টাইম ট্রাভেল নিয়ে মানুষের ভাবনার শেষ নেই। একবার ভাবুন তো আপনি ভবিষ্যতের সব কিছু বর্তমানে থেকেই দেখতে পাচ্ছেন। কিংবা আপনি অতীতের কোনো এক সময়ে চলে গেছেন! এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এটাও কি সম্ভব? কম বেশি সবার মাঝেই এই অনুভূতিটি কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিজ্ঞান এ বিষয়ে কি বলে।
টাইম ট্রাভেল কি?
টাইম ট্রাভেল বা সময় যাত্রা বলতে বুঝায় বর্তমান সময়ে থেকে অতীত অথবা ভবিষ্যতের কোনো সময়ে চলে যাওয়া।অর্থাৎ আপনি বর্তমানে একটি স্থানে আছেন আবার একই সাথে অতীত অথবা ভবিষ্যতের কোনো সময়ে আছেন।বিষয়টি বেশ জটিল।ইন্টারস্টেলার, ব্যাক টু দা ফিউচার সিনেমা হয়তো অনেকেই দেখে থাকবেন।এ থেকেই বুঝা যায় টাইম ট্রাভেল নিয়ে মানুষের আগ্রহ কতটা গভীর। অনেকেই মনে করেন এটি শুধুই একটি গল্প কাহিনী।এই টাইম ট্রাভেল এর ধারনা টি সর্বপ্রথম “দা টাইম মেশিন” উপন্যাসের মাধ্যমে সবার সামনে আসে। পূর্বে এই সময় যাত্রাকে শুধুই একটি সায়েন্স ফিকশন মনে করা হতো। তবে সময় যত পেরিয়েছে বিজ্ঞানীরা তত এই বিষয়টিকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে গেছেন। অনেকের মতে এই সময় যাত্রা সত্যিকার অর্থেই সম্ভব।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে সময় যাত্রা:
প্রাচীন মহাকাব্য বা লোকগল্পে টাইম ট্রাভেল নিয়ে অনেক কাহিনী, ঘটনা প্রচলিত ছিল। বিজ্ঞান বলছে সময় যাত্রা সম্ভব। তবে এটি সায়েন্স ফিকশন কিংবা সিনেমা,গল্প কাহিনীর মত নয়। অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত গনিতবিদ কুর্ট গডেল ম্যাথমেটিকস এর মাধ্যমে দেখিয়েছেন মহাবিশ্বে কিছু ক্লোজ টাইমলাইট কার্ভ থাকার সম্ভাবনা।যা নির্দেশ করে সময় ভ্রমণও সম্ভব তবে বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন মনে করতেন পৃথিবীর সব স্থানে সময় প্রবাহের হার সমান। তবে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এটির বিরোধিতা করে বলেন, মহাবিশ্বের সব স্থানে সময় প্রবাহ এক নয়। যা ঘটে গেছে তা অন্য সবার জন্য অতীত নাও হতে পারে।আইন্সটাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি তত্ত্ব প্রকাশের পর সময় সম্পর্কে সবার ধারনায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়। কোনো ব্যক্তিকে যদি এমন একটি মেশিনে বা যানে বসিয়ে দেওয়া হয় যেটি আলোর গতিতে ছুটতে পারে,তাহলে সে পুরো বিশ্বের এক পাশ থেকে অন্য পাশ ভ্রমন করে আগের জায়গায় ফিরে আসলে দেখা যাবে অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু ওই ব্যক্তির মনে হবে অল্প কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে।এভাবেই আইন্সটাইন টাইম ট্রাভেল এর থিওরি বিশ্লেষণ করেছেন। এই থিওরি তে ব্ল্যাকহোল ও ওয়ার্ম হোলের অনেক গভীর কানেকশন রয়েছে। ব্ল্যাকহোল হলো তারার এমন একটি অবস্থা যেখানে ভর একটি বিন্দুতে এসে পৌছায়।যাফ ফলে স্থান,সময় এর মাত্রা অসীম হয়ে যায়। ব্ল্যাকহোলে আলো প্রবেশ করলেও আর বের হয়ে আসতে পারে না। আইন্সটাইনের থিওরি অব জেনারেল রিলেটিভিটি অনুযায়ী ভর যত বেশি সময় তত ধীর হবে। তাই কোনো ব্যক্তি যদি মহাকাশ যান নিয়ে ব্ল্যাকহোলের আশেপাশে ভ্রমন করতে থাকে আর অন্য একটি যান যদি পৃথিবীর চারদিকে ভ্রমন করতে থাকে তাহলে ব্ল্যাকহোল ভ্রমনকারীর বয়স পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা ব্যক্তির বয়সের অর্ধেক হবে।
টাইম ট্রাভেল কি বাস্তবে সম্ভব?
টাইম ট্রাভেল এর সাথে ওয়ার্মহোল ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। স্পেস বা মহাশূন্যের পথ সমতল নয়।আলো যখন মহাশূন্যের মধ্য দিয়ে যায় তখন একটি বাকানো পথে চলতে বাধ্য হয়। তবে এই বাকা পথের চাইতেও একটি সংক্ষিপ্ত রাস্তা আছে। এটিই ওয়ার্মহোল। ওয়ার্মহোল কে আইনস্টাইন রোজেন ব্রিজ নামেও ডাকা হয়।সৌরজগত থেকে আলফা সেন্ট্রাইটে আলোর গতিতে যেতে চাইলে সময় লাগবে ৪.৩ বছর।ব্যক্তির যেহেতু ভর আছে তাই আলোর গতিতে ভ্রমণ সম্ভব নয়। তবে ওয়ার্মহোল এর মাধ্যমে সহজ রাস্তায় আলফা সেন্ট্রাইটে যাওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয় একই সাথে আবার সৌরজগতেও ফিরে আসা যাবে। অর্থাৎ অতীতেও আসা সম্ভব আবার ভবিষ্যতেও যাওয়া সম্ভব।টাইম ট্রাভেল খুবই জটিল একটি বিষয়। এটিকে প্রকৃতি বিরোধীও বলা যায়।আইন্সটাইন তার থিওরিতে যেসব বিশেষ শর্ত দিয়েছেন তা স্টিফেন হকিংয়ের কোয়ান্টাম তত্ত্ব সমর্থন করছে না। তবে আইন্সটাইন ও স্টিফেন হকিংয়ের মত অনুযায়ী ওয়ার্মহোল বাস্তবে পাওয়া সম্ভব হলে টাইম ট্রাভেল করাও সম্ভব হবে। তাই বলা যায় বিজ্ঞানের ধারনা অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল সম্ভব। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এর জন্য চাই আলোর গতিতে চলতে পারা একটি মহাকাশ যান।
সময় যাত্রা নিয়ে বিজ্ঞানীরা রাত দিন একাকার করে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাচ্ছেন, তবে প্রকৃত পক্ষে টাইম ট্রাভেল বা সময় যাত্রা সম্ভব হবে কি হবে না এটি সময়ই বলে দিবে।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন
লেখক
পিয়াস মাহমুদ
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE