মহাকাশের শেষ নেই, রাস্তারও কি শেষ নেই নাকি আছে, জানার আগ্রহ নাকি শুধুই কৌতুহল, চলুন জেনে নেই…
এই পৃথিবীতে অনেক মানুষ প্রচন্ড ভ্রমন প্রিয় হয়ে থাকেন, নিত্য নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোই যেন তাদের প্রধান শখ। আসলে কিছু মানুষ আছেন যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের নতুন ভাবে জানার আগ্রহে মজে থাকে। আর ভ্রমন হলো নিজেকে জানার অন্যতম একটি মাধ্যম। তো আমাদের মধ্যে যারা নিজেকে নিয়ে প্রচুর কৌতুহলী থাকেন তারা সবসময় চান পৃথিবীটাকে নতুন ভাবে, নতুন কোথাও আবিষ্কার করতে। এখন এই নতুন জায়গাটি যদি হয় পৃথিবীর শেষ রাস্তা আর তা যদি আবার অসংখ্য অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ থাকে তাহলে কি আর বলার কিছু আছে?
আমরা সবাই কৌতুহলবশত অনেক কিছু জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকি। তারমধ্যে একটি প্রশ্ন যা সবসময় মাথায় আসে তা হলো, এই পৃথিবীর রাস্তা গুলোর মধ্যে কি কোনো সমাপ্তি আছে?.. আসলে পৃথিবীর অন্যান্য সব কিছুর মতো পৃথিবীর রাস্তারও সমাপ্তি আছে, অর্থাৎ বলতে চাইছি পৃথিবীর শেষ রাস্তা।
প্রতিটি রাস্তার যে শেষ আছে তা ভূবিজ্ঞানীরা ই নিশ্চিত করেছেন। আর পৃথিবীর শেষ রাস্তাটি হলো “ই-৬৯ হাইওয়ে” যেটি কাগজে কলমে “দ্য লাস্ট রোড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড” নামে স্বীকৃত। এটি ইউরোপ মহাদেশের নরওয়েতে অবস্তিত। বর্তমান বিশ্বে নরওয়ে পরিচিতি একটি শান্তির দেশ হিসেবে, ছবির মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন একটি দেশ যা স্থান নিয়েছে উত্তর গোলার্ধে অর্থাৎ নিরীক্ষরেখার ঠিক উপরের দিকে। নরওয়ে কে আরো বলা হয় নিশিরাতের দেশ যেখানে ছয়মাস দিন আর ছয়মাস রাত থাকে আর শীত কালে তাপমাত্রা গড়ে হয়ে থাকে মাইনাস ২৬ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
ই-৬৯ হাইওয়ে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৯ কিলোমিটার। এই রাস্তাটি ইউরোপের নর্ডক্যাপ এবং নরওয়ে ওল্ডাফিউওর্ড গ্রামকে সংযুক্ত করেছে। এখানে যেতে হলে মোট ৫ টি টানেল পার হতে হবে। সবচেয়ে বড় টানেলটি হলো নর্থকেপ যার দৈর্ঘ্য ৬.৯ কিলোমিটার এবং টানেলটি সমুদ্রের ২১২ মিটার নিচে পৌছায়। এই রাস্তাটির দুই পাশে রয়েছে অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সাথে সামুদ্রিক দৃশ্যের অনুভূতি।
অনেক ভ্রমণ পিপাসুরাই শেষ রাস্তা শুনে আবিভূত হয়ে তাদের জীবন দশায় একবার হলেও যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন কিন্তু এখানে একা যাওয়া এবং একা গাড়ি নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ, সাথে আবার এখানে যেতে চাইলে রয়েছে কিছু নিয়মও, যা মানতে না পারলে ভুলেও এখানে যাওয়ার আশা করতে নেই। এছাড়াও ভয়ংকর বিপদের কথা তো না বললেই নয়। যদিও এইসব বিপদের পেছনে অনেক কারণও আছে, এর মধ্যে একটি কারণ হলো বরফের চাদরের আচ্ছাদনে হারিয়ে যাওয়ার প্রবনতা। তবুও নরওয়ে সরকার গ্রীষ্মকালে এখানে যাবার অনুমতি দিয়েছেন, তবে তা দলবেঁধে, তাও আবার বহুল শর্ত সাপেক্ষে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, সবকিছু মেনে নিয়ে ভ্রমন পিপাসুরা তাদের স্মৃতির পাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত করার জন্য ই-৬৯ এর রাস্তায় একবার হলেও নিজের পায়ের ছাপ রাখতে চলে যান।
সত্যি বলতে রাস্তাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও মাঝে মাঝে ভয়ংকর রুপ ও ধারণ করতে পারে। এই রাস্তাটিতে সর্বদা প্রচন্ড বাতাস এবং চারপাশ প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। এখানের আবহাওয়া সবসময় অনিশ্চিত। আবহাওয়ার কোনো পূর্বাভাসও এখানে কাজ করে না। সমুদ্র উপকূলে হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে থাকে এবং যখন তখন ঝড় হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। আমরা আগে থেকেই জানি নরওয়ে নিশিরাতের দেশ এখানে ছয়মাস গ্রষ্মকাল এবং ছয়মাস শীতকাল থাকে। “ই-৬৯ হাইওয়ে ” রাস্তাটিতেও এই শীত ও গ্রীষ্মকালের প্রভাব পড়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে রাস্তাটিতে বরফ পড়ে এবং শীতকালে রাস্তাটি বরফে ঢাকা পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।
নরওয়ে সরকার “ই-৬৯ হাইওয়ে “ টি করার পরিকল্পনা শুরু করেন ১৯৩০ সালে এর মধ্যে আরো ছিল পর্যটন এবং মৎস্যচাষের পরিকল্পনা। পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত রুপ দিতে প্রায় ৪ বছর সময় লাগে। পরিকল্পনাটি অনুসারে কাজ শুরু করা হয় ১৯৩৪ সালে। রাস্তাটি নির্মাণ করতে সময় লাগে ৬২ বছর। অবশেষে ১৯৯২ সালে নির্মাণাধিন কাজ সম্পূর্ণ হয়।
অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর নরওয়ে, তার একটি অংশ ই-৬৯ হাইওয়ে। সারা পৃথিবী থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। অস্তমান সূর্য এবং মেরুজ্যোতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন তারা। দেখেন গাঢ় নীল আকাশে সবুজ এবং গোলাপি আলোর খেলা। এ যেন অন্যরকম অনুভূতি।
আন্তর্জাতিক মহলে ই-৬৯ হাইওয়ে টি পৃথিবীর শেষ রাস্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন এরকম শেষ রাস্তা পৃথিবীতে আরো আছে।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে. ক্লিক করুন
লেখিকা
মৌসুমী আক্তার রিতু
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE