মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা এবং সমাজসেবী বিল গেটস দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত “কপ২৮ সম্মেলন” এ বিশ্বের কাছে আহ্বান করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় নতুন নতুন আবিষ্কারে বিনিয়োগ এবং সবার সম্মিলিত উদ্যোগ পারে আগামী প্রজন্মকে সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দিয়ে। তাঁর বক্তব্যের মূল অংশটি থাকছে এই ফিচারে।

 

আট বছর আগে প্যারিস সম্মেলনের মঞ্চে গেটস বিশ্বের উদ্দেশ্যে তিনটি বার্তা দেন;

১. জলবায়ু পরিবর্তন সকলের উচিত গুরুত্বের সাথে দেখা;

২. যদি এই সমস্যার সমাধান করতে হয় তবে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় আনতে হবে;

৩. এই সংক্রান্ত প্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারি, বেসরকারি সকল খাতকে একত্রে কাজ করতে হবে।

 

আট বছর পর গেটস এই সকল প্রতিশ্রুতির বাস্তবিক রূপ দেখতে পান বিভিন্ন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে দিয়ে। গেটস পাঁচটি খাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন, সেসব খাতে কার্বন নিঃসরণ কমে গেলেই এর সুফল পরিলক্ষিত হবে। যদিও ইলেকট্রিক পরিবহন ও পাওয়ার প্ল্যান্টকে কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী করা হয় কিন্তু মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রচুর কার্বন নির্গমন হয়ে থাকে।

 

বর্তমানে স্টিল উৎপাদনে কয়লার পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কার্যকরী জানালার ব্যবহারের কারণে বিল্ডিং হয়ে উঠেছে আরো পরিবেশবান্ধব। পরিবহন খাতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন, স্পোর্টস কার এ এসেছে নতুন ব্যাটারির ব্যবহার যা একবার চার্জ করলে ৬০০মাইল চলতে পারে। কৃষিতে উদ্ভাবিত হচ্ছে উন্নত কীটনাশক যা কম গ্রীনহাউস গ্যাস তৈরি করে। এছাড়াও গেটস তাঁর ‘টেরাপাওয়ার’ এর পাওয়ার প্ল্যান্ট,যা উন্নত নিউক্লিয়ার পাওয়ার এর সুবিধা প্রদান করবে সেটির পরিদর্শনের কথাও তিনি জানান।

 

বিল গেটস তাঁর বক্তব্যে জানান যে আমরা এখনো নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তির সম্পূর্ন সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি সঠিক অবকাঠামোর অভাবে। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় আনতে আরো পদক্ষেপের প্রয়োজন যেমন নবায়নযোগ্য হাইড্রোজেন, কার্বন ক্যাপচার করা কিন্তু এতেও প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিনিয়োগের।

 

প্যারিস সম্মেলনের পর বিল গেটস ২বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেন নবায়নযোগ্য শক্তির প্রযুক্তিতে এবং অন্যান্য সরকার,কোম্পানি, ব্যাক্তিবর্গকে আহ্বান করেন এই খাতে বিনিয়োগের জন্য।

 

গেটস বিশ্বাস করেন জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা এবং কার্বন নির্গমন শূন্যের কোটায় আনতে একটি পথ হলো ‘গ্রীন প্রিমিয়াম’। কিন্তু দুটি কারণে এই পথ অবলম্বন করা জটিল হয়ে পড়েছে।

 

প্রথমত, বিশ্বের এই উষ্ণ আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে হবে মানুষকে আমাদের সাহায্য করতে হবে; আমাদের গুরত্ব দিতে হবে সাব সাহারা আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেইসকল কৃষকদের যাদের ভূমিকা কম কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হয় বেশি। এছাড়াও বিল গেটস তাঁর ‘গেটস ফাউন্ডেশন’ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথভাবে ২০০ মিলিয়ন ডলার, খাদ্য ব্যবস্থায় উদ্ভাবনে বিনিয়োগের কথা বলেন।

 

এখানে তিনি উদাহরণ হিসেবে বিজ্ঞানীদের ভুট্টার ১৬০ টি খরা সহনীয় জাতের উল্লেখ্য করেন যা জিম্বাবুয়েতে সফলভাবে আবাদ করা হয়েছে। এই ভুট্টা CGIAR নামক কৃষি গবেষণা নেটওয়ার্ক দ্বারা উদ্ভাবিত হয়।

 

দ্বিতীয়ত, আমাদের এই কঠিন বাস্তবতা মানতেই হবে যে আমাদের পৃথিবীতে সম্পদ সীমিত, এরই সাথে আরো মানতে হবে যে জলবায়ু পরিবর্তনের মত খাদ্য সংকট,অপুষ্টি এবং সংক্রামক ব্যাধি আমাদের মানব সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি। এই সব হুমকি একে অপরের সাথে জড়িত; যেমন বিরূপ আবহাওয়া শস্য উৎপাদন ব্যাহত করে,এর ফলে অপুষ্টি এবং রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হয়।

 

এই সীমিত সম্পদের পৃথিবীতে এমনটা মনে হতে পারে যে একইসাথে জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং উন্নয়ন হতে পারে না কিন্তু গেটস বলেন, কম কার্বন নিঃসৃত বিশ্বে মানুষ ভালো থাকবে না, যদি না আমরা খাদ্যসঙ্কট, অসুখ এবং মৃত্যুর মত সমস্যার সমাধান করতে পারি।

 

নতুন নতুন উদ্ভাবন পারে আমাদের এই সীমিত সম্পদকে বিবর্ধিত করে তুলতে। এখানে বিল গেটস শিশু মৃত্যুর হার কমার পিছনে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ভূমিকা তুলে আনেন। ১৯৯০ সালে শিশুমৃত্যু হয় প্রায় 12 মিলিয়ন যা ২০০০ সালে কমে দাড়ায় ১০ মিলিয়নে এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা এসে দাড়ায় ৫মিলিয়নে।

 

তিনি টিকা সম্পর্কিত সংস্থা Gavi -এর প্রসঙ্গে বলেন যে, Gavi ১বিলিয়নের বেশি সংখ্যক শিশুকে টিকার আওতায় এনেছে যা শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে এবং বর্তমানে এটি কাজ করে যাচ্ছে জলবায়ু সংবেদনশীল ব্যাধির রোধে। গেটস এই ধরনের সংস্থায় বিনিয়োগের আহ্বান করেন।

 

সর্বশেষে তিনি আলোচনা করেন যে, এই সীমিত সম্পদ ব্যবহারের সময় আমাদের একটি প্রশ্ন মাথায় রাখতে হবে “ এই অর্থ কিভাবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর ও সমুন্নত করবে?” এই প্রশ্নের উত্তর পারবে আমাদের আগামী দশককে আরো উন্নত করতে এবং জলবায়ু বিপর্যয় রোধ করতে।

 

বিল গেটস বলেন- এই নতুন উদ্ভাবনে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা শুধু পৃথিবীকে বাসযোগ্য-ই করে তুলব না, পৃথিবীকে আরো সুন্দর জায়গায় পরিণত করতে পারবো।

 

এরকম আরো অনেক ব্লগ পড়ার জন্য ক্লিক করুন

 

Writer :

নুসরাত জাহান সোনিয়া

ইন্টার্ন,

কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE