গবেষণা বা এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Research।যেহেতু Re শব্দটির আক্ষরিক অর্থ বুঝায় পুনরায় এবং Search শব্দটির অর্থ হচ্ছে অনুসন্ধান। অর্থাৎ এখানে বিষয়বস্তু ধারাবাহিকভাবে পুনরায় বা বারবার অনুসন্ধান করার কথা বলা হয়েছে। এ হিসেবে কোন কিছু সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া হলো গবেষণা।
গবেষণা শব্দটিই যেন অনেকের মনকে করে তুলে উৎফুল্ল। অনেকেই গবেষক হয়ে একটি ভিন্নধর্মী ক্যরিয়ার গড়ে তুলতে চান। অনেকের কাছেই গবেষণা করাটা কঠিন হতে পারে। অবশ্য তার মূল কারণ হচ্ছে সঠিক গাইডলাইনের অভাব, কীভাবে গবেষণা শুরু করতে হয় তা সম্পর্কে ধারণা না থাকায়। চলুন আগেই জেনে নেওয়া যাক গবেষণা এবং গবেষক বলতে আসলে কী বোঝায়।
গবেষণা কথাটির সাথে ‘কোনো কিছু খোঁজা’ বা ‘অনুসন্ধান’ জড়িত রয়েছে। গবেষণা হলো কোনো কিছু সম্পর্কে জানার জন্য, কোন অজানা প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য, কোন সমস্যা সমাধান করার জন্য ধারাবাহিকভাবে তথ্য অনুসন্ধান করা। যিনি গবেষণা করেন বা গবেষণা কর্মের সাথে জড়িত, তিনি গবেষক বা গবেষণাকারী নামে পরিচিত। গবেষণা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তুর নির্ধারিত করা নেই। কারণ গবেষণার অর্থ হচ্ছে কোন সমস্যার সমাধান করা অথবা নতুন কোন কিছু উদঘাটন করা। মানুষ সবসময় অজানাকে জানতে চাই এবং জানা বিষয়বস্তুকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে চাই। এই অজানা বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদের অনুসন্ধান করতে হয়। এই অনুসন্ধান ওই মূলত গবেষণা হিসেবে পরিচিত।গবেষণার ফলে নতুন তথ্য উদ্ভাবন করা হয় এবং সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে নতুন পরিকল্পনা বা প্রকল্প চালু করা হয়। তাই গবেষক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা শুরুর আগে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।
অনুসন্ধানী মনোভাব, গবেষক হতে হলে বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের উপর জ্ঞান থাকা আবশ্যক, তাছাড়া গবেষণায় বালো ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন তথ্য ও তথ্য জানার জন্য মানসিকতা থাকতে হবে অর্থাৎ অনুসন্ধানী হতে হবে।
প্রতিটি ফিল্ড বা বিষয় অনুযায়ী অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াটি ও ভিন্ন রকমের হবে।
নতুন কিছু শেখার দক্ষতা, গবেষণার অর্থায়ন নিশ্চিত করার দক্ষতা, সমালোচনা গ্রহণ করার ক্ষমতা, মানসিক চাপ সামলানোর দক্ষতা, পরিকল্পনামাফিক কাজ করার দক্ষতা, বিশ্লেষণের দক্ষতা ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, যোগাযোগের দক্ষতা এছাড়াও আরো কিছু বিষয়ের উপর একজন গবেষককে দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।
একজন গবেষক হতে হলে গবেষককে নিয়মিত নতুন নতুন বিষয়বস্তুর উপর খোঁজাখুঁজি করতে হবে, উক্ত নতুনত্ব বিষয়গুলোর উপর পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
গবেষক যেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করুক না কেন তার উদ্দেশ্য একটাই- মানুষের জীবনে তার এই গবেষণা যাতে কোনো নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
- শেখার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে হবে: সফল গবেষকরা নতুন ধারনা, তত্ত্ব এবং পদ্ধতিগুলি অন্বেষণ করার বিষয়ে কৌতূহলী এবং উৎসাহী। তারা তাদের ক্ষেত্রের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া জিনিস গুলোর প্রতি গবেষণা প্রবণতা রাখে এবং অগ্রগতির সাথে আপডেট থাকে, সম্মেলনে যোগ দেয় এবং আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণ করে থাকে নিজের দক্ষতা গুলো বিকশিত করার জন্য।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) উপর গবেষণা করতে চান ও একজন পেশাদার গবেষক হতে চান। আপনি বিভিন্ন সম্মেলনে যোগদান এবং AI সম্পর্কিত ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ের উপর থাকা সকল ধরনের তথ্য অনুসরণ করতে পারেন। এইভাবে, আপনি ঐ বিষয়ে সাম্প্রতিক অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর প্রতি জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবেন। যা আপনার গবেষণায় আরো একবার এগিয়ে নিয়ে যাবে।
- গবেষণার জন্য একটি বিষয় নির্বাচিত করুন : গবেষণা শুরু বা পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো একটি ভালো গবেষণা বিষয় নির্বাচন। প্রকৃতপক্ষে, গবেষণা বিষয় নির্বাচন করার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। স্বতন্ত্র কিংবা উচ্চশিক্ষায় কখনও কখনও একজন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচিত হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষয় নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একজন গবেষককে সম্পূর্ণ নিজ আগ্রহে ও দক্ষতায় সম্পন্ন করতে হয়। একইসাথে সেই বিষয় সম্পর্কিত পর্যাপ্ত তথ্য সংকলনের সময় যথেষ্ট মনোযোগী ও সচেতন হতে হয়।
- প্রশ্ন করতে শিখতে হবে : একজন ভালো রিসার্চার বা গবেষণক হওয়ার প্রধান শর্ত হলো, কৌতূহল মনসিকতা এবং প্রশ্ন করতে শেখা। যত ছোটই হোক না কেন প্রশ্ন করুন নিজেকে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করুন, উত্তর খুঁজতে খুঁজতে আপনার মনে নিঃসন্দেহে আরও কিছু প্রশ্ন উঁকি-ঝুঁকি দেবে। এইভাবেই একদিন দেখবেন আপনার কিছু প্রশ্নের উত্তর সেভাবে হয়তো খুঁজে পাচ্ছেন না আর সেখান থেকেই গবেষণার পথে আপনার যাত্রা শুরু। আপনি যেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী সেই বিষয়টির উপর যত প্রশ্ন আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এবং যে সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন না বা মনে হয় যেন উক্ত বিষয়টিকে আরও গভীরভাবে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা যায়। তাহলে আপনি সেই প্রশ্নটি নিয়েই গবেষণা শুরু করতে পারেন।
- কমিউনিকেশন এর দক্ষতা থাকতে হবে : একজন গবেষক হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম ধাপ এটি। আমাদের কাজগুলো অন্যান্য গবেষক এবং অডিয়েন্সদের সামনে প্রদর্শন করতে হবে। তাদের সামনে নিজের আইডিয়া ও গবেষণা পএ সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে এত দিনের গবেষণার পিছনে পুরো সময়টাই বৃথা যাবে। তাই শুরুতে নিজের কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
- ক্রিয়েটিভ চিন্তার দক্ষতা বিকাশ করুন:
গবেষণায় আপনাকে ডেটা বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা করতে, গবেষণা পদ্ধতির ত্রুটিগুলি সনাক্ত করতে এবং ডেটা থেকে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতে হবে। চিন্তার দক্ষতা বিকাশের জন্য আপনি বিভিন্ন ধরনের রিসার্চ পেপার পড়তে পারেন এবং গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে অনুশীলন করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন, তাহলে আপনাকে এই বিষয়ে পরিচালিত গবেষণা অধ্যয়নগুলিকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে, গবেষণা পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত করতে হবে এবং তথ্য থেকে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর দক্ষতা থাকতে হবে।
- অন্যান্য গবেষকদের সাথে সহযোগিতা পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করুন : সহযোগিতা গবেষণা প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ। অন্যান্য গবেষকদের সাথে সহযোগিতা করে, আপনি জ্ঞান, দক্ষতা ভাগ করতে পারেন। আপনি কনফারেন্সে যোগ দিয়ে, গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে এবং গবেষণার সাথে যুক্ত এমন মানুষদের সাথে যোগদান করে অন্যান্য গবেষকদের সাথে সহযোগিতা করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি বন্যজীবনের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। সেক্ষেত্রে, আপনি জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিদ্যা এবং পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন শাখার অন্যান্য গবেষকদের সাথে সহযোগিতা করতে পারেন। একসাথে কাজ করে, আপনি গবেষণার বিষয়ে একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারেন এবং একটি আরও ব্যাপক গবেষণা প্রকল্প বিকাশ করতে সক্ষম হবেন।
- গবেষণাপত্র লিখুন এবং প্রকাশ করুন: পেশাদার গবেষক হওয়ার জন্য গবেষণাপত্র লেখা এবং প্রকাশ করা অপরিহার্য। এটি আপনাকে আপনার গবেষণার ফলাফলগুলি বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করতে এবং আপনার ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে। আপনি বৈজ্ঞানিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারেন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনার কাজ শেয়ার করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি চিকিৎসা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে AI এর কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেছেন। সেক্ষেত্রে, আপনি একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে আপনার ফলাফল প্রকাশ করতে পারেন, এআই(AI) কনফারেন্সে আপনার কাজ উপস্থাপন করতে পারেন এবং রিসার্চগেট এবং লিঙ্কডইনের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনার গবেষণা পএ শেয়ার করতে পারেন।
অতএব, একজন পেশাদার গবেষক হওয়ার জন্য প্রয়োজন, কঠোর পরিশ্রম এবং শেখার প্রতি ভালবাসা। গবেষণা পদ্ধতি, ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা এবং সহযোগিতার মতো প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশ করে এবং আপনার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে, আপনি নিজেকে আপনার ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ গবেষক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ে অবদান রাখতে পারেন।
To read more blogs, click here.
Writer
Tarin Alam Sorna
Intern, Content writing department
YSSE