“পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প” বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এদেশে অত্যন্ত সুপরিচিত একটি প্রকল্প। এই প্রকল্প আজ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে “স্মার্ট বাংলাদেশ” হওয়ার লক্ষ্যে।
সফলতার শিখরে পৌঁছাতে এটি বাংলাদেশের আরেকটি সফল পদক্ষেপ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আজ আমাদের সকলের কাছে অতি পরিচিত।
কিন্তু এই প্রকল্পের অনেক গল্পই আমাদের কাছে আজও অজানা যদিও এটি আমাদের দেশের উন্নতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সেসকল তথ্য আজ আমরা জানবো যার উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ আজ নিউক্লিয়ার জগতে প্রবেশ করেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হল একটি ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে অবস্থিত।
পদ্মা নদী তীরবর্তী রূপপুরকে প্রথম ১৯৬২–৬৮ সালে দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল এবং এ প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর ও আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল।
তবে ভেবে দেখুন এই প্রকল্পের স্বপ্ন আমাদের কত প্রাচীন। অবশেষে আজ আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সফল হয়েছি। ২০২৪ সালে এর প্রথম ইউনিটের কাজ বাস্তবায়ন হতে চলেছে এবং অচীরেই দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ প্রারম্ভ হবে।
প্রকল্পটিতে ২টি ইউনিটে উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৪০০ মেগাওয়াট, যা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যবহৃত হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৯৫১ সালের ২০ ডিসেম্বরে। মূলত ইউরেনিয়াম জ্বালানী থেকেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লীতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।
আমাদের দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিটি ইউনিটে ১৬৩টি ফুয়েল এসেম্বলি ব্যবহৃত হতে চলেছে। এতে মোট ৮০ টন ইউরেনিয়াম জ্বালানী ব্যবহৃত হবে। এই ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল‘ অর্থাৎ ইউরেনিয়াম জ্বালানী রাশিয়া থেকে এসেছে।
এই ইউরেনিয়াম জ্বালানী কি?
বলা বাহুল্য যে, পারমাণবিক জ্বালানী সাধারণ জীবাশ্ম জ্বালানী নয়। এটি প্রধানত ইউরেনিয়াম–২৩৫ সমৃদ্ধ ধাতব পদার্থ।
খনির আকরিক হতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় এই জ্বালানী। এই জ্বালানী শক্তির প্রধান উপাদান হলো ক্ষুদ্র আকৃতির ইউরেনিয়াম পেলেট।
একটি নিশ্ছিদ্র ধাতব টিউবে এরকম কয়েকশ পেলেট ঢোকানো থাকে। এই ধাতব টিউবই ফুয়েল রড হিসেবে পরিচিত। এরকম অনেকগুলো ফুয়েল রডের সামঞ্জস্যে তৈরি হয় ফুয়েল এসেম্বলি।
নিউক্লিয়ার জ্বালানী পারমাণবিক চুল্লীতে পুড়িয়ে ফিশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপশক্তি উৎপন্ন করা হয়।
নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ায় ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে, যাতে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। এই তাপশক্তি ব্যবহার করেই পানিকে বাষ্পে পরিণত করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
বিশ্বের ৩৩তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করেছে পারমাণবিক শক্তির মিছিলে। ২০২১ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২২ সালে দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করা হয়।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৫ই অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে ভার্চুয়ালি ইউরেনিয়াম স্থানান্তর সম্পন্ন হয়। এতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন “আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)”-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি।
২০০৯ সালেই বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং রোসা টোম এর মধ্যে ‘পারমানবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার‘ বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে।
এতে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মাধ্যমেই আজ আমরা পারমাণবিক স্বপ্নযাত্রায় গৌরবের সাথে সাফল্যমণ্ডিত।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবশ্যই যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
অন্যথায় বাংলাদেশকেও সোভিয়েতের চেরনোবিল বিপর্যয়ের মতো আরো একটি পারমাণবিক দূর্ঘটনার উদাহরণ হিসেবে পরিণত হতে হবে। তাই এদেশের প্রয়োজনীয় জনবলকে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দিয়েছে রাশিয়ান ফেডারেশন।
এই গৌরবান্বিত সাফল্য বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনবে সমৃদ্ধি ও উন্নতি। বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখময় সাফল্য।
এ প্রকল্পে উৎপন্ন বিদ্যুৎ এদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে চলেছে। সর্বোপরি, এ প্রকল্প বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে উন্নতির এক চরম শিখরে।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন।
লেখিকা
আদ্রি সেন
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE