গ্রামীণফোন হাউজ বা জিপি হাউজকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচাইতে বড় এবং প্রথম দিককার পরিবেশবান্ধব ভবনগুলোর মধ্যে একটা। কেনো বলা হয় চলুন আমরা জেনে নেই-

২০০৯ সালে স্থাপিত জিপি হাউজের ভেতরে রয়েছে বিশাল পরিসরে বিস্তৃত একটি ফাউন্টেন বা ঝর্না রয়েছে যার ফলে ভবনের ভেতর তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। বাইরের তুলনায় ভবনের ভেতরে অন্তত ২° ডিগ্রি তাপমাত্রা কম থাকে। অর্থাৎ আপনি যদি বাইরে ৩২° ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভব করেন তবে জিপি হাউজের ভেতরে ৩০° ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভব করবেন।

এছাড়া ভবনের ভেতরে Rain Harvesting এর ব্যবস্থা রয়েছে। Rain Harvesting হলো বৃষ্টির পানিকে ফেলে না দিয়ে ব্যবহার করা। জিপি হাউজে বৃষ্টির পানি ঝর্নার জায়গাটিতে সংরক্ষণ করা হয় এবং এই পানি টয়লেটে ফ্ল্যাশ করতে ব্যবহার করা হয় কারণ টয়লেটে বৃষ্টির পানি ফ্ল্যাশের কাজে ব্যবহার করলেও সমস্যা নেই। এতে করে একদিকে যেমন বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে অপরদিকে আবার ভালো ব্যবহারযোগ্য পানিরও অপচয় রোধ হচ্ছে।

জিপি হাউজের ভেতরে Building Management System (BMS) এর জন্য একটি কন্ট্রোল রুম রয়েছে।  একটি রুমে যদি ৫ জন মানুষ থেকে ১০/১৫ জন হয় তবে আপনাকে এসির রিমোট দিয়ে তাপমাত্রা কন্ট্রোল করতে হবে না। একেই বলা হয় Automated Air Conditioned. এই পদ্ধতিতে রুমে এটি ছোট সেন্সর থাকে সেটি কন্ট্রোল রুমে বার্তা পাঠায় যে সেই রুমটিতে মানুষের তারতম্য হয়েছে এসির তাপমাত্রা সে অনুযায়ী হ্রাস-বৃদ্ধি হয়।

 এছাড়া পুরো বিল্ডিংটা Argon Filled Glass দিয়ে কভার করা। এই গ্ল্যাস ব্যবহারের সুবিধাটি হলো বাহিরে থেকে যে হিট  আসে তা গ্লাসে থাকা আর্গন লেয়ার শুষে নেয়। এটি বাহিরে হিটকে রিফ্লেক্ট করে দিচ্ছে না, ফলে প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে না।  পুরো ভবনে যেখানে ১৭০০ টনের এসি দরকার হতো সেখানে এখন ১৩০০/১৪০০ টনের এসিতেই হয়ে যাচ্ছে এবং শীতকালে ২০০ টনের  এসিতেই চলছে। পুরো ভবনটা এরকম ইকোফ্রেন্ডলি ভাবে চালানো হচ্ছে। এছাড়াও এই ভবনে দিনের বেলাতে কোন আর্টিফিশিয়াল লাইট ব্যবহার করা হয় না। গ্লাস ব্যবহারে ফলে ভেতরে প্রাকৃতিক আলো সহজেই চলাচল করতে পারছে এবং আলাদা আলোর প্রয়োজন পড়ছে না।

অফিসের ভেতরে যতটা সম্ভব প্লাস্টিকের ব্যবহার বর্জন করা হয়েছে। এছাড়াও যেকোন ধরনের মিটিং করার সময় ছোট স্পেসরুমে বসে মিটিং করা হয়। এখানে কারো তেমন পার্সোনাল ডেস্ক নেই যা অন্যান্য অফিসের থেকে আলাদা। পেপারের ইউজ কমিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে নিয়ে এসেছে অফিসের কাজগুলো। প্লাস্টিকের ব্যবহার ও পেপা্ ইউজের বিষয়টি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার ফলে পরিবেশের উপর যে প্রভাব পড়ার কথা তা পড়ছে না। অন্যান্য সাধারণ ভবনগুলোতে কাজ করার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা হয় না। কিন্তু জিপি হাউজের অফিসিয়াল কাজ ও অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধবের দিকটা মাথায় রেখেই তারা কাজ করে চলেছে।

জিপি হাউজের আরেকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে এখানে সিএফসি(CFC) গ্যাস বেইজড এয়ারকন্ডিশনড ব্যবস্থা নেই, এখানে এয়ার কুলার পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই অফিসের ভেতরে বেসিনে যে পানি ব্যবহার করা হয় সেই পানিই আবার টয়লেটের ফ্ল্যাশের কাজে ব্যবহার করা হয়। সারা বছর এরকমভাবে পানি অপচয় রোধ এবং রেইন হার্ভেস্টিং এর মাধ্যমে তারা তাদের পুরো ভবনটি পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিল্ডিং এ বর্তমানে এরকম পদ্ধতি চালু হয়েছে তবে জিপি হাউজ Pioneer হিসেবে তাদের কাজ শুরু করে। 

এছাড়াও তারা তাদের হিউম্যান ওয়েস্টেজ অর্থাৎ বর্জ্য পদার্থগুলো একটা প্রসেসিং এর মাধ্যমে ফেলে দেয় যাতে করে পরিবেশ দূষণ না হয়। পরিবেশের ক্ষতি না করে অনেক সুন্দরভাবে তারা তাদের ভবনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরকম এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি ভবন বাংলাদেশে প্রথম দিককার ভবনের একটি। আমাদের দেশে অন্যান্য ভবনেও যদি এরকম সিস্টেম চালু করা যায় তবে একদিকে যেমন সাশ্রয় হবে তেমনই পরিবেশন দূষণের হার হ্রাস পাবে।

 

আরো ব্লগ পেতে এখানে ক্লিক করুন।

 

মোসা. লুভনা আক্তার 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং বিভাগ, YSSE