1. Scenic view of a bustling street in Bangladesh, showcasing vibrant culture and local travel experiences.

ভ্রমণ আমাদের মানব-জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নতুন জায়গা ভ্রমনের মাধ‍্যমে, বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি বোঝা যায়, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, এবং এসব আমাদের মানসিক প্রশান্তি দেয়। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, আমাদের এই ভ্রমণ প্রকৃতির ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে?? প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প‍্যাকেট, খাবারের প্যাকেট, গাড়ির ধোঁয়া এসবই ধীরে ধীরে পরিবেশের নানান ধরনের ক্ষতি করছে। অথচ একটু সচেতনতার মাধ্যমেই আমরা পরিবেশবান্ধবভাবে ভ্রমণ করতে পারি। আজকের ব্লগে আমি গল্পের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের নতুন দিগন্ত বিষয়টি ফুটিয়ে তলব।

একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণের গল্প:

মিমিদের স্কুল থেকে একদিন একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণের আয়োজন করা হলো। গন্তব্য ছিল সুন্দরবন, যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অনেক দুর্লভ প্রাণী বাস করে।

সকালবেলা স্কুল থেকে বাসে করে রওনা দিল সবাই। মিমি, মনিকা, আবির, মারিয়া, জান্নাত, সুমাইয়া, আর রকি। তারা নতুন জায়গায় ভ্রমণ আর নতুন নতুন অভিজ্ঞতার জন‍্য খুবই উত্তেজিত ছিল। বাসের মধ্যেই সবাই গান আর আড্ডায় জমে উঠল। তাদের শিক্ষক বাসে ওঠার পর বললেন, এই ভ্রমণ শুধু আনন্দের জন্য নয়, আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে জানারও একটি সুযোগ। তাই সবাই সাবধান থাকবে, প্লাস্টিক যেখানে-সেখানে ফেলবে না, প্রকৃতির ক্ষতি করবে না। এবং স্থানীয় মানুষদের সম্মান করবে।

দীর্ঘ সফরের পর তারা অবশেষে সুন্দরবনে পৌঁছাল। সুন্দরবন পৌছানোর পর তারা ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে বের হয়ে পড়ল ঘুরাঘুরির জন্য। তারা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকায় করে গভীর বনে প্রবেশ করল। চারপাশে শুধু সবুজের সমারোহ, কোথাও দূরে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। সবাই মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মিমিরা যা দেখল, তাতে তারা হতবাক হয়ে গেল। নদীর ধারে প্রচুর প্লাস্টিক বোতল, চিপসের প্যাকেট, খাবারের মোড়ক পড়ে আছে! “এতো সুন্দর জায়গা, অথচ মানুষ এভাবে নোংরা করে রেখেছে!” মনিকা ক্ষোভ নিয়ে কথাটা বলল।

শিক্ষক দুঃখের সঙ্গে বললেন, “এটাই হলো অসচেতন পর্যটনের কুপ্রভাব।”

এমন সময় জান্নাত ও রকিকে দেখা গেল চিপস খেয়ে খালি প্যাকেট ফেলে দিতে যাচ্ছে! মিমি সাথে সাথে তাদের থামিয়ে বলল, “তোমরা কী করছ?? আমরাই যদি যেখানে -সেখানে এমন করে প্লাস্টিক ফেলি, তাহলে অন্যদের কী করে বলব??”

রকি বলল, “আরে, একটা প্যাকেট ফেললে কী এমন হবে??”

আবির গম্ভীর হয়ে বলল, “একটা প্যাকেট তুমি ফেলছ, আরেকটা কেউ ফেলবে। এভাবেই তো পরিবেশ নোংরা হচ্ছে! আমাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।”

তাদের কথা শুনে জান্নাত আর রকি লজ্জিত হলো। তারা তাদের পড়ে থাকা চিপসের প‍্যাকেট টা কুড়িয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলল। তখনি মারিয়া বলল, “আমরা  নিজেরাই যদি এই প্লাস্টিকগুলো পরিষ্কার করি, তাহলে অন্তত আমাদের কারণে পরিবেশ একটু ভালো হবে!” তার কথা শুনে বেশিরভাগই রাজি হয়ে গেল। কিন্তু কয়েকজন বন্ধু হাসতে লাগল। বলল, “এইটুকু ময়লা তাতে কী হয়! আমরা তো এই ময়লা ফেলিনি, এটা আমাদের দায়িত্বও না।”

সুমাইয়া জবাব দিল, “প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হলে দোষারোপ না করে কাজ করতে হয়!”

মিমি বলল, “আমরা যদি শুধু নিজেদের ভালোটা দেখি, তাহলে পৃথিবী আরও নোংরা হয়ে যাবে। বরং আমরা ভালো কাজের শুরুটা করি।”

শিক্ষকরা গর্বিত হয়ে তাদের উৎসাহ দিলেন। তারা গ্লাভস পরে যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে লাগল। স্থানীয় গাইড অবাক হয়ে বললেন, বেশিরভাগ পর্যটক শুধু ভোগ করতে আসে, কেউ ভাবেও না পরিবেশের কথা। তোমাদের দেখে আশা জাগছে! যারা প্রথমে হাসছিল, তারাও এসে সাহায্য করল। শেষে সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করল-ভবিষ্যতে কখনো প্রকৃতির ক্ষতি করবে না।

পরের দিন সকালে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলল। জানতে পারল, পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, জীবজন্তু হুমকির মুখে পড়ছে। তখন মিমিদের শিক্ষক বললেন, “আমরা যদি সবাই দায়িত্বশীল পর্যটক হই, তাহলে প্রকৃতি আমাদের প্রতিদান দেবে।”

টেকসই পর্যটন কেন জরুরি??

প্রকৃতিকে আমরা যত্ন না নিলে একদিন এর সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে। টেকসই পর্যটনের মাধ্যমে আমরা-

  1. প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি।
  2. বন্যপ্রাণীদেরকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।
  3. স্থানীয় জনগণের জীবিকা রক্ষা করতে পারি।
  4. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর এবং সুস্থ পরিবেশ রেখে যেতে পারি।

পরিবেশবান্ধব পর্যটনের কিছু উপায়:

  1. প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে নিজের সঙ্গে পুনঃব্যবহারযোগ্য পানির বোতল ও ব্যাগ রাখতে পারি।
  2. আমাদের আশ-পাশ পরিষ্কার রাখতে পারি। যেখানে যাচ্ছি, সেখানে ময়লা ফেলার অভ্যাস বাদ দিতে পারি।
  3. স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হবে এবং স্থানীয় মানুষদের সাথে সদাচরণ করতে হবে।
  4. প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করা যাবে না, গাছের ডাল ভাঙা বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করা এড়িয়ে চলতে হবে।

মিমিদের এই ভ্রমণ শুধু আনন্দের জন্য ছিল না, বরং তারা অনেক কিছু শিখেছে। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হলে শুধু উপভোগ করাই যথেষ্ট নয়, তাকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আমাদের উচিত টেকসই পর্যটন চর্চা করা এবং প্রকৃতিকে ভালোবাসার মাধ্যমে রক্ষা করা। যদি আমরা সচেতনভাবে ভ্রমণ করি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই সুন্দর পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। টেকসই পর্যটন চর্চা করলে আমরা যেমন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারব, তেমনি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও সুস্থ পৃথিবী রেখে যেতে পারব।

 

তাই এবার থেকে কোথাও ভ্রমণে গেলে আমাদের মনে রাখতে হবে যদি আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি, তবে প্রকৃতিও আমাদের ভালোবাসবে!!

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন 

 

লেখিকা,

জাকিয়া আক্তার মিমি

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE