পর্ব-১
সন্ধ্যের পরপরই আমি আর আদিত্য বের হলাম আড্ডা দেওয়ার জন্য, তিশাও আসবে বলেছিলো। আজ আদিত্যকে কেমন যেনো লাগছে, কিছু একটা ভাবছে হয়তো। চত্বরের মোড়ে যেতেই দেখি তিশা চলে এসেছে। চা অর্ডার দিয়ে নদীর ধারে গিয়ে বসলাম তিনজন।
তিশা এবার চতুর্থ বর্ষে কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ছে, আদিত্য পড়ছে ইতিহাসে, আর আমি? হাহা, সেটা না হয় থাক। এমন উড়নচণ্ডী মানুষ দিয়ে কি আর পড়ালেখা হয়। কোনোরকম দর্শনকীর্তি শেষ করলেই এই চঞ্চল হাফ ছেড়ে বাঁচে।
“আদিত্য কি হয়েছে তোর, কেমন মুখে তালা দিয়ে আছিস”,আমি বললাম। আদিত্য মুখ খুললো, “আমি আমাদের বাড়ির চিলেকোঠার বাক্সে একটা কাগজ পেয়েছি।” এতটুকু বলেই আদিত্য থেমে গেলো আর তাড়া দিলো, ” চল এক্ষুনি আমার বাসায়”। আমরাও চললাম একটা রিকশা করে।
ওদের এই জমিদার বাড়িতে যতবার আসি, ততবারই ভাল্লাগে। একটা বাদশাহী ফিল আসে। আদিত্য আমাদের নিয়ে সোজা চলে গেলো ছাদে চিলেকোঠার ঘরে। বাক্স থেকে বের করলো সেই কাগজটা, হাতে নিয়ে দেখলাম ওটা একটা ম্যাপ।
আদিত্য বললো,”এসব কিছু আগে এখানে ছিলো না, এই বাক্স ছিলো না, তাহলে কোত্থেকে আসলো হঠাৎ।” এটা বলেই সে কি একটা ভাবতে ভাবতে নিচে চলে গেলো, সাথে আমরাও গেলাম। গিয়ে থামলো মাঝের একটা রুমে, যেটা কি-না সবসময় তালাবদ্ধ থাকতো। আজ সেটা খোলা।
আদিত্য চেঁচিয়ে ওর মাকে ডাকা শুরু করলো,” মা কে খুলেছে এই দরজা, মা?” আদিত্যের মা ঘর থেকে বের হয়ে জবাব দিলো,” ওটা আমি খুলেছি, আর কতকাল বন্ধ করা থাকবে, বল তো।”
আদিত্যের মুখে শুনেছি, ওর জন্মের পর থেকেই দেখেছে এই রুমটা বন্ধ থাকে, এমনকি তার বাবা এবং বাবার বাবাও এই দরজা বন্ধ দেখেছিলেন। আদিত্যের কোনো এক পূর্বপুরুষের ঘর ছিলো এটা।
তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই এই দরজা বন্ধ থাকতো, কেননা এই ঘর থেকে সকলে পশু-পাখির আওয়াজ পেতো, মাঝে মধ্যে মনে হতো এই ঘরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, আবার কখনো নাকি শুনতো সবাই ঝর্ণার আওয়াজ। এসব অদ্ভুত কাণ্ডের কারণে দরজাটি বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো।
আমরা ঘরের ভিতর চেয়ে দেখলাম ওরকম আরো কয়েকটা বাক্স ওখানে পরে আছে, ওর মা পরিষ্কার করে কিছু বাক্স উপরে চিলেকোঠার ঘরে রেখেছিলো। বাক্সগুলো খুলতে গিয়ে এবার আর ম্যাপ পেলাম না, পেলাম কম্পাস, ছুরি, দড়ি, দিয়াশলাই আর একটা ছোট্ট ডায়েরি।
তিশা বললো, “ডায়েরিটা আমাকে দে, আমি পড়বো।” আমরা রাজি হয়ে তিশাকে দিয়ে দিলাম ডায়েরিটা, আর বাকি সবকিছু রইলো আমার আর আদিত্যের কাছে। আদিত্য বললো,” চঞ্চল, তুই ম্যাপগুলো নিজের কাছে রাখ, বাকি জিনিসগুলো থাকুক এখন আমার কাছে।”
বাসায় এসে কারোরই ঘুম হচ্ছেনা। সবাই আজকের দিনটা নিয়ে ভাবছি। “নাহ, যাই একবার ম্যাপগুলো দেখি।” ম্যাপগুলো দেখে চঞ্চল মাথায় হাত দিয়ে বসলো।
কিভাবে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলোনা, কম্পিউটারে কিছুক্ষণ রিসার্চ করার পর তিশাকে ফোন দিলো,” তুই কি ঘুমাচ্ছিস?” “আর ঘুম, ডায়েরিটা পড়ছি, আমি বোধহয় আরেকটু পর পাগলই হয়ে যাবো।” এবার আদিত্যকে ফোনে কানেক্ট করলাম আর বললাম সকালে উঠে সবাই যেনো দেখা করে নদীর পাড়ে।
সকাল ৯টায় সবাই দেখা করলাম। আদিত্য বললো ও নাকি স্বপ্নে দেখেছে, কয়েকজন মানুষ এসব ছুরি নিয়ে মারামারি করছে। তিশা বললো,” ডায়েরিটা আদিত্যের কোনো এক পূর্বপুরুষের, সে কোনো এক এডভেঞ্চারে গিয়েছিলো এবং সেই অভিজ্ঞতাই এখানে লিখেছে। আমি বললাম,”এই ম্যাপগুলো ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো, এবং এই লেখাগুলো একটা ধাধা যেগুলো ওই জায়গাতে যাওয়ার জন্য, আর এই ম্যাপটা নদীর ওইপারে।
ওরা দুইজন আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”তুই কিভাবে জানলি?” “দেখ, ম্যাপ আছে ৪টা, সবগুলো আলাদা আলাদা নয় বরং একটা জায়গারই ম্যাপ, এগুলো একসাথে করলে বুঝা যায়, এই ম্যাপটা এই নদীর এবং নদীর ওপারে জঙ্গলের মাঝে দিয়ে যেতে হবে।”
তারপর কি হলো জানতে পড়ুন পরবর্তী পর্ব…..
আরো ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন।
মারিয়া আফসা
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE