বই মানুষের পরম বন্ধু। বই পড়ার মাধ্যমে একটা মানুষ নিজের ভেতরে পরিবর্তন আনতে পারে, নিজেকে জ্ঞান এর উন্মেষের মাধ্যমে আলোকিত করে তুলতে পারে। নিজের ভেতরে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে হৃদয়কে উদ্ভাসিত করে তুলতে পারে৷ তাহলে বুঝতেই পারছেন বই পড়ার গুরুত্ব কতটুকু! আপনি হয়তো একটা মানুষের কাছ থেকে যেকোনো সমস্যায় সঠিক দিকনির্দেশনা নাও পেতে পারেন কিংবা পেতে পারেন ভুল পথে যাওয়ার পরামর্শ কিংবা অসৎ সঙ্গ। কিন্তু একটা বই কখনো আপনাকে অসৎ সঙ্গ দিবে না কিংবা আপনাকে অসৎ পথে ঠেলে দিবে না৷ তার মানে বুঝতেই পারছেন বই কে কেন বন্ধুর সাথে তুলনা করা হয়েছে!
আর সেই বইগুলি যদি হয় জীবন বদলানো আত্মউন্নয়নমূলক বই, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। তাহলে আর কেনো নিজেকে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত করে রাখবেন, জীবনের কি কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না? জীবন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কোনো দিক নির্দেশনা খুঁজে পাচ্ছেন না? তাহলে আর অপেক্ষা কেনো?
নিচের এই ১০ টি বই অবশ্যই পড়ে ফেলুন এবং আজই নিজেকে পরিবর্তন করার উদ্দেশ্য নেমে পড়ুন।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী — মাইকেল এইচ. হার্ট :
বইটির রচয়িতা প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক মাইকেল এইচ. হার্ট। তিনি তার জীবনদশায় ২৮ টি বছর গবেষণা করে ১০০ জন মনীষীর আত্মজীবনী নিয়ে এই বইটি রচনা করেছেন। ১০০ জন এই মনীষীর তালিকায় তিনি এনেছেন আইনস্টাইন, নিউটন, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, লেভ তলস্তয় জুলিয়ান সিজার হতে শুরু করে জগদ্বিখ্যাত সকল বিজ্ঞানী, দার্শনিক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, সমাজ নির্মাতা, বীরযোদ্ধা, সেনাপতি। নিম্নে এই বইয়ে লেখক সকল জ্ঞানী, গুণী মানুষদের পিছনে ফেলে প্রথম স্থানে যে মনীষীকে নিয়ে বর্ণনা করেছেন তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, মানবতার মুক্তির আলোর দিশারী, আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবিব, ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে।
তিনি সকল জ্ঞানী, গুনী সকল মানবের ঊর্ধ্বে এ কথা লেখক নিজেই তার বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। জীবনদর্শনের জন্য সকল মানুষদের এই বই অবশ্যই একবার পড়া উচিত।
টাইম ম্যানেজমেন্ট — ব্রায়ান টেসি :
এই বইটিতে লেখক সময়কে দক্ষভাবে ব্যবস্থাপনার করার ২১ টি উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। যেগুলো কর্মঠ মানুষেরা তাদের জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে সফল হয়েছেন এবং তাদের নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন।
এছাড়াও লেখক এই বইটিতে বলেছেন, অধিক অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি এই প্রত্যেকটি উপায় আয়ত্ত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারে আরো অধিক দক্ষ হয়ে উঠবেন এবং এর মাধ্যমে আপনি আপনার নিজস্ব কর্মদক্ষতা দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি করতে পারবেন।
তাই আপনি যদি একজন কর্মজীবী মানুষ হয়ে থাকেন এবং নিজের জীবনে নিয়মানুবর্তিতা আনতে চান, তাহলে এই বইটি পড়া মিস করবেন না!
দ্য পাওয়ার অব ইউর সাবকনশাস মাইন্ড — ড. জোসেফ মারফি :
এই বইটি মূলত মানুষের মন নিয়ে রচয়িত। লেখক দেখিয়েছেন, প্রত্যেকটি মানুষের মনের ভিতরে একটি সুপ্ত শক্তি রয়েছে, যেটা আমাদের অগোচরে। এই শক্তির মাধ্যমে আপনি যেকোনো অসাধ্যকে সাধন করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন শুধু জ্বলে উঠা। এর জন্য আপনার ভেতরে নিজের আবেগ, চিন্তাধারা, কর্মকে বাস্তবায়ন করার চেতনা ও ইচ্ছে থাকতে হবে।
এছাড়াও এই বইটি পড়ার মাধ্যমে আপনি আপনার জীবনে দুঃখ, দৈন্য, হতাশা দূর করার সাহস খুঁজে পাবেন। মানসিকভাবে শক্ত হতে পারবেন৷ নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি খুঁজে পাবেন।
তাই আর নয় হতাশা, বিষন্নতা, এখনই বইটি পড়ে ফেলুন!
দ্য মিরাকল মর্নিং — হ্যাল এলরড :
এটি একটি চমৎকার ও আন্তর্জাতিক ভাবে সর্বাধিক বিক্রিত জনপ্রিয় বই। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা কত যে জরুরী সেটা আপনি এই বই পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন৷
লেখক এখানে বুঝাতে চেয়েছেন যে, সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠার ফলে আপনি যে কত ঘন্টা পিছিয়ে পড়েছেন অন্যদের থেকে, তা আপনার কল্পনার বাইরে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে না উঠার কারণে আপনার শত শত কর্মঘন্টার অপচয় হয়, নিজের ভিতরে কর্মস্পৃহা আসে না। কিন্তু আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন রুটিনে সামান্য পরিবর্তন আনতে পারেন, নিজের জীবনের পরিবর্তন করতে পারেন তাহলে তাহলে দেখবেন সফলতা আপনার কাছে হাতছানি দিচ্ছে।
তাহলে আর দেখি কিসের! এই বইটি একবার পড়ে ফেলুন, ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করার পণ করে ফেলুন, আর নিজের জীবনে রুপকথার মতো মিরাকল ঘটিয়ে ফেলুন!
দ্য সেভেন হ্যাবিটস অফ হাইলি এফেকটিভ পিপল — স্টিফেন রিচার্ডস কোভি :
এই বইটি মানুষের অভ্যাস নিয়ে রচয়িত। অভ্যাস মানুষের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রতিদিন আমরা আমাদের মনের অগোচরে যে কাজগুলো প্রায়ই করে থাকি, সেটাই মূলত অভ্যাসকে নির্দেশ করে। অভ্যাস এর মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব, আচরণ ফুটে উঠে। একটা মানুষের সফলতা অনেকটা তার অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। অভ্যাসই একটি মানুষকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সবকিছু দিক থেকে উপস্থাপন করে।
অভ্যাসের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইটিই দিক রয়েছে। আপনার অভ্যাসটা অন্যদের কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। তাই অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারটাও আপনার মাথায় রাখতে হবে।
তাই এই বই পড়ার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন অভ্যাসটি আপনার জন্য ভালো আর কোনটি আপনার জন্য খারাপ। তাই সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে, শুধু বইটির নাম দেখলে হবে না, পুরোপুরি একবার পড়েও ফেলতে হবে।
(চলবে)
আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখিকা
অশীন বিনতে জামাল
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE