অনন্য সুন্দর মায়াময় এই পৃথিবী। এই পৃথিবীর সৌন্দর্য প্রতিনিয়ত শুষে নিচ্ছে সকল অহংকার, ঘৃণা এবং হিংসা। আর এই অনন্য সুন্দর পৃথিবীর ক্ষুদ্র এক কোণে প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলাদেশে অবস্থিত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর সবথেকে বড় সমুদ্রসৈকত। আপনি যদি হোন ভ্রমণপিয়াসু কিংবা প্রকৃতির প্রেমিক। তাহলে কক্সবাজার আপনার জন্য হতে পারে দারুন একটি জায়গা। এখানে কেবল আপনি পানিতে ভরা নীল দিগন্তের মাঝে ছুটে বেড়াবেন না তারই সাথে দেখতে পারবেন সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য। সমুদ্র আর পাহাড় একসাথে আনবে আপনার জীবনে প্রশান্তির ছোঁয়া। চলুন তাহলে জেনে নিই কক্সবাজারের দর্শনীয় কিছু স্থান সম্পর্কে।
কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট: এই তিনটি পয়েন্ট কক্সবাজারের প্রধান শহরেই অবস্থিত। এসকল পয়েন্টে মানুষের আনাগোনা সবথেকে বেশি। কক্সবাজার ডলফিন মোড় থেকে দেখা মেলে কলাতলি পয়েন্টের। সেখান থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত সুগন্ধা পয়েন্ট। সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা মেলে ঝাউবনের। সেখান থেকে কিছুটা দূরেই লাবণী পয়েন্ট। এই তিনটি পয়েন্টেই আপনি উপভোগ করতে পারবেন বিভিন্ন ধরণের রাইড। এই রাইডগুলো আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে আরো আকর্ষনীয়। আর আপনি যদি আচার বা সামুদ্রিক কোনো সামগ্রী কিনতে চান তাহলেও কোনো চিন্তা নেই। এসব পয়েন্টেই দেখা মেলবে বাজারে। বিশেষ করে সীফুডের বাজার এখানকার আর্কষণীয় জিনিস।
মেরিন ড্রাইভ রোড: কক্সবাজারের সবথেকে সুন্দর একটি রাস্তা মেরিন ড্রাইভ রোড। এর সবথেকে বড় সৌন্দর্য হলো আপনি গাড়িতে চড়ে যেতে যেতে সমুদ্র দেখবেন। গাড়ি চলাকালীন একপাশে সমুদ্র দেখাটা এক দারুন অনুভূতি বলায় যায়। শুধু সমুদ্র নয় মেরিন ড্রাইভ রোড পুরো ভ্রমণ করলে আপনি দেখবেন পাহাড়ও। একপাশে পাহাড় এবং আরেকপাশের সমুদ্র আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে সবথেকে আনন্দদায়ক।
হিমছড়ি: কক্সবাজারে আপনি সমুদ্র দেখবেন ঠিক আছে। কিন্তু আপনার সমুদ্র দেখাকে আরো আরো বিষ্ময়কর সুন্দর করে তুললে কেমন হয়? চলুন এবার আমরা জেনে নিই হিমছড়ি সম্পর্কে৷ হিমছড়ির প্রধান আর্কষণ এখানকার পাহাড়। এখানে অবস্থিত পার্কে ডুকে আপনি দেখতে পারবেন ছোটখাটো ঝর্ণা। আর পাহাড় তো আছেই। যদিও সেই পাহাড়ে উঠতে আপনাকে করতে হবে কষ্ট। সিঁড়ি দিয়েই উঠবেন পাহাড়ে তবে পাহাড়টি উঁচু হওয়ায় আপনার শুরু হতে পারে পায়ে চরম ব্যাথা। তবে পাহাড়ের চূড়াতে উঠার পর আপনি যে সৌন্দর্যটা দেখবেন তাতে আপনার সকল কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। কারণ হিমছড়ির পাহাড়ের চূড়া থেকে আপনি দেখবেন কক্সবাজারের নীল জলরাশির এক বিশাল নির্জন এক সমুদ্র। পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দেখার অনুভূতি যে শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যাবে তা নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন! কক্সবাজারের এই বিষ্ময়কর সৌন্দর্যের অবস্থান মেরিন ড্রাইভ রোডেই।
কাঁকড়া বিচ: কক্সবাজারে গিয়ে যদি আপনি চান নির্জন স্থান যেখানে থাকবে কেবল প্রকৃতি আর আপনার সংযোগ। তাহলে চলে যান কাঁকড়া বিচে। এটি মেরিন ড্রাইভ রোডে অবস্থিত। সকাল সকাল আপনি যদি এখানে চলে যেতে পারেন তাহলে দেখতে পারবেন লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। নীল সমুদ্রের বালুকাবেলায় লাল কাঁকড়ার ঝাঁকের আনাগোনা দেখে আপনার ভ্রমণে যুক্ত হবে দ্বিগুন আনন্দ।
ইনানী বিচ: ইনানী বিচ কক্সবাজার থেকে প্রায় ২৩ কি.মি দূরে অবস্থিত। মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়েই এখানে যাওয়ার পথ। এটি খুব শান্ত একটি বিচ। এখানে রয়েছে সেন্ট মার্টিনের মতই প্রবাল পাথর। ইনানী বিচ থেকে সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য আপনাকে নিশ্চয় বিমোহিত করবে। ইনানী বিচের সামনে আপনি থাকার জন্য অনেক হোটেলও পেয়ে যাবেন।
পাটুয়ারটেক: ইনানী বিচের ভ্রমণ শেষ করে আপনি চাইলেই চলে যেতে পারেন পাটুয়ারটেক। কারণ ইনানী থেকে খুব কাছেই এর অবস্থান। পাটুয়ারটেক একটি পাথরে ঘেরা বিচ। একপাশে পাহাড় আরেকপাশে সমুদ্র পাটুয়ারটেককে আরো নান্দনিক করে তুলে। তবে এই বিচে মানুষের ভিড়ও তুলনামূলক বেশি হয়।
মিনি বান্দরবান: বান্দরবান এর কথা শুনে আপনার মনে হতে পারে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা বলছি। আসলে তা কিন্তু নয়। কক্সবাজারের গোয়ালিয়া অঞ্চলকে বলা হয় মিনি বান্দরবান। কারণ এই এলাকায় দেখবেন রাস্তার পাশে সারি সারি পাহাড়। আপনি যদি পাহাড়ি সৌন্দর্যকে কক্সবাজার থেকেই আরো একটু উপলব্ধি করতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য উপযুক্ত জায়গা হতে পারে। এটির অবস্থান কক্সবাজারের রেজুখালের পূর্বপাশে।
টেকনাফ উপজেলা: আপনার যদি লম্বা ট্যুর প্লেন থাকে তাহলে ঘুরে আসতে পারেন টেকনাফ থেকেও। টেকনাফের অবস্থান কক্সবাজার জেলা হতে ৮৬ কি.মি. দূরে। মেরিন ড্রাইভ হয়েই এখানে যেতে হয়। এখানে যাওয়ার পথে আপনি দেখবেন রাস্তার পাশে সাম্পান। রাস্তার দু’পাশে সাম্পান আপনি মুগ্ধ হয়ে থাকিয়ে দেখবেন। রাস্তায় কিন্তু আপনি সাম্পানের যানজটে পড়ে যেতে পারেন কিন্তু! না, মজা করছি না, এটাই সত্যি। কারণ অনেক সাম্পান রাস্তার মাঝখানে রাখায় রাস্তায় যানজট বেঁধে যায়। যাহোক টেকনাফ গিয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন জিরো পয়েন্ট, শাহপরীর দ্বীপ, কুদুম গুহা।
কক্সবাজারের শেষ কিন্তু এখানেই নয়। আপনি আরো যেতে পারেন মহেশখালী উপজেলায়। সেখানের পাহাড়ী সৌন্দর্যও আপনাকে মুগ্ধ করবে। এছাড়া রামু উপজেলায় এসেও আপনি অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরতে পারবেন। চকরিয়া উপজেলায় গিয়ে ঘুরতে পারবেন ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। এটি বন্য প্রাণীদের মুক্ত বিচরণের স্থল। তাছাড়া সব থেকে বড় আকর্ষণ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অবস্থানও কক্সবাজার জেলায়। নীল আকাশের নিচে প্রবালে ঘেরা এই সৌন্দর্যমন্ডিত দ্বীপটি সবাইকে নিজের কাছে টানে। আর আপনি চাইলেই সাক্ষী হতে পারেন এর সৌন্দর্যের।
ভ্রমণ কেবল মানবমনে আনন্দেরই সৃষ্টি করে না তার সাথে নিয়ে আসে প্রশান্তি। আর প্রশান্তিময় ভ্রমণের উপযুক্ত জায়গা হলো কক্সবাজার। তাই দেরি না করে খুব শীঘ্রই ঘুরে আসুন কক্সবাজার থেকে। তবে কক্সবাজারের প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের সবার। তাই চলুন আজ শপথ নিই, কক্সবাজারের যেখানে সেখানে প্লাস্টিক এবং ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকি, কক্সবাজারের সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুন করি।
এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন
লেখক
প্রত্যয় কান্তি দাশ
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE