গুহাবাসী আদিম পূর্বপুরুষ থেকে আজকের তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক গ্লোবাল ভিলেজ! এই পুরো অগ্রযাত্রার পিছনে রয়েছে বহু জ্ঞানী-গুণীর অজানাকে জানতে চাওয়ার, অচেনাকে চিনতে চাওয়ার অপরিসীম আগ্রহ এবং নিত্য-নতুন আবিষ্কার ও গবেষণার এক যুগান্তকারী ইতিহাস। গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও মানবজাতির উন্নয়নে জন্য যেমন অবদান রাখা যায়, পাশাপাশি রয়েছে এর  বৈচিত্র্যময় ক্যারিয়ার গঠনের চমৎকার সুযোগ।

গবেষণা কী?

গবেষণা শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে সন্ধিবিচ্ছেদে ব্যাপারটি দাঁড়ায়

{গো+এষণা~ ( গরু+খুঁজা)} = গবেষণা। অর্থাৎ আগের দিনে বা এখনো গ্রামে গরু হারিয়ে গেলে সেটাকে ফিরে পেতে যেভাবে মালিক তার গরুকে তন্নতন্ন করে খুঁজে, ঠিক একইভাবে জ্ঞানের কোনো শাখায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন কিছু অনুসন্ধান করাই হলো গবেষণা। মূলত গবেষণা হলো জ্ঞান চর্চার  অন্যতম একটি মাধ্যম তথা সত্য অনুসন্ধানের একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতি। গবেষণা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Research অর্থাৎ পুনঃঅনুসন্ধান করা। বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন সময় গবেষণাকে বিভিন্ন ভাবে সঙ্গায়িত করেছেন।
যেমন :

গ্রীন(Green) এর মতে “জ্ঞান অনুসন্ধানের জন্য মানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগকেই গবেষণা বলে।”

স্কট(Scott) এর মতে “গবেষণা হচ্ছে কোন সমস্যার পদ্ধতিগত ও উদ্দেশ্য ভিত্তিক অধ্যয়ন, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ নীতি বা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা।”

গবেষণা কেন করবো?

অজানাকে জানার জন্য, সত্য উন্মোচনের জন্য, তথাপি জ্ঞানের দুনিয়ায় সম্ভাবনার নতুন দ্বার উদঘাটনের জন্য গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। অতীত কে সাথে করে,  সভ্যতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদেরকে গবেষণা করতে
হবে। বাংলাদেশে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার মোটামুটি সুযোগ থাকলেও, স্নাতক পর্যায়েও কিছু কিছু জায়গায় সীমিত পরিসরে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে দিনকে দিন গবেষণার নতুন নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি ক্রিটিক্যালি চিন্তাভাবনা করতে পারার জন্যও গবেষণা সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান থাকা চাই।

গবেষক হতে চাই কিনা!

গবেষক হওয়ার জন্য প্রথমেই মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে নিজের সাথে একটি সিদ্ধান্তে আসা যেমন জরুরি ঠিক তেমন ভাবে একজন ভালো গবেষক হতে হলে কিছু  গুণাবলি নিজের ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুতে ধারণ করতে হবে। গবেষক হওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু গুণাবলি যেমন: অনেক বেশি পড়াশোনা করতে পারার সক্ষমতা থাকতে হবে। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি লিখতে জানাটাও অবশ্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও একজন ভালো গবেষক হতে হলে ধৈর্য বা লেগে থাকার ক্ষমতা, শারীরিক এবং মানসিক ভাবে পরিশ্রম করতে পারার সক্ষমতা, ব্যার্থতাকে সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারার মতো মন-মানসিকতা, সততা ও নৈতিকতা, এবং সহযোগিতার মনোভাব থাকা একান্তই বাঞ্চনীয়।

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা

গবেষণার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের পিছনের অন্যতম কারণ হলো বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। বর্তমান পৃথিবীতে বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে  উচ্চশিক্ষার  জন্য দেশের বাহিরে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনা করতে যাওয়ার একটা
প্রবণতা শিক্ষার্থীদের মাঝে লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে একটি বিশাল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হয় শিক্ষার্থীদের, যা তারা বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। বাহিরের ইউনিভার্সিটি গুলো যেহেতু গবেষণা ভিত্তিক ইউনিভার্সিটি। সুতরাং এ ক্ষেত্রে একটি ভালো মানের গবেষণা পত্র বা প্রকাশিত জার্নাল থাকলে, সেটা স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে।

বর্তমান বিশ্বের সাথে গবেষণার সম্পর্ক

গবেষণার সাথে উদ্ভাবন এবং আবিস্কারের একটি নিবিড় সেতুবন্ধন রয়েছে। যে দেশগুলো যতোবেশি গবেষণার কাজকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে, সে দেশগুলো ততোবেশি আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনীর মাধ্যমে উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করেছে। একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পিছনে গবেষণার কোনো বিকল্প আর কিছু হতে পারেনা। বর্তমান পৃথিবীতে আমরা উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই, এসব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি গবেষণা বান্ধব এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিছনের অন্যতম কারিগরি তাদের গবেষকসূলভ মনোভাব।

বাংলাদেশে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান পৃথিবীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অশিক্ষা, দারিদ্র্য-দূরিকরণ, মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার হওয়া যেমন জরুরি ঠিক একই ভাবে কৃষি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প,চিকিৎসা প্রতিটি সেক্টরে গবেষণার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করাটাও জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন: সিপিডি, ব্র্যাক, ব্রি, বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, নদী গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ইত্যাদি। এই প্রতিষ্ঠান গুলো বর্তমানে বেশ ভালো  কাজ করছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সকল গবেষণার সেক্টরে অর্থনৈতিক  বিনিয়োগ এবং মানবসম্পদের যথাযথ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে পারলে, বাংলাদেশ একদিন নিশ্চয়ই অর্থনৈতিক পর-নির্ভরশীলতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে এবং পৃথিবীর বুকে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করতে পারবে।

ক্যারিয়ার হিসেবে গবেষণা:

উন্নত দেশগুলোতে গবেষণাকে চমৎকার একটি পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এবং চাকরির সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি। বর্তমানে দেশেও সরকারির পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ
রয়েছে। ছোট-বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই  গবেষণা বিভাগ বা ইউনিট রয়েছে। দেশের বড় বড় সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান,
ব্যাংক-বীমা-ইন্স্যুরেন্স, ফার্ম, দেশি-বিদেশি এনজিওর এসব ইউনিটে গবেষকদের বেশ চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়াও কিছু বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেগুলো শিক্ষা, দুর্নীতি, মানবাধিকার, জলবায়ু, পোশাক খাত, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ নানা বিষয়ে  গবেষণা করে থাকে,এসব প্রতিষ্ঠানে ফেলো ও গবেষক হিসেবে কাজ করাটাও দারুণ সম্মানের। এছাড়া সম্মানীও যথেষ্ট ভালো।

গবেষণায় বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবন  একে-অপরের সাথে ওতোপ্রোতভাবে
জড়িত। বর্তমান পৃথিবীতে যে দেশগুলো যত বেশি গবেষণায় বিনিয়োগ করেছে, তারা তত বেশি আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পেছনে নিজস্ব উদ্ভাবন বা গবেষণার কোনও বিকল্প নেই। টেকসই সমৃদ্ধির লক্ষে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক গবেষণা খাতের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি।

এরকম আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখক, 
খায়রুল ইসলাম শুভর দল(সদস্য সংখ্যা ২ জন)
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 
YSSE