বাংলা সাহিত্যের আকাশে টেনিদা যেন এক উজ্জ্বল ধ্রুবতারা; যার আলো কখনো নিভে না। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্ট এই চরিত্র শুধু গল্পের পাতা নয়, বাঙালির হৃদয়েও স্থায়ী বাসা বেঁধেছে। টেনিদা মানে নিখাদ হাসি, দুরন্ত কল্পনা আর বন্ধুত্বের এক অবিস্মরণীয় মিশ্রণ। একাধারে কিশোর সাহিত্য এবং হাস্যরসের অমর সৃষ্টি, টেনিদা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আনন্দের রঙে রাঙিয়ে দেয়।

টেনিদার আসল নাম ভোলা ময়রা, কিন্তু কে তা মনে রাখে! চুটকি মেরে সবাই তাকে ডাকে টেনিদা। পটলডাঙার এই রাজা শুধু বন্ধুত্বের আড্ডা জমায় না, নিজের স্বতন্ত্র ভাষা ও কাণ্ডকারখানায় গোটা পাড়ার মেজাজই বদলে দেয়। তাঁর হাস্যরসের দুনিয়ায় এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যা স্বপ্নেও কখনো ভাবা যায় না। টেনিদা প্রায়শই কিছু নতুন নতুন শব্দ তৈরি করেন, যেমন “ডি-গনফ্যাঁ” বা “ম্যাগ্নাম-ফ্যাঃ” এইসব শব্দের মধ্যে অদ্ভুত একটি মজা থাকে, যা পড়তে পড়তে আপনি হেসে ফেলবেন।

তবে, টেনিদা একা নন। তার সঙ্গী “চাটুজ্জ্যে বাহিনী” ছাড়া গল্পের মজা অসম্পূর্ণ। কাবলেশ, হাবুল, প্যালা; এই চরিত্রগুলি একে অপরকে সম্পূরক। তাদের হাস্যকর ঘটনা ও অদ্ভুত প্রক্রিয়া কখনো একে অপরকে সাহায্য করে, কখনো বা হাসির খোরাক জোগায়। টেনিদা এবং তার দল একত্রে নানা রকম মজার কাণ্ড ঘটায়। তাদের খুনসুটি, মজার সংলাপ, আর দুঃসাহসিক অভিযানের গল্পগুলো একবার শুরু করলে শেষ না করে পারা যায় না।

যেমন একবার তারা সিংহল অরণ্যে অভিযান করতে গিয়েছিল। সেখানকার নানা রহস্যময় ঘটনা তাদের চমকিত করেছিল, কিন্তু সবচেয়ে বেশি মনে দাগ কাটে যখন টেনিদা একা একটি ভূতুড়ে পাথরের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল, “হুঁ, ভূতের সাহসও কম না, কিন্তু আমার তো কিছুই হবে না কারণ আমি তো টেনিদা!” একেই বলে, সাহসী হাস্যরস! এরকম মুহূর্তগুলোই টেনিদার গল্পকে চিরকাল জীবন্ত করে রাখে। টেনিদা যেখানে যান, হাসি ও আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

টেনিদার নেতৃত্বে চাটুজ্জ্যে বাহিনী যেমন দুঃসাহসিক কাজ করে, তেমনি তাদের অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা এবং চিন্তার বহির্বর্তী দিকও আমাদেরকে হাসির ঢেউয়ে ভাসিয়ে দেয়। যেমন, একবার তারা বন্ধুর জন্য একটি অদ্ভুত উপহার তৈরি করেছিল একটি রোবট যেটি টেনিদা নিজেই বানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই রোবট কি কোনো কাজে আসল? না, বরং এটি তাদের জন্য আরও এক হাস্যকর ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়, যার শেষে টেনিদা বলে, “এটা তো ঠিক, কিন্তু বন্ধুর জন্য এই উপহার তো ঠিক ছিল না!”

যেখানে টেনিদা থাকে, সেখানে হাসি আর আনন্দের কোনো শেষ নেই। তাঁর সঙ্গীরা কখনো মজা করে, কখনো মিষ্টি গালাগালি, আবার কখনো বা একে অপরকে অদ্ভুত সব কাজের জন্য দায়ী করে। তবে, সত্যি কথা বলতে, টেনিদার গল্পের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার সজীবতা এবং অসীম কল্পনা শক্তি। প্রতিটি গল্পেই নতুন কিছু শিখতে হয়, সাথে হাসি তো আছেই!

এমনকি তার চ্যাটুজ্জ্যে বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো পরিস্থিতিতে হাস্যকর গল্পের অংশ হয়ে ওঠে। হাবুলের ভোঁতা কথা বলার ভঙ্গি, কাবলেশের নানান ভয়ঙ্কর পরামর্শ, প্যালার হোস্টেলে কাটানো দিন এসব গল্প কখনো ভুলে যাওয়া যায় না। তারা একে অপরের চরিত্রে অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড ঘটিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দেয়, হাসি কখনো থামে না।

টেনিদা মূলত আমাদের শৈশবের এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর গল্পের মাধুর্যে আমরা একে অপরকে হাসি উপহার দিয়ে আরও ভালো বন্ধু হয়ে উঠি। টেনিদা আমাদের শেখায়, কিভাবে জীবনকে হাস্যরসে উপভোগ করা যায়। যেহেতু, জীবন কখনো একরকম থাকে না, তাই আমাদেরও কখনো মনের সীমানা খুলে হাসতে হবে এবং টেনিদা সে পথটাই দেখিয়েছে।

এক কথায়, টেনিদা এক অসাধারণ চরিত্র, যার হাস্যরসের মধ্যে মানবতা, বন্ধুত্ব আর কল্পনার দিগন্ত বিরাজমান। তার গল্পে হাসির যে ঝরনা প্রবাহিত হয়, তা প্রতিটি পাঠককে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আনন্দের মহাসমুদ্রে, আর সেই সঙ্গে জীবন ও সম্পর্কের মাধুর্য উপলব্ধি করার এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন

লেখক
জেমি সাইলুক
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE