বিশ্বের প্রতিটি সেক্টরেই আজ নারীদের জয়জয়কার!

গৎবাঁধা জীবনের বাইরেও যে এক কঠিন পৃথিবী আছে! যেই পৃথিবী নারীদের জন্য উপযোগী নয় বলে মনে করা হয়,ধারণা করা হয়, এসব পুরুষের কাজ। 

ঠিক সে সকল কাজেই কৃতিত্বের সাথে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ করতে যারা পিছপা হন নি। এমন সাহসী নারীদের গল্পই বলবো আজ।

 

না এটা কাল্পনিক কোন গল্প নয়! এই গল্প আমার আপনার গল্প,আমাদের দেশেরই গল্প। এই গল্পের নায়িকা একজন নন বরং দুইজন! যারা নির্ভীক স্বপ্ন দেখেছেন, আকাশ ছুঁয়েছেন। 

না না, মনের আকাশ নয়! ছুঁয়েছেন জয় করেছেন মাথার উপরের সেই বিশাল নীলাকাশ।  আসুন শুরু করা যাক সেই আকাশ ছোঁয়ার গল্প! 

 

আজকের গল্প নাঈমা আর তামান্নার গল্প।

 

যারা বাংলাদেশের প্রথম সামরিক  নারী বৈমানিক হিসেবে সফলভাবে আকাশে উড়েছেন।  

নাঈমা হক বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন, এবং তামান্না-ই-লুতফী কর্মরত আছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফ্লাইট অফিসার হিসেবে। আসুন তাদের স্বপ্নপূরনের প্রথম ধাপের গল্প ছোট করে জেনে নেয়া যাক!

 

হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী ছিলেন নাঈমা হক। তার বাবা নাজমুল হক একজন সরকারী কর্মকর্তা, এবং মা নাসরিন বেগম একজন গৃহিণী। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে নাঈমা হক সবার ছোট। জানা যায়,  নাঈমা হকের দাদা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে রয়েল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের একজন সদস্য। আর দাদাকে দেখেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন নাঈমা হক। 

 

অন্যদিকে বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তার মেয়ে তামান্না-ই-লুতফী।বিএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। বাবা বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় কর্মরত হওয়ায়  বলাই যায়, অনেকটা বিমান বাহিনী তে যোগদান করার স্বপ্ন বুকে নিয়েই বড় হয়েছেন। 

 

নাঈমা হক বিমানবাহিনী তে যোগদান করেন ২০১০ সালে। এরপর কমিশন পাওয়ায় ২০১১ সালে যোগ দেন বিমান বাহিনীর অপারেশনাল শাখায়।

 

অপরদিকে ২০১১ সালে বিমান বাহিনী তে যোগ দিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে অপারেশনাল শাখায় যোগ দেন তামান্না-ই-লুতফী। বর্তমানে তিনি কর্মরত আছেন ফ্লায়িং অফিসার হিসেবে। অপরদিকে নাঈমা হক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

 

জানা যায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নং স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সে মনোনীত এই দুই নারী কর্মকর্তা গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু করেন। প্রায় একমাস প্রশিক্ষন শেষে প্রথমবারের মতন তাদের উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন তারা। 

সেখানে দীর্ঘ ২৫ ঘন্টা প্রশিক্ষন শেষে এরই মধ্যে তারা একক অর্থাৎ প্রথম একক ফ্লাইট সম্পন্ন করেন।

 

প্রশিক্ষণের পর এই দুই নারী বৈমানিক বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় বেল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে প্রশিক্ষন মেয়া প্রথম নারী হলেন তামান্না এবং নাঈমা।

 

নাঈমা এবং তামান্না সাফল্য শুধুমাত্র দেশের আকাশেই আটকে থাকেনি। বরং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান করার জন্য কঙ্গো তে চলে যান তারা। এবং কঙ্গোর মত দেশে অত্যন্ত সাফল্যের সাথেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন দেশের গর্ব এই দুই নারী  ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। কঙ্গোর স্থানীয় নারীদের মাঝে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন তারা। এক সাক্ষাতকারে  তামান্না বলেন, ‘স্থানীয় নারীদের কাছে আমরা এক বিশাল অনু্প্রেরণা। স্থানীয় নারীরা আমাদের দেখে পড়াশোনা করতে উদ্বুদ্ধ হয়।’ 

 তামান্না আরো বলেন, ‘আমি কখনোই নিজেকে কেবলই একজন নারী হিসেবে পরিচয় দেই না। আমি মনে করি, আমি একজন পাইলট, একজন শান্তিরক্ষী। কারণ নারী নাকি পুরুষ, কে চালাচ্ছে মেশিনের তা বোঝার ক্ষমতা নেই।’

 

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল থেকে জাতিসংঘের  শান্তিরক্ষা মিশনে কৃতিত্বের সাথে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।আর তারই সাথে নারী বৈমানিকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। 

 

 জাতিসংঘ এই দুই নারী বৈমানিকের সাফল্য নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইউটিউবে। ভিডিওটিতে নাঈমা হক এবং তামান্না-ই-লুৎফীর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়।

 

নাঈমা এবং তামান্না উভয়ই সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, তাদের স্বপ্নজয়ের পথে বাবামা হতে শুরু করে প্রশিক্ষক,সাহপাঠী এবং সকল উর্ধতন কর্মকর্তার সহযোগীতা পেয়েছেন সবসময়। 

সত্যি বলতে নাঈমা এবং তামান্নার মতন অন্যান্য নারীরাও যদি একটু সহযোগীতা পান, তবে দেশের ইতিহাসের পাতায় নারীদের গৌরবময় গল্পে সয়লাব হওয়া সময়ের দাবি মাত্র। 

 

তাই নাঈমা আর তামান্নার মত আমাদের নারীরাও আকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখুক। গড়ে উঠুক বৈষম্য মুক্ত একটি সুন্দর সপ্নের দেশ। 

ঠিক যেমন কবি নজরুল তার কবিতায় বলে গিয়েছিলেন,

 

আমার চোখে পুরুষ-রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।

 

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

 

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

 

এমন আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন

 

লেখক

আব্দুল্লাহ আর রাফী

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট।

YSSE