ছোটবেলায় ডোরেমন কার্টুন দেখে নি এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে। বিশেষ করে ২০০০ সাল থেকে এরপরে যাদের জন্ম তাদের কাছে ডোরেমন খুবই জনপ্রিয় একটি কার্টুন। টাইম মেশিন করে নোবিতার কাছে চড়ে আসা বিড়াল রোবট ডোরেমনকে নিজের ভবিষ্যৎ বদলাতে বা নানান রকমের গেজেট ব্যবহার করার জন্য প্রায় সবাই চেয়েছে। তবে ডোরেমনের পেছনের কারিগর সম্পর্কে আমরা কমই জানি। 

ডোরেমন স্রষ্টার নাম ফুজিকো ফুজিও। নাম শুনে যদি মনে করেন ব্যক্তিটি একজন তাহলে আপনি সম্পূর্ণ ভুল! ফুজিকো ফুজিও একজন ব্যক্তি নয়। হিরোশি ফুজিমতো এবং আবিকো এই দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত ফুজিকো ফুজিও। তাঁদেরকে এই নাম দেওয়ার পেছনে কারণ তাঁরা সকল কার্টুন চরিত্র বা অ্যানিমেশনের গল্প একসাথেই বানাতেন। তাঁদের গল্পগুলো প্রকাশিত হতো ফুজিকো ফুজিও ছদ্মনামে। তবে ডোরেমন চরিত্রটি ফুজিমতো একাই সৃষ্টি করেছিল ফুজিকো ফুজিও ছদ্মনামে।  চলুন আজকে আমরা আরো জানবো ফুজিকো ফুজিও সম্পর্কে।

ফুজিকো ফুজিওর গল্প: ফুজিকো ফুজিও ছদ্মনামের পেছনে থাকা ফুজিমতোর জন্ম ১৯৩৩ সালের ১ ডিসেম্বর এবং আবিকোর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১০ই মার্চ। ফুজিকোর সাথে আবিকোর পরিচয় স্কুলে থাকাকালিন। স্কুলে থাকাকালিন একদিন আবিকো ফুজিকোর ড্রয়িং দেখেন এবং সেই ড্রইং তার খুব পছন্দ হয়। যার ফলে আবিকো ফুজিকোকে প্রস্তাব দেন একসাথে কাজ করার। এরপর তারা একসাথে কাজ করা শুরু করেন। তবে তাঁরা নিজেদের কাজ খারাপ হচ্ছে মনে করে স্কুলের বাকিদের এগুলো দেখাতেন না। মাঙ্গা আর্টিস্ট ওসামু  ওসামু তেজুকাকে তাঁরা গুরু মানতেন এবং তাঁকে অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করে তাঁদের ড্রয়িংগুলো করতেন। ১৯৫১ সাল, তাঁরা একসাথে মাঙ্গা কমিক লেখা শুরু করেন। এগুলো বিক্রি করে তাঁরা যা উপার্জন করতেন, তা তাঁরা দুইভাগ করে নিতেন। তাঁদের প্রথম প্রকাশিত কমিকের নাম ছিল তামা-চেন। তবে তাঁদের চলার পথে এসেছিল বাঁধা। কমিক বিক্রি করে এত টাকা না পাওয়ায় তাদেরকে বেছে নিতে হয়েছিল চাকরির পথ। যাহোক, আবিকো চাকরি চালিয়ে গেলেও ফুজিমতো চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ মেশিনে হাত আটকে সে গুরুত্বর আহত হয়। যার ফলে চাকরি ছাড়তে হয়। 

এরপর ফুজিমতো এক সংবাদপত্রের কমিক আঁকার কাজ শুরু করেন। এই কাজে তাকে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে সাহায্য করতেন আবিকো। কিন্তু এই সময়ে তাঁরা শুনেন দু:সংবাদ। তাঁদের একটি কমিকের এনিমেটেড সিরিজ বের হওয়ার কথা ছিল এবং তা কোনো এক কারণে ব্যান করে দেওয়া হয়।  কিন্তু দু:খের পরেই আসে আশার আলো। সেই দু:খের ঘটনার পরেই তাঁদের লেখা কমিক উতোপিয়া তুমুলভাবে জাপানে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সেই থেকেই তাদের সফলতার গল্প শুরু। ১৯৫৪ সালে তাঁরা স্থানান্তরিত হোন জাপানের টোকিওতে। সেখানে তাঁরা “নিউ মাঙ্গা পার্টি” নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। ফুজিমতো এবং আবিকো একসাথে রচনা করেন: লিটেল গোস্ট কিউ তারো, জিরোকিচি এবং পারমেনসহ আরো অনেক মাঙ্গা কমিক। ১৯৬৮ সালের পর ফুজিমতো বাচ্চাদের কমিক বানানো শুরু করেন এবং আবিকো বড়দের। 

ফুজিমতো তৈরি করেন ডোরেমন, পোকোয়ান, মোজাকো, পারমেনসহ আরো অনেক কমিক এবং আবিকো তৈরি করেন নিনজা হাট্টোরি, দ্যা ব্ল্যাক স্লেইসমেন, আল্ট্রা বিসহ আরো অনেক মাঙ্গা কমিক।

১৯৮৭ সালে ফুজিমতো এবং আবিকো তাঁদের এই লম্বা পার্টনারশিপের ইতি ঘটান।  এরপর তাঁরা নিজেদের আলাদা কোম্পানি খুলেন। তবে ফুজিকো ফুজিও ছদ্মনামটা কিন্তু তাঁরা ছাড়েন নি। ফুজিমতো ফুজিকো এফ ফুজিও নামে কাজ চালিয়ে যান এবং আবিকো ফুজিকো ফুজিও এ নামে। 

ডোরেমন সৃষ্টির গল্প: টাইম মেশিনে চড়ে এসে নোবিতার ড্রয়ার থেকে বের হওয়া ডোরেমনকে প্রায় সবাই চিনে। এই ডোরেমনের শুরু ১৯৬৯ সালে। ১৯৬৮ সালের পরে ফুজিমতো এবং আবিকো আলাদা আলাদা মাঙ্গা কমিক বানানো শুরু করেন। যেখানে ফুজিমতো বাচ্চাদের মাঙ্গা বানানো শুরু করেন এবং বানিয়ে ফেলেন সারা বিশ্বে জনপ্রিয় চরিত্র ডোরেমন। এই চরিত্রের ভাবনা ফুজিমতোর আসে তাঁর মেয়ের খেলনা থেকে। তাছাড়া তাঁরা বাসার পাশে ২ টা বিড়াল ঝগড়া করছিল। সেখান থেকে তিনি ভাবেন একটা বিড়াল রোবট বানাবেন যে গেজেট দিয়ে সবাইকে সাহায্য করবে এবং যাকে বানানো হবে ভবিষ্যতে। ধারণা করা হয়, গল্পে টাইম মেশিন সংযুক্ত করার আইডিয়াটা ফুজিমতোর মাথায় এসেছিল তারই এক শিক্ষার্থী থেকে যিনি সময় সম্পর্কে খুব আগ্রহী ছিলেন। তিনি নোবিতা চরিত্রের মধ্যে তিনি এক অলস কিন্তু ভালো মানুষের চরিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। ডোরেমন এবং নোবিতার বন্ধুত্বর গল্প মাঙ্গাটিকে করে তুলেছিল জনপ্রিয়। পরে ডোরেমন শুধু মাঙ্গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি রূপান্তরিত হয় জনপ্রিয় কার্টুনে। আজও একবিংশ শতাব্দীতে সেই বিংশ শতাব্দীতে তৈরি হওয়া ডোরেমনের গল্প তুমুল জনপ্রিয়। ডোরেমনের গল্প অনুযায়ী ডোরেমনের জন্ম ২২শ শতাব্দীতে। কে বলতে পারে, হয়তোবা ২২শ শতাব্দীতে ফুজিকো ফুজিওর মতো অসম্ভব মেধাবী ব্যক্তি হয়তো সত্যিকারের এমনই এক বিড়াল রোবট তৈরি করে ফেললেন যা নাম হবে ডোরেমন।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন 

লেখক

প্রত্যয় কান্তি দাশ

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE