কৃষি দেশের অর্থ ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি। জনপ্রিয় এই কৃষি ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত সাড়া ফেলছে। বর্তমান যুগে ছাদ কৃষি তার অন্যতম পদ্ধতি। এই ছাদ কৃষির উদ্দেশ্য গুলো বেশি সাড়া জোগায় কোভিড এর সময়,কেননা তখন প্রকৃতির বিকাশিত রুপ ধরা দেয় চারপাশে।দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলস্বরুপ অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই এখন বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়।কোথাও ফলের বাগান,কোথাও ফুল তো কোথাও সবজি বাগান।প্রকৃতি এর বিভিন্ন রং খুব কাছ থেকে দেখা যায় এই ছাদ কৃষি এর মাধ্যমে। বলা চলে ছাদ কৃষি হলো অবসর সময় কাটানোর একটি বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে যেখানে প্রকৃতির খুব কাছে যাওয়া যায় অনায়াসে।
প্রাত্যহ জীবনে ছাদ কৃষির প্রতি সকলেরই আগ্রহের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বহুমাত্রিক সুবিধা ও সাফল্যের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে অনেকেই ছাদ কৃষি করে সফল হতে পারছেন না। কারণ তাদের পূর্ব প্রস্তুতি নেই। ছাদ কৃষি করতে কি কি প্রয়োজন হয়, ছাদে বাগান করার পদ্ধতি, ছাদে কি কি গাছ লাগানো যায়, ইত্যাদি বিষয় না জেনে শুরু করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এরই প্রেক্ষিতে ছাদ কৃষির সফলতার জন্য আমাদের জেনে নেয়া উচিত ৬টি বিশেষ পদ্ধতি।
ছাদ কৃষির ৬টি পদ্ধতি :
১| ছাদের অবস্থান : বাড়ির ছাদে গাছ লাগানোর আগে জেনে নিতে হবে ছাদের অবস্থান।কোন গাছ লাগালে ভালো ফলন হবে এবং ছাদের ক্ষতি হবে না সেদিকে লক্ষ্য রেখে ছাদ কৃষি করতে হবে।যদি কোন বড় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা থাকে তবে তা মাটি রোপণের পর তার ওজন এবং পানি দেওয়ার পরে তার ওজন কতটুকু হবে তা জেনে নিতে হবে।
২| সূর্যের অবস্থান : সকল প্রকার গাছের জন্য সূর্যালোকে অপরিহার্য বিষয়।কেননা সালোকসংশ্লেষ বা গাছের খাদ্য তৈরির জন্য সূর্যালোকের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সূর্যের আলো যাতে গাছের উপর সঠিকভাবে পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।শীতকালে যেহেতু সূর্যের তাপমাত্রা কম থাকে তাই ঋতু বিবেচনায় সঠিক সূর্যালোক অনুযায়ী গাছ রোপণ করতে হবে।
৩| গাছ নির্বাচন : ছাদ বাগানের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো গাছ নির্বাচন। ছাদের কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গাছ নির্বাচন করতে হবে।ছাদের ধারণ ক্ষমতা, গাছের ওজন যাতে ছাদের ক্ষয় না করে তা খেয়াল রাখতে হবে।গাছ লাগানোর পর তা পরিচর্যা এর দিকে নজর রেখে ছাদে সর্বসময় ছোট আকৃতির গাছ লাগাতে হবে।ছোট প্রজাতির গাছে যাতে ফলন ভালো হয় তার জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদি গাছ লাগাতে হবে।
৪| মাটি ভরাট করা : ছাদের বাগানে কোনো পাত্র বা টবের মধ্যে অথবা ছাদকে পানিরোধী করে সরাসরি মাটি ফেলে মাটি দিয়ে ভরাট করা যায় । এক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। ছোট ছোট টব বাছাই না করে বড় ট্রে বা প্লাস্টিকের বাক্স নেওয়া যেতে পারে। অনেকেই সিমেন্টের ঢালাই করা বড় টব বানিয়ে নেন।যাতে যেকোনো গাছ লাগিয়ে অল্প সময়ে ফলন পেতে পারেন।সবচেয়ে উপযোগী হলো মাটি ভরাট না করে সিমেন্টর ঢালাই করে বড় টব বানানো,এতে পরিচর্যায় বেশ সুবিধা হয়।
৫| পানি ব্যবহারের নিয়ম : ছাদ বাগানে কীভাবে পানি ব্যবহার করা যায়। তা নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি থাকা চায়।আবার গাছ হতে অতিরিক্ত পানি যাতে ছাদের কংক্রিটে ক্ষতি না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।তাছাড়া ছাদে যাতে বেশি আগাছা না জন্মায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।কেননা এই আগাছা গুলো ছাদের মেঝে পিচ্ছিল করে তুলে।
৬| বাতাস চলাচলের দিক : ছাদ বাগানের তৈরীতে প্রথমেই মাথায় রাখতে হয় বাতাসের আদ্রতা ও চলাচলের দিকে। বাতাসের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও অতিরিক্ত বায়ু গাছের আর্দ্রতা কমিয়ে ফেলে।এছাড়া ঝড়ো হাওয়া গাছকে নুয়ে ফেলে,তাই অন্যান্য পরিকল্পনার সাথে সাথে বাতাসের চলাচল ব্যবস্থা বিবেচনায় রাখতে হবে।ফলন যাতে রুখে না যায় তার যথার্থ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া পোকামাকড় দমন পদ্ধতি সহ অন্যান্য যাবতীয় কৌশল অবলম্বন করে ছাদ কৃষি গড়ে তোলার দিকে মনোযোগী হতে হবে।কেননা এই কৃষি আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বড় দিক দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থা সচল রাখা।প্রয়োজনে কৃষিবিদের থেকে পরামর্শ নিতে হবে।এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি হেডলাইন নম্বর: (১৬১৬)সহ অন্যান্য যেকোন যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখিকা
মোর্শেদা বেগম
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE