জীবন বদলানো ১০টি সেরা আত্মউন্নয়নমূলক বই (পর্ব – ১) এ আমরা প্রথম পাঁচটি সেরা বই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে দেখিয়েছিলাম কিভাবে এই বইগুলো আমাদের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পরে এবং আমাদের জীবনকে নিমিষেই পরিবর্তন করতে পারে। এবারও ঠিক তেমনি আমরা সর্বশেষ পাঁচটি বই নিয়ে আলোচনা করবো এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে পর্যবেক্ষন করবো। 

৬.  দ্য কমপাউন্ড এফেক্ট — ড্যারেন হার্ডি : 

এই বইটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও বাস্তবধর্মী । এখানে লেখক দেখিয়েছেন, আশেপাশের সবকিছু থেকে সুযোগ গুলো ব্যবহার ও প্রয়োগ কীভাবে করবেন, নিজের সর্বোচ্চ মেধা খাটিয়ে। কোনো সুযোগই হাতছাড়া করা উচিত নয়। 

কোনো সুযোগ সুবিধা না পেলে বসে থাকা চলবে না, নিজের ভেতর যা আছে, তা নিয়ে জীবনের লড়াইয়ে নেমে যেতে হবে। এই বইটি পড়ে আপনার মনে হবে যে, পৃথিবীর কোনকিছুই অসম্ভব নয়, সবকিছুই সম্ভব, যদি আপনি নিজের সর্বোচ্চটুকু দেন। তাই সফলতা অর্জনের সাহস ও অনুপ্রেরণা  খুঁজে নেওয়ার জন্য এই বই একটি আকাশের চাঁদ। 

৭. দ্য আলকেমিস্ট — পাওলো কোয়েলহো : 

এই বইটি রচনা করে ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। স্বপ্ন দেখতে নেই মানা, এই বইটি যেন তার বাস্তবিক প্রমাণ। 

সান্টিয়াগো নামে একজন রাখাল যাকে কেন্দ্র করে মূল কাহিনী। তার প্রধান স্বপ্ন ছিলো সে পিরামিড দেখতে যাবে এবং সেখান থেকে রত্নভান্ডার উদ্ধার করবে । সে এটাও খেয়াল করে যে তার আশেপাশেরই প্রত্যেকেরই তার মতো কোনো না কোনো স্বপ্ন আছে, কিন্তু কারও মধ্যে সেই স্বপ্ন পূরণের সেই তাড়না, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা কোনটিই প্রকাশ পায় না। কিন্তু সান্টিয়াগো ঠিকই সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সকল কিছু সাহসের সাথে মোকাবিলা করে ঠিকই তার স্বপ্ন পূরণ করেছে। তাই বইটি পড়ে ফেলুন এবং সান্টিয়াগোর মতো স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্খা, মনোবল নিয়ে নিজের জীবনের সকল স্বপ্নগুলো পূরণ করুন! 

৮. দ্য ম্যাজিক অব থিংকিং বিগ — ডেভিড জে. শ্বার্টজ : 

বাংলায় এর ভাবানুবাদ হচ্ছে বড় স্বপ্নের বড় জাদু! কোনো কোনো সময় এটিকে উচ্চকাঙ্ক্ষার ম্যাজিক বলে অ্যাখায়িত করা হয়। 

সোজা বাংলায় বললে লেখক তার এই বইয়ে বড়লোক হওয়ার অনেকগুলো ফর্মুলা দেখিয়েছেন। প্রত্যেকটি মানুষ বড় হতে চায়, ধনী হতে চায়। কেউই গরীব থাকতে চায় না। সকলে চায় সফল হতে, কেউই ব্যর্থ হতে চায় না। এটা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আর এর জন্য লেখক এই বইয়ে এমনকিছু তথ্য উল্লেখ করেছেন, যেটা অনুসরণ করলে হয়তো আপনি আপনার জীবনে নতুন সূচনা করতে পারবেন। তাই মজা করে যদি বলা হয়, আপনি যদি বড়লোক হতে চান, তাহলে এই বইটি একবার পড়ে যান! 

৯. রোড টু সাকসেস — নেপোলিয়ন হিল : 

লেখক এই বইয়ে সফলতা অর্জনের চেয়ে সফলতা অর্জনের জন্য দিক নির্ধারণ করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। লেখক পুরো বিষয়টিকে বিলবোর্ডের জিপিএস সিস্টেমের সাথে তুলনা করেছেন। 

ধরুন, আপনি রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন এবং গাড়ি নিয়ে চলছেন। কিন্তু পরবর্তী রাস্তায় কি আছে কিংবা এটার প্রকৃতি কেমন হবে সেটার সম্পর্কে জানতে না পারাটাই কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক! কিন্তু গন্তব্যে সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে পৌঁছাতে হলে সব রাস্তা সম্পর্কে ধারণা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। আর এই ক্ষেত্রে জিপিএস ই আপনাকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে একজন গাইড এর ভূমিকা পালন করবে। সকল রাস্তাগুলো সম্পর্কে আপনাকে একটি আগাম ধারণা দিবে। এই কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য, জিপিএস এর মতো আপনিও আপনার জীবনের পরিকল্পনার স্থানাঙ্কগুলো নির্ধারণ করুন। 

১০. ডোপামিন ডিটক্স – থিবো মেরিস 

বইটি সম্পর্কে বলার আগে, চলুন ডোপামিন সম্পর্কে আগে জেনে আসি। ডোপামিন মূলত মানব শরীরে উৎপাদিত একটি হরমোনের নাম যা মানুষের মস্তিষ্ক থেকে ক্ষরিত হয়। আমাদের দেহের সকল প্রকার আনন্দ, উদ্দীপনা, সুখ, ভালো লাগার অনুভূতির জন্য ডোপামিন হরমোন দায়ী।  তাই বুঝতে হবে, আমাদের সকল ভালো লাগার অনুভূতির পিছনে ডোপামিন হরমোন কাজ করে। 

এখন থিবো মেরিস এই বইটিতে কি বার্তাটি দিয়েছে চলুন সেটা দেখে আসি : লেখক মূলত এটাই বুঝাতে চেয়েছিলেন যে আমাদের কোন ধরণের কাজ ডেডিকেশন নিয়ে করা উচিত এর ফলে আমাদের মনে স্বয়ংক্রিয় ভাবে মনোযোগ তৈরি হবে। শরীরে ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হবে। ঐ কাজটি করতে গিয়ে আনন্দ অনুভূতি তৈরি হবে। পরবর্তীতে সেই কাজগুলো করতে গেলে কয়েকশো গুণ উৎসাহ নিয়ে করা হবে । আর সেই কাজগুলো অবশ্যই এমন হতে হবে যেগুলো আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবিকের অর্থে অনেক জড়িত এবং জীবনে উন্নতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে বুঝতেই পারছেন লেখক এই বইয়ে ডোপামিন হরমোনের যথার্থ ব্যবহারের গুরত্ব আবশ্যিকভাবে তুলে ধরেছেন। 

লেখক মূলত পাঠকদের এটাই বার্তা দিতে চেয়েছিলেন যে সঠিক কাজে যেন আমাদের শরীরের ডোপামিন হরমোনের সঠিক ব্যবহার হয়। কর্মঘন্টা ও সময়ের যেন অপচয় না হোক। মানুষ যেন সময়ের যথাযথ ব্যবহার করে। 

এগুলোই ছিলো সেরা ১০ টি বই যেটা আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি। আশা করি এসকল বইগুলো আপনার জীবনে পরিবর্তন ঘটাতে অনেক সাহায্য করবে। তাত্ত্বিক অর্থে বই একটি জড় বস্তু কিন্তু এই জড় বস্তু আপনার, আমার, সকলের জীবনে নিরব বন্ধু হিসেবে কাজ করছে, নিরবে আপনার পাশে থাকছে। তাই বইকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না! 

 

আরে ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

 

লেখিকা 

অশীন বিনতে জামাল 

ইন্টার্ন

কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE