আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত জিপিএস ব্যবহার করছি। কখনো কি ভেবে দেখেছি এটি কিভাবে কাজ করে? এটি কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করে? তবে আসুন আমরা জেনে নেই,
জিপিএস (GPS) কি?
জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) হল একটি প্রযুক্তি যা ভূ–পৃষ্ঠে এর কোন একটি অবস্থান জানানোর জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহার করে জিপিএস ডিভাইসের মাধ্যমে প্রদর্শন করে।
জিপিএস প্রযুক্তি ১৯৬০ দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দ্বারা প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিলো এবং পরে ১৯৮০ এর দশকে প্রথম বেসামরিক ক্ষেত্রে এটি প্রথম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন অটোমোবাইল, স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ, এবং জি আই এস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেনশন সিস্টেম) ডিভাইসগুলোর মধ্যে জিপিএস রিসিভার ব্যাবহার হয়ে থাকে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যম আমরা খুব সহজেই কোনো জায়গার যেকোনো পথ খুজে বের করতে পারি।
সাধারন জিপিএস (GPS) সিস্টেমের কার্যপদ্ধতি?
জিপিএস ২৭ টি ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইট দ্বারা চালিত হয় যার মধ্যে ২৪টি সচল থাকে এবং বাকি ৩ টি অতিরিক্ত থাকে যদি ২৪ টির মধ্যে কোনটি কখনো ব্যর্থ হয়। এসব স্যাটেলাইটের কক্ষপথ এমনভাবে সাজানো থাকে যাতে করে ৪ টি সবসময় আকাশে দৃশ্যমান থাকে। যেকোনো অবস্থান নির্ণয় করতে জিপিএস রিসিভারকে দুটি কাজ করতে হয়ঃ
- অন্তত ৪ টি স্যাটেলাইটের অবস্থান নির্ণয় করতে হয়।
- রিসিভার এবং এসব স্যাটেলাইটগুলোর দূরত্ব বের করতে হয়।
রিসিভার জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত কম শক্তির বেতার সংকেত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি করে থাকে। বেতার তরঙ্গ হচ্ছে তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তি, যা আলোর গতির সমান গতিতে চলে।
রিসিভার সিগন্যালটি কতটুকু পথ অতিক্রম করেছে তা বের করে সিগন্যাল কত সময়ের মধ্যে ফিরে আসলো তার মাধ্যমে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্যাটেলাইট এক দীর্ঘ ডিজিটাল প্যাটার্ন প্রেরণ করে যা পেসুডো–রেন্ডম কোড (pseudo-random code) নামে পরিচিত। একই সময়ে রিসিভারও একই প্যাটার্নে চলতে শুরু করে।
যখন স্যাটেলাইটের সিগন্যাল রিসিভারে পৌঁছায় তখন প্যাটার্নের প্রেরণ, রিসিভারের প্যাটার্নের চেয়ে একটু ধীরে ধীরে চলে। বিলম্বের সময়টুকু সিগন্যাল যে সময় অতিক্রম করে তার সমান। রিসিভার সময়ের সাথে আলোর গতিকে গুণ করে সিগন্যাল কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করল তা বের করে। কোনো বস্তু বা পৃথিবীর উপর অবস্থিত কোনো জিপিএস রিসিভার এর অবস্থান নির্ণয় করার জন্যে “জিপিএস রিসিভার ত্রিভুজ” নামক একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। এর পর রিসিভার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে অবগত হয়।
ঠিক এভাবেই জিপিএস ভূ–পৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান বের করে।
অবস্থান বের করা হলো, তবে উক্ত অবস্থানে কি উপাত্ত রয়েছে? জিপিএস সেই তথ্য/উপাত্ত কিভাবেই বা সংগ্রহ করে?
উক্ত স্থানের বস্তুগুলোকে ‘উপাদান‘ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এগুলো জিপিএস সংগ্রহ করে জি আই এস এর মাধ্যমে মানচিত্রে ফুটিয়ে তোলার জন্যে।
তিন ধরণের উপাদানের মাধ্যমে মানচিত্র তৈরি করা যায়ঃ পয়েন্ট, লাইন এবং পলিগন। একটি পয়েন্ট ফিচার হচ্ছে একটি জিপিএস কোঅর্ডিনেট এর অবস্থান যা একটি নির্দিষ্ট বস্তু দ্বারা চিহ্নিত হয়। লাইন ফিচার হচ্ছে অনেকগুলো জিপিএস পজিশনের সমষ্টি যেগুলো একই বস্তু দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং পরস্পর সংযুক্ত হয়ে একটি লাইন তৈরী করে। পলিগন ফিচার অনেকটা লাইন ফিচারের মত, এখানে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে লাইনের শেষ প্রান্তগুলো পরস্পর যুক্ত হয়ে একটি বড় ক্ষেত্রফল তৈরী করে।
উদাহরণ স্বরূপ, একটি শহরের ব্লকের প্রত্যেকটি বাড়ির অবস্থান মানচিত্রে দেখানো যায় এবং সহজেই প্রত্যেকটি কোঅর্ডিনেটের অবস্থানে একটি বাড়িকে দেখানো যায়।
মূলত এই সিস্টেমের মাধ্যমে জিপিএস কোনো স্থানে বিদ্যামান উপাদান গুলোর তথ্য দেয় এবং সেগলো মানচিত্রে প্রকাশ করতে ভূমিকা রাখে।
জিপিএস (GPS) এর ব্যবহারঃ
- LOCATION(অবস্থান): দ্রুত কোনো স্থানের অবস্থান বের করে।
- NAVIGATION(পথ): এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার পথ নির্দেশ করে।
- TRACKING(অনুসরণকরণ): কোনো স্থানের বস্তুর উপর নজর রাখে।
- TIMING(সময়): সঠিক সময় নির্দেশনা।
- MAPPING(মানচিত্র): সঠিক মানচিত্র তৈরি করে।
- POSITIONING(অবস্থানরত): কোনো স্থানের সঠিক পজিশন দিয়ে থাকে।
জিপিএস (GPS) ভিত্তিক ডাটা সংগ্রহের সুবিধাসমূহঃ
- জিপিএস পরিচালনা করা খুবই সহজ।
- জিপিএস সবধরণের আবহাওয়ায় কাজ করতে পারে।
- অন্যান্য নেভিগেশন সিস্টেমের তুলনায় জিপিএস অনেক কম খরচের।
- এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি পৃথিবীর শতভাগ জায়গায় আবৃত।
- এটি সুলভ মূল্যের এবং আধুনিক।
জিপিএস (GPS) ভিত্তিক ডাটা সংগ্রহের অসুবিধাসমূহঃ
- যদি জিপিএস কে ব্যাটারি চালিত ডিভাইসে ব্যবহার করা হয় তবে ব্যাটারি নষ্ট হতে পারে।
- মাঝে মাঝে জিপিএস সিগন্যাল সঠিক হয় না।
সুতরাং GPS সিস্টেম দিয়ে শুধু ভূপৃষ্ঠের অবস্থান নয় বরং উক্ত অবস্থানে কি রয়েছে সেগুলো সহজে জানা যায়। GPS সিস্টেম ব্যাবহার করে তথ্য বা উপাত্ত দিয়ে মানচিত্র তৈরি করা হয়। আর মানচিত্র অনেক তথ্যবহুল হয়ে থাকে ফলে কম সময়ে বহু তথ্য বিশ্লেষণ সহজ হয়ে যায়। GPS সিস্টেমের উক্ত কাজ এবং ডাটা সরবারাহের জন্যেই আধুনিক অনেক কাজ সহজ হয়ে গিয়েছে। তাই GPS সিস্টেম আধুনিক বিশ্বের একটা অন্যতম হাতিয়ার ধরা যায়।
আরোও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক
মোঃ রায়হান কবীর
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE