চুল ত্বকের যত্নে Castor oil বা রেড়ির তেল বহুকাল ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে  উদ্ভিজ্জ তেলটি ক্যাস্টর বিন্স থেকে নিঃসরণ করা হয় Ricinus communis নামক একটি গাছের বীজ হলো এই ক্যাস্টর বিন্স এখান থেকে প্রাপ্ত ক্যাস্টর অয়েলের বহু ব্যবহার রয়েছে থেরাপিউটিক্স এবং শিল্পক্ষেত্রে এটিকে সাধারণত ওষুধ, খাবার এবং ত্বকের যত্নের পণ্যগুলোতে এডিটিভস হিসাবে ব্যবহৃত হয় এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েল চোখের জ্বালাযন্ত্রণা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যাথার প্রাকৃতিক প্রতিকার সাধারণত ওষুধ হিসেবে  ব্যবহার করার জন্য ক্যাস্টর অয়েলের ইমালসন প্রস্তুত বাজারজাত করা হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে খুব সহজেই সেবন উপযোগী ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন প্রস্তুত করা যায় :

 

ইমালসন মূলত একাধিক তরল পদার্থের মিশ্রণ যেগুলো পরস্পর মিশ্রণীয় নয় ক্যাস্টর অয়েল ইমালসনে আমরা মূলত পানিতে তেলের ইমালসন (O/W) প্রস্তুত করবো সুতরাং, প্রয়োজনীয় উপাদানের মধ্যে পানি আবশ্যক।  এটি বাহক হিসেবে কাজ করবে যেখানে তেলটি দ্রবীভূত থাকবে

উপকরণ যন্ত্রপাতি :

১০০ মি.লি. ক্যাস্টর অয়েল ইমালসনের জন্য আমাদের যেসব উপাদান দরকার হবে তা হলো :

মূল উপাদান : ক্যাস্টর অয়েল ১০ মি.লি.

ইমালসিফায়ার : একাশিয়া . গ্রাম 

প্রিজারভেটিভ : মিথাইল প্যারাবেন . গ্রাম 

সুইটনিং এজেন্ট : সুগ্যার সিরাপ (৬৫%) ১০ মি.লি

সারফেকট্যান্ট : সরবিটল ১০ মি.লি.  

ফ্লেভারিং এজেন্ট : রোজবেরি অয়েল ফোঁটা 

দ্রাবক : পাতিত পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ ( ১০০ মি.লি. পর্যন্ত)

ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন প্রস্তুতির জন্য ভারি যন্ত্রপাতির দরকার নেই প্রয়োজন হবে কয়েকটি ১০০ মি.লি. বিকার, মর্টারপ্যাস্টল, ফানেল, ফিল্টার পেপার, ড্রপার, আয়তনমিতিক সিলিন্ডার নাড়নি 

প্রস্তুতপ্রণালী :

. প্রথমে একাশিয়াকে মর্টারে নিয়ে সেখানে ফোঁটায় ফোঁটায় মি.লি. পানি যোগ করতে হবে এবং ট্রাইচুরেট করতে হবে ট্রাইচুরেট হলো মর্টারে পিষ্টনের একমুখী ঘোরানোর মাধ্যমে খুব ভালোভাবে মিশ্রণ করতে হবে কয়েক মিনিট এভাবে মিশ্রণ করতে হবে 

. মিশ্রণটি গঁদের মতো আঠালো আকার ধারণ করলে সেখানে ১০ মি.লি. ক্যাস্টর অয়েল একইভাবে ফোঁটায় ফোঁটায় যোগ করে ট্রাইচুরেট করতে হবে কয়েক মিনিটের মাথায় কিছুটা সাদাটে রঙের প্রাথমিক ইমালসন তৈরি হবেতখন  ট্রাইচুরেট করার সময় এটি চিটচিট আওয়াজ করবে 

. এখানে ১০ মি.লি. সুগ্যার সিরাপ (৬৫%) এবং তারপর ১০ মি.লি. সরবিটল ক্রমাগত নাড়নির মাধ্যমে যোগ করতে হবে ফলে একটি সমসত্ত্ব ইমালসন পাওয়া যাবে

. এবার ইমালসনটি একটি বিশুদ্ধ পাত্রে নিয়ে এতে কালারিং এজেন্ট, ফ্লেভারিং এজেন্ট প্রিজারভেটিস যোগ করতে হবে

. এরপর ১০০ মি.লি. পূর্ন হতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি যোগ করে সম্পূর্ণ মিশ্রণটি ভালোভাবে নাড়িয়ে বোতলজাত করে ঠান্ডা স্থানে রেখে দিতে হবে এবার লেবেলিং করার পালা

 

লেবেলিং ব্যবহারবিধি

ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন 100 BP

চিকিৎসকের পরামর্শসাপেক্ষে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহারযোগ্য

প্রতি মি. লি.-তে আছে . মি.লি. ক্যাস্টর অয়েল

ডোজ : বয়স লিঙ্গভেদে ভিন্ন হবে 

ব্যবহারের পূর্বে ঝাঁকিয়ে নিন ক্ষতস্থানে ব্যবহার নিষেধ 

প্রস্তুতির তারিখ

সংরক্ষণবিধি : ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে আলো শিশুদের নাগাল থেকে দূরে সংরক্ষণ করা বাঞ্চনিয় ফ্রিজিং পরিহার্য

ঔষধি গুণাগুণ :

ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন ব্যপক ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন পরিমিত মাত্রায় সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায় শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সেই এটি সেবন উপযোগী ক্যাস্টর অয়েল ইমালসনের টি বিশেষ ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক

 

. Laxative effect – কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় : ক্যাস্টর অয়েল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এটি আন্ত্রিক নালীর ক্রমসংকোচনে উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে পেরিস্ট্যালসিস বাড়ানোর ক্ষমতার জন্য এটি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় বেশ জনপ্রিয় একটি ওষুধ

 

. Detoxifying effectবিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ : শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন বেশ কার্যকরী এটি আমাদের যকৃতকে উদ্দীপনা যোগায় যা দেহ থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য অপসারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে

 

. Hormonal Regulationহরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ : ধারণা করা হয় ক্যাস্টর অয়েল সেবন বিভিন্ন শারীর চক্রে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে বিশেষত নারীদের মেনস্ট্রুয়াল ইরেগুলারিটিস অন্যন্য হরমোনার ইমব্যাল্যান্স সংক্রান্ত সমস্যায় জন্য  উপকারি

 

. Anti-inflammatory effect & Immunity boostingপ্রদাহ নিরাময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন সেবন ক্ষতস্থানে প্রদাহ জ্বালাপোড়া কমায় পাশাপাশি এটি ব্যাথানাশক হিসেবেও কাজ করে আর্থ্রাইটিস প্রদাহ সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যায় এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায় এছাড়াও এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি করার শক্তি যোগায় যা বিভিন্ন রোগসংক্রমণ থেকে দেহকে সুরক্ষা প্রদানে সহায়ক

 

. Moisturizer & Nourishing effect – ত্বক চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষা : ক্যাস্টর ওয়েলের রয়েছে ত্বককে শুষ্কতা থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা পাশাপাশি ত্বকের পুষ্টিসাধনে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন সেবনে একদিকে যেমন ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে অন্যদিকে মাথার স্কাল্পেরও ক্ষয়পূরণ পুষ্টিসাধন হয় এটি হেয়ার ফলিকলগুলোকে ভিতর থেকে সুরক্ষা প্রদান করে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখে

 

সাবধানতা :

ক্যাস্টর অয়েল ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য উপকারী উপাদানে একটি সমৃদ্ধ উৎস অনেক বিশেষ গুণাগুণ থাকা স্বত্ত্বেও নিজ দায়িত্বে এবং অবশ্যই একজন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবকের নির্দেশনায় এটি ব্যবহার করা উচিত কারণ  কিছু ক্ষেত্রে তারা এই ইমালসন সেবন নিরুৎসাহিত করে থাকেন চলুন সেসব দিক সম্পর্কেও জেনে নেওয়া যাক

 

. গর্ভাবস্থায়: ক্যাস্টর অয়েল যেহুতু শক্তিবর্ধক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে তাই এটি গর্ভবতী মায়ের জন্য সুপারিশ করা হয় না কারণ এটি আন্ত্রিক সংকোচন বাড়াতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর এমনি অকাল গর্ভপাতের মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে

 

. আন্ত্রিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি : যাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, যেমন : Inflammatory Bowel Disease (IBD),  Diverticulitis Bowel Obstruction ইত্যাদি রয়েছে তাদের ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত নাহলে অবস্থাগুলি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে

 

. পানিশূন্যতা : ক্যাস্টর অয়েল রেচক হিসেবে কাজ করে এমতাবস্থায় এটি পানিশূন্যতা এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে বিশেষত অতিরিক্ত সেবন করলে এই সম্ভাবনা বেশি থাকে

 

. অ্যালার্জি : অনেকের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবেই ক্যাস্টর অয়েলের প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে পারে ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন সেক্ষেত্রে চুলকানি, আমবাত বা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে 

 

. নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন : ক্যাস্টর অয়েল রক্ত ​​পাতলাকারী এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সহ বেশ কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া দেখাতে পারে আপনি যদি অন্যান্য রোগের ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ক্যাস্টর অয়েল ইমালসন সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন

 

সর্বোপরি, ক্যাস্টর অয়েল ইমালসনের উপযুক্ত গুণাগুণ পেতে হলে অবশ্যই এর নিরাপদ এবং যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরী অবশ্যই একজন ফুড সায়েন্টিস্ট বা টেকনোলজিস্টের উপস্থিতিতে টি তৈরি ব্যবস্থাপনা করতে হবে তারা প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক নির্দেশিকা প্রদান, ফুডগ্রেড উপাদানগুলি বেছে নিতে এবং চূড়ান্ত পণ্যের নিরাপত্তা এবং গুণমান পরীক্ষা মূল্যায়ন করতে সহায়তা করতে পারেন

এরকম আরও লেখা পড়তে, এখানে ক্লিক করুন

 

লেখক, 

মোঃ রাকিব রায়হান 

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE