Illustration of a man sitting on a bed, looking thoughtful with a night sky background. Thought bubbles show two people talking and confused people with question marks, indicating contemplation or decision-making.

ঘুম ভাঙলে যে গল্পটা আর ফেরে না, সেই গল্পটাই হয়তো সবচেয়ে কাছের

সকালের আলোটা জানালার কাঁচ ভেদ করে চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় সিফাতের। ঘুমভাঙা চোখে হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়, স্ক্রিনে বাজে ৭টা ৪৫। অথচ এলাম সেট করা ছিলো সকাল ৭টার!

“আরো পাঁচ মিনিট ঘুমাই,”- এই ছোট্ট অলস সিদ্ধান্তটাই কতো কিছু পাল্টে দেয়, সেটা বুঝতে তাকে পুরোদিন অপেক্ষা করতে হয়।

ঘুম থেকে উঠে, এক কাপ চা হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিফাত ভাবতে থাকে, রাতের সেই স্বপ্নটা নিয়ে….

কেমন যেন একটা পথ, অস্পষ্ট আলো আর কেউ একজন হেঁটে যাচ্ছিলো! পরিচিত মুখ, হয়তো তার ছোটবেলার প্রতিবেশী, অথবা হারিয়ে যাওয়া কোনো পুরনো বন্ধু। কিন্তু এখন আর মুখটা মনে করতে পারছে না। একটা অদ্ভুত খালি  লাগা অনুভূতি কাজ করতে থাকে তার মধ্যে—যেটা বোঝানো যায় না, ফেলা যায় না।

‘স্বপ্নের স্মৃতি কেন মুছে যায়?’

ঘুম যখন গভীর হয়, তখন আমরা নানা ধরণের স্বপ্ন দেখি—অদ্ভুত, অসম্পূর্ণ আবার কখনো সত্যিকারের জীবনের চেয়েও স্পষ্ট। কিন্তু ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকটা মনে রাখা যায় না।

একটা গল্পের মতো শুরু হয়, কিন্তু শেষটা বোঝার আগেই ঘুম ভেঙে যায়। ঠিক যেমনটা হলো আজ,  স্বপ্নটা যেন সিফাতকে কিছু বলতে চাইছিলো। কেউ যেন হাত ধরে বলছিল, “এবার সময় হয়েছে।”

কিন্তু কার সময়? কোন পথ?—সব যেন বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যায় সূর্যের আলোতে।

‘হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলো’

আসলে ঘুমের মাঝে অনেক গল্প-ই তৈরি হয়, কিন্তু সেগুলো কখনো লিখে রাখা হয় না, আর সকাল হলেই স্বপ্নটা কোথায় জানিয়ে এমনভাবে হারিয়ে যায়, যার হয়তো কখনো কোনো অস্তিত্ব-ই ছিলো  না।

এভাবে হারিয়ে যায় অগণিত ‘অসমাপ্ত গল্প’-যেগুলো হয়তো হতে পারতো পরের উপন্যাসের প্লট অথবা জীবনকে দেখার নতুন এক জানালা।

‘ঘুম মানেই কি শুধু বিশ্রাম?!’

না! ঘুম মানে একটা ভিন্ন জগতে ভ্রমণ। সেই জগতে প্রবেশের রাস্তা কীভাবে যে আপনাআপনি তৈরি হয় তা যেমন আমাদের জানা নেই তেমনি,  আবার  ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে সেই রাস্তা এমনভাবে বিলীন হয়ে যায়, যেনো এটা কোনোদিন ছিলোও না!

‘মস্তিষ্কের খেলা’

বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের ব্রেইনের REM (Rapid Eye Movement) Sleep-এ যেসব স্বপ্ন দেখা হয়, তা খুব অল্প সময়ই মনে থাকে।

আমাদের ব্রেইন তখন তথ্য গুছিয়ে রাখছে, অনুভূতিগুলো বিশ্লেষণ করছে, এমনকি অবচেতন চিন্তাগুলোকে সাজিয়ে নতুন অর্থ তৈরি করছে। তাই মাঝে মাঝে আমরা এমন মানুষদের স্বপ্নে দেখি, যাদের সঙ্গে বহুদিন কথা হয়নি বা এমন কিছু ঘটনা স্বপ্নে আসে যা বাস্তবে ঘটেনি – তবুও অনুভূতিতে খুব বাস্তব লাগে।

সিফাত ভাবতে লাগলো,ঘুম ভাঙলে শুধু স্বপ্ন নয়, হারিয়ে যায় একটা জগৎ-ও। যেখানে সে কখনোই পুরো জগৎ টাকে ঘুরে দেখতে পারেনি, কিন্তু বেরিয়ে এলেও কিছু একটা রেখে আসে।

‘ফিরতে না-পারা অনুভব’

সেই গল্পগুলো আর ফেরে না। স্বপ্নে বলা কথাগুলো, চেনা পথ বা মুখ – কিছুই থাকে না। শুধু থাকে একটা অস্বস্তি, একরাশ আফসোস আর ফাঁকা লাগা জায়গা মনের ভিতরে।

কখনো কখনো, সেই হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নটা একটা সারাদিনের খামোখা চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়। “আচ্ছা, ঠিক কী বলছিল তখন? হাত ধরেছিল কেন?” এমন কিছু প্রশ্ন, যেগুলোর কোনো উত্তর নেই।

এই গল্পগুলোই বোধহয় সবচেয়ে সত্যি। কারণ এগুলো ভাবায়, প্রশ্ন তোলে, আবার উত্তর না দিয়ে হারিয়ে যায়।

ঘুম ভাঙলে যে গল্পটা আর ফেরে না-সেই গল্পটাই হয়তো আমাদের সবচেয়ে কাছের। যে গল্পটা আমরা ভুলে যেতে চাই না, কিন্তু মনে রাখাও সম্ভব না।
এগুলো আমাদের অবচেতন জগতের প্রতিচ্ছবি, যেখানে বাস্তব-অবাস্তবের কোনো ব্যবধান থাকে না। ঘুম থেকে জেগেই আমরা ফিরে যাই পরিচিত জগতে, কিন্তু কিছু একটা থেকে যায় সেখানে, যেটা আমরা ছুঁতে পারি না, কেবল অনুভব করতে পারি।

আর সেই অনুভবই, একেকটা ‘না-ফেরা গল্প’ হয়ে হৃদয়ে গেঁথে থাকে।

To read more blogs like this, click here.

Writer
Fatemi Sushom
Intern at Content Writing
YSSE.