‘স্ট্রিট ফুড’ বা ‘পথে পাওয়া খাবার’ শব্দের সঙ্গে পরিচয় নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া এখন অসম্ভব! তাই না? স্বাস্থ্যকর হোক কিংবা অস্বাস্থ্যকর, এ কথা না ভেবেই সবাই স্ট্রিট ফুড খেয়ে থাকেন ।

ঢাকাকে বলা হয়ে থাকে প্রাণের নগরী! আর খাবার ছাড়া জমে নাকি এখানে। কাজের ফাঁকে অথবা ছুটির দিনে আড্ডা দিতে দিতে স্ট্রিট ফুডের জুড়ি মেলা ভার!

তবে কথায় আছে, যোগ্যতা সবারই কমবেশি থাকে- কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা সবার থাকে না। মানুষের বৈচিত্র্যতার মতোই ঢাকায় স্ট্রিট ফুডের হাজারো রকমের পদ থাকলেও এর মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুরই সমান হয় না।

যদি স্ট্রিট ফুডের জন্য ঢাকার মধ্যে কিছু জায়গার কথা বলতেই হয় তাহলে কোনগুলো থাকবে সেরা পাঁচে? জেনে নেওয়া যাক তাহলে!

১. নীলা মার্কেট খ্যাত ৩০০ ফিট

‘৩০০ ফিটে আসছি, হাঁসের মাংস খেতে। সেলফি তো মাস্ট।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ এমন পোস্ট এখন প্রতিদিনই কমবেশি দেখা যায়। এবার শীতে রাজধানীকেন্দ্রিক জীবনে খাবারের ট্রেন্ড বা ধারা কী? এমন প্রশ্ন কাউকে জিজ্ঞেস করলে চটজলদিই উত্তরটা পাওয়া যাবে ‘হাঁসের মাংস’। যেন একেবারে ‘হিট ও হট ট্রেন্ড’। তবে জানেন কি হাঁসের মাংস এত জনপ্রিয় কেন?

হাঁসের মাংসের ভুনা এর কথা শুনলেই যেনো চোখে ভেসে উঠে ৩০০ ফিট সড়কের নীলা মার্কেটের কথা!

রাজধানী থেকে পূর্বাচলে যাওয়ার যে দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ে, সেটার দুপাশে অসংখ্য দোকানে প্রতি সন্ধ্যায় ভিড় জমান অনেক মানুষ। কুড়িল থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এগোলে দুটি আন্ডারপাস পার হওয়ার পর, তৃতীয় আন্ডারপাসের ওপর দিয়ে ডানে মোড় নিয়ে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পেছনে বালু নদের তীরঘেঁষা অসংখ্য দোকান, ছোট–বড়। শ দুয়েক তো হবেই। জায়গাটা নীলা মার্কেট হিসেবেই পরিচিত।

৩০০ ফিট সড়কের বাঁ দিকেও এমন খাবারের অনেক আয়োজন মিলবে। আরও কিছুটা এগোলে ফারুক মার্কেট এলাকায়ও রয়েছে হাঁসের মাংস খাওয়ার আয়োজন।

২. টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

তারুণ্যের প্রানকেন্দ্র খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি! আড্ডা, গল্প, গানে মেতে থাকে সব সময় এই জায়গা। তবে বাহারি স্ট্রিটফুডের জন্যও জনপ্রিয় এই স্থানটি।

টিএসসিতে পাওয়া যায় বাহারি রকম ও স্বাদের চা। এছাড়াও রয়েছে ভেলপুরি, ফুচকা-চটপটি, ঝালমুড়ি, বিভিন্ন রকম ভর্তা।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রি হয় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন আর মাশরুম ফ্রাই। সুস্বাদু এই খাবারগুলোর দাম খুবই কম হওয়ায় তরুণদের মধ্যে এখানের স্ট্রিট ফুডের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।

৩. জাতীয় সংসদ ভবন/ মানিক মিয়া এভিনিউ

শহরের কেন্দ্রেই প্রকৃতির মাঝে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরে দেখার পাশাপাশি পেয়ে যাবেন বাজেটের মধ্যে সব স্ট্রিট ফুডের বাহার!

এখানে পাবেন মচমচে, নানা ফ্লেভারের সংমিশ্রণে তৈরি বিখ্যাত স্ট্রিটফুড ঝালমুড়ি ও ফুচকা! তাছাড়াও অসহনীয় গরম থেকে স্বস্তি পেতে এখানে আছে আইসক্রিম কার্ট এবং লেবুর শরবতের স্টল।

একটু অবকাশ পেতে ও প্রকৃতির কাছাকাছি গাছপালা ও ফুলের মাঝে চন্দ্রিমা উদ্যানের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে খেতে পারেন আইসক্রিম অথবা রিফ্রেশিং এক গ্লাস লেবুর শরবত।

৪. পরীবাগ ওভারব্রিজ

ঢাকার অন্যান্য জায়গার মতো বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড়ে মুখরিত পরীবাগ ওভারব্রিজের নিচে অবস্থিত খাবারের জায়গাটিতে।

টেলিযোগাযোগ ভবনের সামনে অবস্থিত ফুডকার্ট গুলোই জায়গাটির মূল আকর্ষণ। ফুচকা, চটপটি বাদেও এখানে পাওয়া যায় অনেক রকমের কাবাব। আরও রয়েছে জুস বার।

তবে সেখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় কার্ট হলো ‘পিজ্জা লাইভ’, স্বল্প দামেই খাওয়া যায় কয়েক রকমের পিজ্জা, পাস্তা , পিঠা এবং আরো অনেক কিছু! মূলত, সন্ধ্যার দিকে এলাকাটিতে অনেক খাদ্যরসিকের সমাগম ঘটে।

৫. মোহাম্মদপুর

মোহাম্মদপুরের রিং রোড, টাউনহল রোডে রয়েছে দেশি- বিদেশি স্ট্রিট ফুডের আয়োজন। ইন্ডিয়ান রাজকচুরি, পাও ভাজি, পাপড়ি চাট, ফালুদা সহ নানারকম খাবার উপভোগ করা যায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।

তবে সম্প্রতি নুরজাহান রোড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নতুন স্ট্রিট ফুড মোমোর জন্য। প্রতিদিন বিকালে ধোঁয়া উঠা মোমো খাওয়ার জন্য সেখানে যান ফুড লাভাররা। সুলভ মূল্যে ভিন্ন স্বাদের এই খাবারগুলো খেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেন অনেকেই।

এই ৫ টি জায়গা ছাড়াও আরো রয়েছে মিরপুরের লাভ রোড, বনশ্রী, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, খিলগাঁও এর পল্লীমা সংসদ এমনকি বেইলি রোড ও স্ট্রিট ফুডের জন্য ব্যাপকভাবে বিখ্যাত ঢাকার মানুষদের জন্য!

ঢাকায় থেকেও এসব জায়গা ঘুরে না দেখে থাকলে এখনই শুরু করুন লিস্ট করা ! আর সময় সুযোগ বের করে ঘুরে আসুন আর সাথে হয়ে যাবে পেটপূজাও !
অবশ্য খাদ্যরসিকদের জন্য তো আবশ্যক!

এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন

লেখক
মাফরুহা সুমাইয়া
ইন্টার্ন , কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE