Youth School for Social Entrepreneurs একটি অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেটি তরুন এবং   যুবসমাজের বিভিন্ন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে থাকে। YSSE প্রেজেন্টস “Behind the Journey” শো তে তুলে ধরা হয় অসাধারণ ব্যক্তিত্বদের সাফল্যগাঁথা, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রের মধ্যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। সিজন ১-এ আমরা আপনাদের সাথে ১০০জন সফল ব্যক্তির অসাধারণ জার্নি শেয়ার করেছি। এই সিরিজের ধারাবাহিকতায়, সিজন ২- এর ১১ম পর্বে আজ আমরা শুনব নন্দিতা সুরক্ষা-র প্রতিষ্ঠাতা তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি-এর অনুপ্রেরণামূলক গল্প।
নন্দিতা সুরক্ষা—একটি নারীদের নেতৃত্বাধীন সংগঠন, যা ফরিদপুরের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ক্ষমতায়ন করছে। তাহিয়াতুল জান্নাত রেমির নেতৃত্বে এই সংগঠনটি ফরিদপুরের পিছিয়ে পড়া নারী ও শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে তিনি ‘হাসিমুখ পাঠশালা’ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে গরিব ও অসহায় শিশুদের জন্য মানসিক উন্নয়ন, নৈতিক শিক্ষা এবং শারীরিক পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দেওয়া হয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্যোগ এবং সমাজ পরিবর্তনের প্রতি অসীম উৎসাহ তাকে পুরস্কৃত করেছে ‘ফোর্সেস অফ নেচার অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ এবং ‘ইনস্পায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ এর মতো সম্মানজনক পুরস্কারে।
আজকের এই সাক্ষাৎকারে আমরা শুনবো, কীভাবে একটি ছোট উদ্যোগ থেকে শুরু করে একটি বড় মাপের সংগঠন গড়ে উঠেছে এবং নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে নন্দিতা সুরক্ষা এখন কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। চলুন শুরু করি!

ছোটবেলায় আপনি কেমন ছিলেন? আপনার জীবনে কে আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন? 

উত্তর: ছোটবেলায় আমি কেমন ছিলাম, সেই গল্পের চেয়ে আমার কাজ শুরু করার প্রেরণা নিয়ে কথা বলাই বেশি প্রাসঙ্গিক মনে করি। সত্যি বলতে, নন্দিতা সুরক্ষা শুরু করার পেছনে কোনো ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণার চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল কিছু সামাজিক ভয়াবহতা। ২০১৬-১৭ সালের দিকে, প্রতিদিন খবরের কাগজ কিংবা ফেসবুক স্ক্রল করলেই দেখা যেত তিন-চার বছরের শিশু যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, এমনকি হত্যার শিকার হচ্ছে। কখনো নিকট আত্মীয়, কখনো বাড়িওয়ালাদের দ্বারা নারীরা হেনস্থার শিকার হচ্ছিল।
এই ঘটনাগুলো আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সেখান থেকেই আমার মনে হয়, সমাজের জন্য এখনই কিছু করা উচিত। সেই চিন্তা থেকেই নন্দিতা সুরক্ষা শুরু করি। তবে একা আমি কখনোই এই প্ল্যাটফর্মকে এত দূর নিয়ে আসতে পারতাম না। আমার সাথে শুরু থেকেই কিছু সমমনা তরুণ-তরুণী ছিল, যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এখনও আছে। তারা নিজেদের কাজের প্রতি এতটাই কমিটেড যে, তাদের দেখেই আমি অনুপ্রাণিত হই।
আমার প্রকৃত অনুপ্রেরণা আমার টিম। তাদের সহায়তা এবং সহযোগিতার কারণেই নন্দিতা সুরক্ষা আজ এতদূর এগিয়ে এসেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমি কখনোই ক্লান্ত হব না।

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়ার পেছনে কী অনুপ্রেরণা ছিল?

উত্তর: সত্যি বলতে, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়ার পেছনে কোনো বিশেষ অনুপ্রেরণা ছিল না। এক কথায় বলতে গেলে, আমি এই বিষয়ে চান্স পেয়েছিলাম, তাই পড়া শুরু করেছিলাম।

আপনার শিক্ষা জীবনের কোন অংশটি আপনার ব্যক্তিত্ব গঠনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে?

উত্তর: আমার শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন ধাপ আমার ব্যক্তিত্ব গঠনে আলাদা প্রভাব রেখেছে। আমি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানা থেকে এস.এস.সি পাশ করেছি। এরপর ইন্টারমিডিয়েটের জন্য ফরিদপুরে এলাম। গ্রাম থেকে শহরে এসে প্রথমে সবকিছু আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছিল। এছাড়া, পরিবারের রেস্ট্রিকশন-এর কারণে বিকেল পাঁচটার পর কখনো বাড়ির বাইরে থাকতে পারতাম না, যা আমার মানসিক গঠনেও প্রভাব ফেলেছিল।
ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করলেও বিষয়টি পড়তে আমার খুব একটা ভালো লাগেনি। তবে লিটারেচারের একজন শিক্ষক আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছিলেন সুন্দর ও সাবলীলভাবে কথা বলার জন্য। যদিও এখনো নিজেকে যথেষ্ট গুছিয়ে কথা বলতে পারি বলে মনে করি না, তবু তার অনুপ্রেরণা আমার কথা বলার দক্ষতা গড়ে তোলার একটি বড় অংশ।
মাস্টার্স করেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসে। এই পর্যায়টি আমার ব্যক্তিত্ব গঠনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, হিউম্যান রাইটস এবং জেন্ডার স্টাডিজ নিয়ে পড়তে আমি দারুণ আগ্রহী ছিলাম এবং প্রতিটি কোর্স গভীরভাবে উপভোগ করেছি। এই সময়টাতে আমি নিজেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং চিন্তাশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। মাস্টার্সের অভিজ্ঞতাগুলো আমার জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়েছে।

নন্দিতা সুরক্ষা নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ার পেছনের গল্প যদি আমাদের দর্শকদের সাথে শেয়ার করতেন- 

উত্তর: নন্দিতা সুরক্ষার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন এটি ছিল একক প্রচেষ্টার ফল। শুরুতে এটি একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল না। মূলত,গুড টাচ এবং ব্যাড টাচ নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে কাজ শুরু করি। তখন বুঝতে পারি যে কাজকে আরও সংগঠিত করতে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। ২০১৮ সালে এটি সাংগঠনিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
শুরুর দিনগুলোতে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন আমার মতোই অনেক সমমনা তরুণ-তরুণী। তারা সবাই সমাজের জন্য, শিশুদের জন্য, এবং নারীদের জন্য কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। তবে নারী হিসেবে এবং তরুণী সহকর্মীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নানা বাধা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
নিরাপদ ও অনিরাপদ স্পর্শ নিয়ে কথা বলা থেকেই শুরু হয়েছিল যাত্রা। এরপর ধীরে ধীরে বিষয়গুলো বিস্তৃত হয়। সেক্সুয়াল হেরাসমেন্ট, রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ রাইট, এবং নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করি। এই প্রক্রিয়ায় আমরা একটি ইউথ কোরাম তৈরি করেছি, যেখানে সমমনা তরুণ-তরুণীরা যুক্ত হয়েছেন। আমরা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করেছি এবং মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছি।
আজ ২০২৪ সালে এসে নন্দিতা সুরক্ষা নতুন নতুন কমিটি তৈরি করছে এবং অল্টারনেটিভ লিডারশিপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুনরা যুক্ত হচ্ছে, এবং আমাদের যাত্রা এখনো অব্যাহত। মানুষের সাপোর্ট এবং আমাদের টিমের কমিটমেন্টই নন্দিতা সুরক্ষার মূল ভিত্তি।

এই সংগঠনের একজন  উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার যাত্রা কেমন ছিল?

উত্তর: আমার যাত্রা খুবই ইন্টারেস্টিং এবং চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি ফরিদপুরে কাজ শুরু করি, যেখানে মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট, এবং পিরিয়ড ট্যাবু নিয়ে ওপেনলি কথা বলার প্রচলন ছিল না। এমনকি শিক্ষকদের সাথেও মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন নিয়ে আলোচনা করা কিংবা মেয়েদের একত্রিত করে সচেতনতার কার্যক্রম পরিচালনা করা ছিল একেবারে নতুন একটি বিষয়।
শুরুর দিকে এই কাজগুলো করতে গিয়ে আমাদের সোশ্যাল বুলিংয়ের মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকে ট্রল করেছে, এমনকি ফেসবুকে আমাদের ছবি দিয়ে ট্রল পেজগুলোতে হেনস্থা করা হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ভুল ধারণাও ছড়িয়ে পড়েছে যে আমরা শুধু নারীদের নিয়ে কাজ করি এবং পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষী। যদিও এটি সম্পূর্ণ ভুল, তবুও আমাদের এই অভিযোগগুলোর সম্মুখীন হতে হয়েছে।
আমার কাজের ধরনও ধীরে ধীরে চ্যালেঞ্জের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথমে শিশুদের নিরাপদ ও অনিরাপদ স্পর্শ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু যেখানেই নতুন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, সেখানেই কাজের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছি। আমরা কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করিনি। বরং যখনই শিশুদের বা নারীদের কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে দেখেছি, সেখানেই সমাধান খুঁজেছি এবং কাজ এগিয়ে নিয়েছি।
এভাবেই, প্রতিটি বাধা এবং চ্যালেঞ্জ থেকে নতুন শিখেছি এবং এগিয়ে গেছি। এই যাত্রা আমাকে শেখার পাশাপাশি সমাজে বাস্তবিক পরিবর্তন আনার সুযোগ দিয়েছে।

আপনার সংগঠন কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, এবং সেগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন?

উত্তর: আমাদের সংগঠন শুরু থেকেই কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এবং তা এখনো চলছে। বিষয়টি এমন না যে আগে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি কিন্তু এখন হচ্ছি না বা পুরনো চ্যালেঞ্জগুলো নতুন করে আসছে না। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জার্নি অনেকটা তৈলাক্ত বাশ বেয়ে ওঠার মতো। অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছি, কিন্তু মাঝে মাঝে আবার পিছিয়ে যাই।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিরাপত্তা। যখন তরুণীসহ অনেক তরুণ-তরুণীকে নিয়ে কাজ করি, তখন সর্বদা নিরাপত্তার চিন্তা ছিল। আমাদের অনেক কাজ, ক্যাম্পেইন, রাতে শেষ করতে হতো। কোনো ধরনের প্রতিবাদ কিংবা কর্মসূচি ঠিকভাবে পালন করা এত সহজ ছিল না, কারণ নিরাপত্তার বিষয়টি সবসময় ছিল। তবে, ১৫-২০ বছর আগে যারা কাজ করতেন তাদের তুলনায়, আজকে আমরা একটু বেশি ওপেন স্পেস এবং নিরাপদ স্পেস পাচ্ছি।
এছাড়া, আমাদের বয়সের কারণে অনেক সময় আমাদের কর্মকাণ্ড এবং লক্ষ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে বলতে হয়। আমরা মূলত ১৪-২৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা, এবং আমাদের কাজ নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, যেগুলোর উত্তর দিতে কখনও কখনও মানসিকভাবে খুব চাপ অনুভূত হয়।
আরেকটা বড় সমস্যা ছিল, আমাদের সংগঠন মূলত ফরিদপুর, বরিশাল এবং রাজবাড়িতে কাজ করে। ঢাকায় বড় কোনো প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের ভলেন্টিয়াররা দাওয়াত পেলেও, ঢাকায় যাওয়া তাদের জন্য সহজ নয়। এটি মূলত মফস্বল থেকে রাজধানীতে কাজ করা এবং দূরত্বের সমস্যার কারণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে আমরা প্রাথমিকভাবে একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার দিকে মনোযোগ দিয়েছি এবং কাজের পরিধি বৃদ্ধি করে নানা সহযোগিতা এবং সহায়তা অব্যাহত রেখেছি।

২০১৮ সালে ফরিদপুর সদরের বান্ধবপল্লী  কলোনিতে অবৈতনিক স্কুল ‘হাসিমুখ পাঠশালা’ গড়ার পেছনের কারণ কী ছিলো?

উত্তর: বান্ধবপল্লী এলাকা আমার বাসা থেকে দৃশ্যমান ছিল। আমি ছাদে গিয়ে ওই এলাকার শিশুদের দেখতে পেতাম। মাঝে মাঝে আমাকে বলা হতো, “ওই দিকে যেয়ো না, কারণ ওরা গালাগালি দিতে পারে বা খারাপ আচরণ করতে পারে।” প্রথমে এমনটা মনে হয়েছিল, কিন্তু যখন আমি তাদের কাছে গিয়ে কথা বলি, আমি কখনও খারাপ আচরণের শিকার হইনি। বরং, তখন আমার মনে হলো, আমাদের এই শিশুদের সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা আছে। তারা আসলে জানে না কীভাবে মানুষের সঙ্গে ভালভাবে আচরণ করতে হয়, কীভাবে শালীনভাবে কথা বলতে হয়।
এদের নিয়ে যে ধারণা ছিল, “ওরা অভদ্র”, তা বাস্তবে সঠিক নয়। তারা শুধু জানে না কিভাবে অন্যদের সাথে আচরণ করতে হয় বা সঠিকভাবে কথা বলতে হয়। আমি হয়তো পুরো সমাজ পরিবর্তন করতে পারব না, কিন্তু এই বান্ধবপল্লী এলাকার শিশুগুলোর জন্য একটি পরিবর্তন আনতে পারব, যাতে তারা শেখে কিভাবে সঠিকভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হয় এবং কিভাবে অন্যদের সাথে সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করতে হয়।
আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল তাদের মানসিক উন্নয়ন, এবং আমরা এই উদ্দেশ্য নিয়ে ‘হাসিমুখ পাঠশালা’ প্রতিষ্ঠা করি। যদিও বর্তমানে স্কুলটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে, তবে আশা করছি জানুয়ারিতে আবার কার্যক্রম শুরু করতে পারব।

যুব সম্পৃক্তি ও গণতন্ত্র প্রকল্পে  (Youth Engagement in Democracy project) আপনি কীভাবে যুক্ত হলেন?

উত্তর: এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ যা তরুণদের জন্য তৈরি হয়েছে, এবং আমি এই প্রকল্পে মূলত মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলাম। করোনাকালীন সময়ে আমি যখন মানবিক কাজগুলোতে যুক্ত ছিলাম, তখন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন থেকে আমাকে মানবিক যোদ্ধা পদক প্রদান করা হয়, যা একটি বিশাল সম্মান ছিল। ওরা ১০ জনকে মানবাধিকার দিবসে এই পদক টি দিয়েছিল।  এই পদক পাওয়ার মাধ্যমে আমার পরিচয় হয় মনজুরুল ভাইয়ের সঙ্গে, যিনি পরে আমাকে Youth Engagement in Democracy প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করান।
এই প্রকল্পটি একাউন্টবিলিটি ল্যাব (নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্র) এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (বাংলাদেশ) এর মাধ্যমে তরুণদের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের প্রসারে কাজ করছে। আমাদের সংগঠনের জন্য এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল, কারণ এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা নেপালে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য যুব সংগঠনগুলোর সঙ্গে নেটওয়ার্কিং গড়তে সক্ষম হয়েছে।
এটি বাংলাদেশের তরুণ সংগঠকদের জন্য একটি অমূল্য সুযোগ এবং আমি মনে করি এই উদ্যোগটির মাধ্যমে আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

নেতৃত্বে আসতে চাওয়া তরুণ নারীদের জন্য আপনার কি পরামর্শ‌ থাকবে?

উত্তর: আমার পরামর্শ হবে, তোমরা নিজেদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলো এবং নিজেদের লক্ষ্য স্পষ্ট করে সামনে এগিয়ে যাও। একটি সুন্দর পৃথিবী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তরুণ নারীদের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের সমাজে নারীদের গুরুত্বকে স্বীকার করা খুব জরুরি। যেমন একটি ঠেলাগাড়ি একটি চাকা ছাড়া এগিয়ে যেতে পারে না, তেমনি সমাজে নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক।
তরুণ নারীরা যদি নেতৃত্বে আসতে চায়, তবে তাদেরকে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। সমতাভিত্তিক, বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই একসাথে কাজ করলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে। নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়, এবং তাই তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করা, সম্মান জানানো এবং তাদের সুযোগ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“নন্দিতা সুরক্ষা” র মতো নারী-নেতৃত্বাধীন সংগঠন কীভাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: “নন্দিতা সুরক্ষা” এর মতো সংগঠনগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমরা সমাজের প্রান্তিক নারীদের এবং শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, বিশেষ করে যাদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত। আমাদের লক্ষ্য তাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে, যাতে তারা নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীনভাবে এগিয়ে নিতে পারে। নারীদের নেতৃত্বে এমন উদ্যোগগুলো নারীদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক। আমি বিশ্বাস করি, যখন নারীরা নেতৃত্ব দেয়, তারা আরও সহানুভূতিশীল, দৃঢ় এবং সমতাভিত্তিক সমাজ গড়তে সক্ষম হয়। এই ধরনের সংগঠনগুলো বাংলাদেশে নারীর অবদানকে আরও গুরুত্ব দেয় এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

নারীর ক্ষমতায়নে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

উত্তর: নারী ক্ষমতায়নে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো নারীদের জন্য আরও বেশি প্রশিক্ষণ, শিক্ষা এবং সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে তারা নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা বুঝতে পারে। পাশাপাশি, আমি প্রান্তিক নারীদের নিয়ে কাজ করে তাদের জীবনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমি বিশ্বাস করি, যদি নারীরা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে, তাহলে সমাজে আসবে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন। তবে, শুধুমাত্র নারীরা একা এই পরিবর্তন আনতে পারবে না; পুরুষদেরও সহায়তা প্রয়োজন। তারা যদি নারীদের সমর্থন দেয় এবং একসাথে কাজ করে, তবে আমাদের সমাজে আরও কার্যকর পরিবর্তন আসবে।

এছাড়াও, নারীদের মানসিকতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যেমন, একটি লাইনে যদি পাঁচজন পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকে এবং আমি সেখানে যাই আমি নারী সেজন্য আশা করব না আমাকে প্রায়োরিটি দেওয়া হোক। বরং, আমি সমানভাবে মূল্যায়িত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকব এবং পুরুষদের সঙ্গে সমান সুযোগে প্রতিযোগিতা করব। এভাবে, নারীরা যেন নিজের ক্ষমতা বুঝে, সমাজে নিজের স্থান তৈরি করতে পারে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Facebook: Nondita Surokkha

এরকম আরো ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন

লেখক,

ফারদিন বিন আব্দুল্লাহ,

ইন্টার্ণ, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,

YSSE