগে। তার প্রাদুর্ভাব সবথেকে বেশি দেখতে পাওয়া যায় শিশু এবং বৃদ্ধদের মধ্যে। 

 

ডার্মাটোগ্রাফিয়ার কারণ অজানা, তবে এটি কোনও সংক্রমণ, মানসিক বিপর্যস্ত বা আপনি যে ওষুধ গ্রহণ করছেন তার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

 

তবে সাময়িকভাবে অ্যান্টিহিস্টামাইন জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হলেও, স্থায়ী প্রতিকার নেই কোনো। বরং, নির্দিষ্ট সময় পর স্বাভাবিকভাবেই মিলিয়ে যায় এই রোগের লক্ষণগুলি। কাজেই ডার্মোগ্রাফিজমকে তেমন কোনো গুরুতর চর্মরোগ বলতেও অস্বীকার করে থাকেন চিকিৎসকরা। 

 

নিচে সংক্ষিপ্তরূপে এই রোগের বর্ণনা তুলে ধরা হলো –

লক্ষণ :

ডার্মাটোগ্রাফিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

১. উত্থাপিত, স্ফীত লাইন হওয়া। 

২. ঘর্ষণ থেকে ত্বকের উপরিভাগে লাল ফুসকুড়ি (welts).

৩. ফোলা।

৪. চুলকানি।

 

ত্বক ঘষে বা আঁচড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে। তারা 30 মিনিটের মধ্যে চলে যায়। কদাচিৎ, ত্বকের লক্ষণগুলি আরও ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে এবং কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন স্থায়ী হয়। এই অবস্থা কয়েক মাস বা বছর ধরে চলতে পারে।

কারণসমূহ :- 

ডার্মাটোগ্রাফিয়ার সঠিক কারণ স্পষ্ট নয়। এটি একটি এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যদিও কোন নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন পাওয়া যায়নি।

 

সাধারণ জিনিসগুলি ডার্মাটোগ্রাফিয়ার লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার জামাকাপড় বা বিছানার চাদর থেকে ঘষা আপনার ত্বকে জ্বালাতন করতে পারে। কিছু লোকের মধ্যে লক্ষণগুলি সংক্রমণ, মানসিক চাপ, কম্পন, ঠান্ডা এক্সপোজার বা ওষুধ খাওয়ার আগে দেখা যায়।

 

ঝুঁকির কারণ :- 

ডার্মাটোগ্রাফিয়া যেকোন বয়সেই হতে পারে। এটি কিশোর এবং তরুণয অথবা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আরও সাধারণ। যদি অন্যান্য ত্বকের বিরুপ  অবস্থা থাকে তবে ঝুঁকি আরও বেশি বাড়তে পারে। এরকম একটি অবস্থা হল এটোপিক ডার্মাটাইটিস (একজিমা)।

 

প্রতিরোধ :

অস্বস্তি কমাতে এবং ডার্মাটোগ্রাফিয়ার লক্ষণগুলি প্রতিরোধ করতে ডাক্তারদের পরামর্শগুলো নিম্নরুপ  –

 

১। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা ত্বকের চিকিৎসা করা। 

২। একটি হালকা সাবান বা ননসোপ ক্লিনজার ব্যবহার করুন এবং ত্বক শুষ্ক করুন। 

৩। চুলকাবে না এমন কাপড়ের তৈরি জিনিস পরিধান করা।

৪। গোসল বা গোসল করার সময় গরম পানি ব্যবহার করুন।

৫। ত্বকে আঁচড় না দেয়া। 

৬। স্ক্র্যাচ না করা, এটি যে কোনও ত্বকের অবস্থার জন্য একটি ভাল টিপস।

৭। ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখা। প্রতিদিন ক্রিম, লোশন বা মলম ব্যবহার করা। ক্রিম এবং মলম ঘন হয় এবং লোশনের চেয়ে ভাল কাজ করে। 

৮। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।

৯। অতিরিক্ত রোদ এড়িয়ে চলা।

এই রোগের ভয়ের কোন কারণ নেই। নিজেরা কিছু সচেতনতামূলক উপায় অবলম্বন করেই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই নিজেরা সচেতন হই এবং ত্বকের যত্ন নিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।  

এরকম আরও ব্লগ সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

 

লেখিকা,

ফারিহা আলিফ

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE