দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। বেসরকারি পর্যায়ে দেশের প্রথম পূর্নাঙ্গ অ্যাস্ট্রো অবজারভেটরি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য প্রস্তত। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নেতা শাহজাহান মৃধা বেনুর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নির্মিত এই অবজারভেটরির কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।

শ্রীপুরের বাঘের বাজার থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটারের পথ। রাস্তার একদম শেষেই চোখে পড়বে চারতলা একটি ভবন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বাঘের বাজার সংলগ্ন বেনুর ভিটায় প্রায় ৮০ বিঘা জায়গায় অবস্থিত ডমরেটরি, অ্যাস্ট্রো অবজারভেটরি, অ্যাস্ট্রো উঠানসহ এটি হয়ে উঠেছে এক অনন্য স্থাপনা। চারতলার ভবনের উপরে অবজারভেটরির অবস্থান। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপের সাহায্যে রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

পুরো জায়গাটি সবুজে ঘেরা। বিভিন্ন রকমের ফল গাছ চোখে পড়বে। কেন্দ্রটির সামনেই রয়েছে বসার জায়গা। সারি করে সাজানো বেঞ্চ। নিচতলায় কয়েকটি থাকার ঘর। দুইতলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ঘরে বসেন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটির প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান মৃধা বেনু।

এর আগেও দুটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। ১৯৯০ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে এবং অন্যটি নিজ বাসায়।

বেনু অ্যাস্ট্রো অবজারভেটরি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রটি সংবাদকর্মীদের ঘুরে দেখাচ্ছিলেন এবং তারা খুব মনোযোগ সহকারে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি বলেন, মূলত বড় পরিসরে পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করার জন্যই আমাদের এখানে আসা। আগের দুটির তুলনায় এটি আকারে ও আয়তনে বেশ বড়। যারা জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহী তারা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা এখানে পাবে।

 

পূর্ণাঙ্গ এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটিতে সূর্য এবং আকাশ দেখার জন্য বেশ কয়েক রকম টেলিস্কোপ আছে। শক্তিশালী ও উন্নত এই টেলিস্কোপ দেশের অন্য কোথাও নেই। ১৪ ইঞ্চি, ১২ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ, সোলার টেলিস্কোপসহ আরও নানা ধরনের টেলিস্কোপ আছে এখানে।

অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সদস্য মো. ফোরকান টেলিস্কোপগুলো আমাদের দেখালেন। সোলার টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্য দেখলাম। আকাশ মূলত রাতে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। তবে টেলিস্কোপ কীভাবে কাজ করে সেটি তুলে ধরলেন ফোরকান।

ভবিষ্যতে এখানে আরো অত্যাধুনিক ১০০ ইঞ্চি ব্যাসের রিফ্লেক্টর টেলিস্কোপ সংযুক্ত করা হবে। মানমন্দিরে রেডিও টেলিস্কোপ স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান বেনু।

তিনি জানান, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে ১৯৯০ সালে দেশের প্রথম মানমন্দির স্থাপন করেন। যে ক’জন বিজ্ঞান প্রেমী মানুষের হাত ধরে দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয় তাঁদের মধ্যে শাহজাহান মৃধা বেনু অন্যতম। জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম এই পথিকৃৎ বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সকল ঘটনাবলীর গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও উদযাপনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

২০১৯-২২ সালে নির্মিত এই অবজারভেটরির স্বপ্ন তিনি বহুকাল ধরেই লালন করতেন।  এই জ্যোতির্বিদ সবসময় চাইতেন, দেশে এমন একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হোক যেখানে মহাকাশ প্রেমীরা উন্নত বিশ্বের মতো মহাকাশ গবেষণা করার সুযোগ পাবে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন- এদেশের ছেলেমেয়েরাও একদিন NASA, CNSA, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি, কানাডা স্পেস এজেন্সিতে মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করবে।

সম্প্রতি অবজারভেটরিটি পরিদর্শন করেন নাসার সাবেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মোরেনো ভ্যালি কলেজের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক ড. দীপেন ভট্টাচার্য ও মহাকাশ গবেষক ড. মাকসুদা আফরোজ।

 জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি বেনু সাহেবের এমন আন্তরিকতা সত্যিই আমাদের উৎসাহিত করে।

আগামী দিনগুলোতে এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বেশ উপকৃত হবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে এই মহাকাশপ্রেমীর স্বপ্ন সত্যি হবার দারপ্রান্তে। আমরাও এই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নকে লালন করার পাশাপাশি বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করবো।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহীরা এখানে পুরোপুরি গবেষণা করার সুযোগ পাবে। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষকদের অংশগ্রহণে এটি হয়ে উঠবে একটি পূর্নাঙ্গ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র।

অবজারভেটরির প্রতিষ্ঠাতা বেনু আরও বলেন, মহাকাশ গবেষকদের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, গ্রন্থাগার ও থাকার সুব্যবস্থা থাকবে। অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির জন্যও থাকবে নানান সুযোগ সুবিধা। এখানকার অ্যাস্ট্রো উঠানের অপরূপ কারুকার্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য হবে। জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি আর্চারি, মাউন্টেনিয়ারিং ও উড্ডয়ন বিদ্যার প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধাও থাকবে।

একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি দেশের বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি শিল্প ও সংস্কৃতিতেও

 

 পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন। একাধারে তিনি বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

একজন প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশের নিবিড় পর্যবেক্ষক হিসেবে কিশোর বয়স থেকেই বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), প্রকৃতি ও পরিবেশ সংগঠন তরুপল্লবসহ বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে সংগঠনগুলোতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।। প্রায় একযুগ ধরে পরিবেশ বিষয়ক পত্রিকা “প্রকৃতিপত্র” সম্পাদনা করে তিনি প্রতিনিয়ত প্রকৃতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞান ক্লাব অনুসন্ধিৎসু চক্রে’র জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি হিসেবে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

 আরও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

লেখিকা,

ফারিহা আলিফ

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE