ছোটোবেলায় রূপকথার গল্প আমরা কে না শুনেছি। দাদী কিংবা নানি যখন আমাদের কে সেই রাজ্য কিংবা রাজকুমার, রাজকুমারীর কথা বলতো চোখের সামনেই সেগুলো আমরা কল্পনা করতাম। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা বুঝতে পারি আসলে রূপকথা এক প্রকার কল্পনা। এটিকে আমরা বাস্তবে অনুভব করতে পারি না। তবে ধারনা টি পুরোপুরি সত্যিও নয়।
পৃথিবী অনেক রহস্যময়। কিছু কিছু জায়গা যেমন অনেক ভয়ংকর তেমনি কিছু জায়গা মনে হবে একদম স্বর্গীয়। এরকম অনেক অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে এই পৃথিবীতে যেগুলো আমাদের কয়েক মুহুর্তের জন্যে মনে হবে কল্পনা। এই সুন্দর পৃথিবীর একটি সুন্দরতম দেশ হচ্ছে তুরস্ক। তুরস্কের ইতিহাস সম্পর্কে কম বেশি সবাই আমরা জানি। মুসলিম সাম্রাজ্যের বিশাল আধিপত্য যেন এখনো তুর্কির ইতিহাস জুড়ে সমাদৃত। কিন্তু এই দেশের সৌন্দর্য যেন এক অন্যভাবে পুরো পৃথিবীর মানুষকে আকৃষ্ট করে এসেছে এবং করছে। তুরস্কের পূর্বের রাজধানী ইস্তাম্বুল বলতেই ভেসে উঠে এক সুন্দর স্বর্গীয় শহরের দৃশ্য কিন্তু সেখানে এমন একটি শহর ও রয়েছে যেখানে গেলে মনে হবে এই যেন ছোটোবেলায় শোনা রূপকথার সে রাজ্য।
আর এই অদ্ভুত সুন্দর শহরটির নাম হলো ‘ক্যাপাডোসিয়া’
ক্যাপাডোসিয়া শহরটির ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে এখানে অনেক ছাই জমা হতে থাকে। ছাই জমা হতে হতে এখানে গড়ে উঠে পাথরের সমাহার। এই শহরটি পৃথিবীর অন্যান্য শহর থেকে আলাদা কেননা এখানে বড় বড় পাথরের গুহা রয়েছে যেগুলোতে মানুষ বাস করে থাকে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে ইতালি এবং রোমে যুদ্ধ চলাকালীন মানুষেরা সেখান থেকে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিতে থাকে। ক্যাপাডোসিয়া কে গুহার রাজ্য ও বলা হয়। তবে এখানে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট পাথর গুলো খুব একটা শক্ত নয় বিধায় বাতাস আর পানির চাপের ফলে এই পাথরগুলো বিভিন্ন রূপ ধারন করেছে।
পাথরগুলো কিছু কিছু ধারণ করেছে মাশরুম এর আকার আবার কিছু কিছু চিমনির মত। এই চিমনি গুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ ফুট। অনেকে এই চিমনি গুলোকে ‘ফেইরি চিমনি’ বলে থাকেন। তারা মনে করেন প্রাচীন কালে এখানে পাতাল রাজ্যের পরীরা এসে থাকতো। তাই এই নগরীকে নিছক যে রূপকথার রাজ্য বলা যায় তা কিন্তু না।
ক্যাপাডোসিয়া শহর আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষ এখানে অনেক ধরনের সুরঙ্গ ও নিজদের বাস করার জন্যে গুহার নির্মাণ করে থাকেন। তাছাড়া তারা এখানে নানা রকমের আকৃতি করে ক্যাপাডোসিয়াকে পূর্নাঙ্গ শহর রূপে পুরো পৃথিবীর নিকট তুলে ধরেন। এই অঞ্চলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে ‘গোরমে উপত্যকা’ ‘ক্যাপাডোসিয়া রক সাইট’। এই দুইটি স্থান বিশ্ব ঐতিহাসিক স্থান গুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
পর্যটকমহলের অন্যতম প্রিয় স্থান হচ্ছে এই ক্যাপাডোসিয়া। এখানের গোরমে উপত্যকার গুহাগুলোর নিচে প্রায় ৮ তালা ভবনের সমভবন খোদাই করা আছে। পর্যটক দের অবশ্য পুরোটা ঘুরে দেখার সুযোগ দেয়া না হলেও ৪ তালা পর্যন্ত যেতে দেয়া হয়। এসব গুহায় গড়ে উঠেছে নানা রকম স্থাপত্য। এখানকার গির্জা গুলোয় অঙ্কিত আছে ইতিহাসের নানা নিদর্শন। তাছাড়া কোনো কোনো গুহা গড়ে উঠেছে একদম রাজ প্রাসাদের মত করে। কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন রেস্টুরেন্ট। আবার সেখানে জাদুঘর এর ও দেখা পাওয়া যায় যেটি সবার জন্যে উন্মুক্ত। ক্যাপাডোসিয়ায় আকাশে হট এয়ার বেলুন এ উড়ে দেখা যাবে পুরো শহরটি। কয়েক মুহুর্তের জন্যে আপনিও হারিয়ে যেতে পারেন রূপকথার সে রাজ্যে।
অদ্ভুত এই পৃথিবী নানা ভাবে তার সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে। প্রকৃতি নিজেই গড়ে তুলছে বিশাল সাম্রাজ্য। আর এসব সাম্রাজ্য এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে হলে পৃথিবী ঘুরে দেখা এক অত্যাবশ্যকীয় কাজ।
পৃথিবী ঘুরে দেখতে না পারলেও নতুন নতুন এসব কল্পকাহিনীর রাজ্য সম্পর্কে জানতে আমাদের ব্লগ পড়তে থাকুন।
আমাদের আরো ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন
Marjahan Akter
Intern
Content Writing Department
YSSE