প্রায় ২৩০০ একর জমির উপর প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয় কথাটি শুনলে আমাদের মনে হয় হয়তো কংক্রিটে গড়া কোনো বড় বড় বিল্ডিং এর সৌন্দর্যের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার একদমই ব্যতিক্রম। চারিপাশের পাহাড়, গাছ, জঙ্গল এবং ফুলের সমারোহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে করে তুলেছে প্রকৃতির মায়াময় এক স্থান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখেছেন বিখ্যাত বিজ্ঞানি ড. জামাল নজরুল ইসলাম এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁদের মেধার সাক্ষর। এছাড়া এটি অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের পদচিহ্নে রাঙ্গানো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে মেধার পাশাপাশি এর প্রকৃতি হচ্ছে সবথেকে বড় দিক যা সবাইকে এর কাছে টানে। আপনি একবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এসে এর প্রকৃতির প্রেমে পরে যাবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই!  চলুন ঘুরে আসি সবুজ প্রকৃতির সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে। চলুন জেনে নিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনীয় সব স্থান সম্পর্কে:

হ্যাভেন রোড: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নাম্বার গেইট হতে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাকে বলা হ্যাভেন রোড। হ্যাভেনের অর্থ স্বর্গ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রোডকে স্বর্গের রাস্তা বলার কারণ এর চারিপাশের সৌন্দর্য। এই রাস্তাটি সরু এবং খুবই পরিস্কার। এর রাস্তার চারপাশের সারি সারি গাছ একে করে তুলেছে প্রকৃতির এক অপূর্ব স্থান। এছাড়া এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশে লক্ষ্য করা যায় সবুজ বাগান, বিল, ধানক্ষেতসহ গ্রামের পরিবেশ। এই সরু রাস্তা ধরে রিকশা করে আসা বা হেঁটে আসা এক দারুন অনুভূতি। 

কাঁটাপাহাড় রোড: জিরো পয়েন্ট থেকে আপনি যদি যেতে চান ব্যবসায় প্রশাসন, কলা, বিজ্ঞান কিংবা বায়োলজি অনুষদ তাহলেই আপনি এই রোড ধরে যেতে পারেন। এই রোডের প্রধান সৌন্দর্য এর চারপাশের পাহাড়। পাহাড় দেখে দেখে হাঁটার অনুভূতি কেবল যারা অনুভব করেছেন তাঁরায় বোধহয় এটি ভালো করে উপলব্ধি করতে পারবেন।

চবি ঝর্ণা: পাহাড়ের সাথে সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ঝর্ণাও। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনে চবি ঝর্ণার অবস্থান। এই ঝর্ণায় যেতে হলে আপনাকে নামতে হবে ছোট খাটো পাহাড় থেকে। পাহাড়ের উপর থেকেই এই ঝর্ণা দেখা যায়। এই ঝর্ণার পাশে রয়েছে বড়ই এর বাগান। তাছাড়া আরেকটু উপরে পাহাড়ে গেলে পাওয়া যাবে কাঁঠালের বাগান৷ গ্রীষ্মকালে এসব বাগান ফলে ফলে পূর্ণ থাকে। যাহোক, চবি ঝর্ণার পানি খুবই শীতল। এই পানিতে হাত বা পা ডুবানোর ইচ্ছা আপনার হবেই হবে। তবে চবি ঝর্ণাতে গেলে আপনার সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কারণ ঝর্ণার পানি যেখানে পতিত হয় সে স্থান খুবই গভীর। এই ঝর্ণা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের। তাই ঝর্ণায় ঝাপ দেওয়া মোটেও উচিত নয়। এমনে দূর থেকে দেখে বা পানি হাত দিয়ে ধরাতে সীমাবদ্ধ থাকাটাই সবথেকে ভালো এবং চারপাশের সবুজ প্রকৃতিকে নিজের চোখের ফ্রেমে বন্দী করাটা ভালো।

টেলিটক পাহাড়: ঝর্ণা তো ঘুরলেন, এবার চলুন ঘুরে আসি পাহাড় চূড়া থেকে। টেলিটক পাহাড়ের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফিল্ডের পিছনে। এখানে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পিছনের দিক দিয়েও যাওয়া যায়। উপরে টেলিটক টাওয়ার থাকায় এর নাম টেলিটক পাহাড়।  পাহাড়ের নিচ থেকে পাহাড়ের দৃশ্য অসাধারণ। পাহাড়ের নিচে রয়েছে লেবুর বাগান। টেলিটক পাহাড়ের আশেপাশে রয়েছে সারি সারি পাহাড়। পাহাড়ে উঠাটা একটু কষ্টকর তবে পাহাড়ে উঠার পর আপনি যে চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যটি দেখবেন তা আপনাকে পাহাড়ের উপর থেকে বিষ্ময়ে এবং আনন্দে চিৎকার করতে বাধ্য করবে। তাছাড়া শরতে কাশফুলের সমারহ এই পাহাড়ের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে এই জায়গায় যেতে অবশ্যই মানুষজন বেশি নিয়ে এবং সাবধানতা অবলম্বন করে যাওয়া উচিত।

নীড়া পাহাড়: পাহাড়ে ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি অসংখ্য পাহাড় দেখতে পাবেন। এর মধ্যে নীড়া পাহাড় অন্যতম। নীড়া পাহাড়ে উঠা তুলনামূলক সহজ। এর চূড়া থেকে প্রাকৃতিক  দৃশ্যটি দারুন। নীড়া পাহাড়ের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পেছনে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন: পাহাড় দেখার পর যদি আপনার বিভিন্ন ধরণের গাছ দেখতে ইচ্ছা হয় তাহলে আপনি চলে যেতে পারেন বোটানিক্যাল গার্ডেনে। এখানে রয়েছে নানান জাতের গাছ। তাছাড়া এখানে একটি সূর্যমুখী বাগানো রয়েছে যা কেবল গ্রীষ্মকালেই ফুলে ঘেরা দেখা যায়।

পাম্প বাগান: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি সৌন্দর্যের বোধহয় একসাথে পাবেন। আপনি যদি চান সারি সারি পাম্প বৃক্ষ দেখবেন তাহলে চলে আসতে পারেন পাম্প বাগানে। এই জায়গাটি খুবই হিম শীতল। পাম্প গাছের জন্য এখানে সূর্যের আলো তেমন প্রবেশ করে না। এই জায়গা আপনার মনে আলাদা স্বস্তি তৈরি করবে। তবে এখানে মাঝে মাঝে সাপের দেখা মেলে। তাই সাবধানে চলাচল করা আবশ্যক।

চালন্দা গিরিপথ: পাহাড়, বোটানিক্যাল গার্ডেন, পাম্প বাগান নিয়ে জানার পর চলুন এবার একটু জেনে নিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবথেকে দুর্গম স্থান চালন্দা গিরিপথ নিয়ে। চালন্দা গিরিপথ যেতে আপনার প্রায় ২ ঘন্টা লাগবেই। তাছাড়া আপনাকে পাড়ি দিতে হবে পাহাড় এবং ভয়ানক সকল পথ। দুপাশের পাহাড়ের গায়ে পা দিয়ে কিংবা নিচের হাটু সমান পানিতে হেঁটে আপনাকে গিরিপথ ধরে হাঁটতে হবে। এখানে সৌন্দর্য অবলক্ষণ করা যেন স্বর্গীয় অনুভূতি নেওয়া। তবে অতি সাহসী না হলে কিংবা দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকলে এখানে না যাওয়াটাই উত্তম। আর গেলেও অনেক মানুষ নিয়ে যাওয়া উচিত।

স্লুইচ গেইট: পাহাড়, গিরিপথ, ঝর্ণার পর আপনার যদি পানিতে হেঁটে সমুদ্রের অনুভূতি নেওয়ার ইচ্ছা হয় তাহলে তাও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লুইচ গেইটে গিয়ে আপনি শীতল পানিতে ডুবাতে পারবেন আপনার পা। তাছাড়া স্লুইচ গেইট দিয়ে পানি পড়ার দৃশ্যও আপনাকে মুগ্ধ করবে।

শুধু এগুলোই নয় তাছাড়াও আপনি ঘুরে আসতে পারেন চারপাশে গাছে ভরা ফরেস্ট্রি রোড, পাম্প বাগানের পাশের লেকের মতো দেখতে পাহাড়ে ঘেরা পুকুর কিংবা জাদুঘর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আপনার জন্য রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কথা “শেষ হয়েও হইলো না শেষ” এর মতোই লাগবে। এখানে আপনি একবার এসে হারিয়ে যেতে চাইবেন প্রকৃতির গভীরে চিরতরে।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন 

লেখক,

প্রত্যয় কান্তি দাশ,

ইন্টার্ন,

কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,

YSSE