“মনপুরা” এই নামটি আমাদের মধ্যে বেশ পরিচিত। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে এই সিনেমাটি আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সিনেমাটির সিনেমাটোগ্রাফি থেকে শুরু করে ডায়ালগ, স্টোরি সবকিছুই হৃদয় ছুয়ে গেছে।
গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত “মনপুরা” সিনেমাটি ২০০৯ সালে মুক্তি পায়। মনপুরা বাংলাদেশের গ্রামীণ একটি রোমান্টিক ট্র্যাজেডি চলচ্চিত্র। বগুড়া, কুষ্টিয়া ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শুটিং হয়েছে এই সিনেমার। চরিত্রে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, ফারহানা মিলি, ফজলুর রহমান বাবু, মামুনুর রশীদ এবং মনির খান শিমুল।
সোনাই চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী এবং জেলে কন্যা পরী চরিত্রে অভিষেক হয় ফারহানা মিলির। “মনপুরা” ২০০৯ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী বাংলাদেশী চলচ্চিত্র এবং সর্বকালের ৭ম সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র।
চলচিত্রের দৃশ্যগুলোতে গ্রামবাংলার অসম্ভব চিত্র ফুটে ওঠে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি চরের নাম মনপুরা। চরের চারপাশে নদী। নদীর তীর ঘেষে দূরে বসতিপূর্ণ গ্রাম দেখা যায়। একদমই জনমানবশূন্য চর মনপুরা। সেখানে একটি ছোট্ট ছিমছাম ঘরে বাস করে অন্যের খুনের দায় মাথায় নেয়া এক যুবক সোনাই।
মনপুরা চরে সে মানুষ হিসেবে একলা থাকলেও তার সাথে সঙ্গ দেয় গরু, ছাগল আর বাছুর। সোনাই এগুলোর সাথেই কথা বলতো আর এই দৃশ্যগুলো দর্শককে ব্যাপক আনন্দ দিয়েছে।
ছবির শুরুর দৃশ্যতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে গাজীর পাগল ছেলে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে এবং তার সামনে হাত পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে মরে পড়ে আছে তাদের বাসার কাজের মেয়ে রহিমা। তাকে কেনো হত্যা করা হয়েছে তা সিনেমাতে স্পষ্ট নয়। এই খুনের দায় সোনাইয়ের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
অন্য একটি দূরের গ্রাম উজানতলীর হাবিব আলীর মা-মরা মেয়ে পরী বাপের সাথে মনপুরায় মাছ ধরতে এসে সোনাইর প্রেমে পড়ে। চরের পাশে মাছ ধরতে দেখে সোনাই এগিয়ে আসে।
এরপর তাদের একসাথে নৌকাতে ঘোরাঘুরি, ভাত খাওয়া, চোখে চোখে চেয়ে থাকা, দুজনের কাছে আসার দৃশ্যগুলো খুব সহজভাবেই দর্শকের মন কাড়ে।
পরী এবং সোনাই যেনো একে অপরের জন্যই। সোনাই ঘরের বেড়া ধরে দাঁড়িয়ে থাকা, দুজনের চেয়ে থাকা, দুইজনের সংলাপ সবকিছু যেনো স্বর্গমর্ত্য। আর এই দৃশ্যগুলোর সাথে যেই গানগুলো মনে হয় এই গানগুলো এদের জন্যই তৈরি। গানের সংলাপগুলো শুনে মনে হয় যেনো প্রেমের গল্পগুলোকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়।
কিন্তু মনপুরা চরের মালিক গাজীর পছন্দ হয় পরীকে। গাজীর বাড়িতে সোনাই চাকর হিসেবে কাজ করে। গাজীর ছেলে এক পাগল যে কিনা খুন করেছিলো। গাজী ভাবলো সুন্দরী মেয়ের সাথে তার পাগল ছেলের বিয়ে দিলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। এরপর পরীর নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে নিয়ে গাজী তাকে পুত্রবধূ করে ঘরে তোলে।তবে শর্ত থাকে, পরী কখনোই তার স্বামীকে ত্যাগ করতে পারবে না। পরীর সাথে বিয়ে হয় পাগল ছেলের। এদিকে সোনাই একা পড়ে যায়। তার দিন কাটেনা। এক অসম্ভব বিষাদের মধ্য দিয়ে কাটতে থাকে সোনাইয়ের দিন। শুধু মনে পরে পরীর কথা, তার চোখগুলো।
এদিকে পরীর মন একমাত্র সোনাইয়ের জন্য কাঁদে। সে শুধু সোনাইকেই তার স্বামী হিসেবে মানে। হঠাৎ একদিন পুলিশ এসে সোনাইকে নিয়ে যায় মিথ্যে খুনের অপরাধে। পরী দিন গুনতে থাকে কবে সোনাই ছাড়া পেয়ে তার কাছে আসবে।
গাজী সোনাইর মিথ্যে ফাঁসির খবর শোনায় পরীকে। এই বেদনা সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবন নিয়ে নেয় পরী। কিন্তু এইদিকে সোনাই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। যেইদিন সে জেল থেকে ছাড়া পায় পরী আত্মহত্যা করে। তাকে দেখতে এসে তার আত্মহত্যার কথা শুনে সোনাই পাগল প্রায় হয়ে দেশান্তরী হয়।
বাংলা চলচিত্রের এইরকম রোমান্টিক ট্র্যাজেডি খুব কমই আছে। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের এটি প্রথম নির্মিত ছবি। যেখানে তিনি নিজে এক ভিন্নধর্মীর ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন। দর্শকের কাছে সবসময় এক অন্যরকম ভালো লাগার জায়গা হয়ে থাকবে মনপুরা।
আরো ব্লগ পরতে লিংকে ক্লিক করুন-
মারিয়া আফসা
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE