মিশরের পিরামিড পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। প্রায় ৪৫০০ বছর আগে নির্মীত পিরামিডকে ঘিরে রয়েছে প্রচুর জল্পনা কল্পনা আর রহস্য। এতো বছর আগে এতো নিখুঁত নির্মাণশৈলী ও এতো বিশাল স্থাপনা! কারা বানিয়েছে,কিভাবে বানিয়েছে , কেনোই বা বানিয়েছে – কোনো প্রশ্নেরই যেনো কোনো সঠিক আর যথাযথ উত্তর কেউ দিতে পারেনি আজ পর্যন্ত !
মিশরে ছোটবড় মিলে প্রায় ১১৮ টি পিরামিড রয়েছে। যার মধ্যে গিজার খুফু পিরামিডটি সবচেয়ে বড়। এরপর রয়েছে খাফ্রে আর মেনকৌর পিরামিড। মিশরের পিরামিড বলতে মূলত এই তিনটিকেই বিশেষ করে গিজার খুফু পিরামিডকেই ধরা হয়।
পিরামিড এর রহস্য নিয়ে বছরের পর বছর ভাবনায় মেতে আছেন বিজ্ঞানী ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা। অনেক গবেষণা আর চিন্তাভাবনার পর কিছু তত্ত্ব দিতে পারলেও সম্পূর্ণ সঠিক বলে প্রমাণ করা যায়নি কোনোটিই।
ধাঁধার সমাধানের খোঁজে অনেক সময় জট পেকে গেলে মানুষ উদ্ভট ধারণা ও প্রকাশ করেছে। এলিয়েন রা বানিয়েছে! টাইম ট্রাভেল করে ভবিষ্যতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে! কালাজাদুর প্রভাব! ইলুমিনাতির হাত!আরও কত ধারণা ও উপকথা ঘিরে রয়েছে পিরামিডকে।
পিরামিডের প্রতি পাথরে পাথরে যেনো রহস্য! চলুন জেনে নেই এমনই কিছু রহস্য নিয়ে –
১. পিরামিড বানানো হয়েছে লাইমস্টন পাথর দিয়ে , এক এক টি পাথরের ওজন প্রায় ৭০ টন। এই পাথর গুলো ৪৮০ ফিট উচ্চতায় গাণিতিক ও জ্যামিতিকভাবে নিখুঁত নিয়ম মেনে একটার উপর একটা পাথরের ব্লক বসানো হয়েছে। ৪৫০০ বছর আগে আধুনিক ক্রেন বা অন্য যন্ত্রপাতি/যানবাহন তো দূরে থাকুক, চাকাও আবিষ্কার হয়নি! তাহলে এত ভারী ভারী পাথর এতো উচ্চতায় নিখুঁতভাবে কিভাবে বসানো হয়েছিল?
২. পিরামিড এর পাথর গুলো বিরল, এগুলো পিরামিড এর জায়গা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে নীল নদ পার করে পাথরগুলো আনা হয়েছিল। তবে তখন তো চাকা আবিষ্কার হয়নি,কোনো এমন যানবাহন ও ছিলো নাহ যা ব্যাবহার করে এতো ভারী পাথর গুলো টেনে আনা যাবে তাও এতো দূর থেকে!
৩. পিরামিডগুলোর অবস্থান পৃথিবীর একেবারে মাঝখানে ! এতো বছর আগে কোনো কম্পাস আবিষ্কার হয়নি।এমনকি মানুষ এটাও ঠিক জানতো না যে পৃথিবী গোল,অনেকে বলতো পৃথিবী চ্যপ্টা ! তাহলে কোনো আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া কিভাবে সম্ভব হলো ঠিক পৃথিবীর কেন্দ্রে একটি স্থাপনা নির্মাণ?
৪. পিরামিড নিয়ে একটি তত্ত্ব আছে যার নাম – ওরিয়ন কোরিলেশন থিওরি। এই তত্ত্বের মতে বড় যে তিনটি পিরামিড রয়েছে , তিনটির দিকে রাতে তাকালে দেখা যায় , পিরামিডগুলোর উচ্চ পয়েন্ট গুলো তিনটি তারার সাথে একদম সরলরেখায় নিখুঁতভাবে মিলে যায়! এই তিনটি তারা হলো ওরিয়ন তারা, মিশরীয়রা এই তারকা গুলোকে দেবতা মানতো। এমন সূক্ষ পরিমাপ করা নাকি মহাকাশ থেকে এরিয়েল ভিউ ছাড়া সম্ভব নয়। এমন সূক্ষ পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা মানুষের একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নেই! তাহলে কিভাবে সম্ভব হয়েছিল মিশরীয়দের পক্ষে এভাবে তারকার সামঞ্জস্যতায় পিরামিড বানানো?
৫. পিরামিড এর চেম্বারের ভিতরে পাওয়া গিয়েছে সুড়ঙ্গপথ। প্রথমে ধারণা করা হতো বায়ুপ্রবাহের উপযোগী হওয়ার জন্য এমনটা করা হয়েছে। তবে সুড়ঙ্গপথের গ্রানাইট এর পাথর দিয়ে পথটি বন্ধ। ডায়মন্ডের পর গ্রানাইট হলো সবচেয়ে শক্ত পদার্থ, এই গ্রানাইটকে নিখুঁতভাবে কেটে ওখানে বসানো হয়েছে। আজকের আধুনিক লেজার পদ্ধতি তখন ছিলোনা। কিভাবে সম্ভব হলো এই গ্রানাইট পিরামিডের ভিতরে নেওয়া? আর সুড়ঙ্গপথেরই বা উদ্দেশ্য কি?
৬. ধারণা করা হয় তৎকালীন মিশরের ফেরাউনদের মৃত্যুর পর তাদের দেহ মমি করে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য বানানো হয়েছিল এই পিরামিড গুলো। পিরামিড এর ভিতরে অনেকগুলো চিত্রকর্ম পাওয়া গিয়েছে যাতে এধরনের নিদর্শন পাওয়া যায়। তবে পিরামিডের ভিতর সন্ধান করে পাওয়া যায়নি একটি মমির ও!
৭. কিছু বিজ্ঞানী ও প্রত্নতত্ত্ববিদ এখন ধারণা করেন আসলে প্রাচীন মিশরীয় মানুষেরা বিদ্যুতের ব্যাবহার করতো এবং একটি বিশাল পাওয়ার হাউস হিসাবেই তারা এই পিরামিড গুলো তৈরি করেছিল।প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা কি এতই উন্নত ছিলো?
৮. পিরামিড এর ভিতরের তাপমাত্রা সবসময়ই ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। এটা কখনো বাড়েও না কমে না। বাহিরের তাপমাত্রা যতই বাড়ুক বা কমুক তাতে পিরামিড এর ভিতরকার তাপমাত্রা কোনো পরিবর্তন ই হয়না!
আমরা দাবি করি আমাদের আধুনিক যুগ সভ্যতার শিখরে আছে। তবে পিরামিড এর রহস্য ভেদ করতে গিয়ে বের হয়ে আসা এসব তথ্য আসলে আমাদের ভাবিয়ে তুলে ।মিশরীয় মানুষেরা ৪৫০০ বছর আগে কি আমাদের বর্তমান সময় থেকেও উন্নত ছিলো ? নাকি এর পিছনে রয়েছে এমন কিছু বিষয় যা আমাদের কল্পনাতীত?
For more such blogs check here
Writer:
Ramisa Shamrin Chowdhury
Content Writing Department, YSSE.