শূন্য থেকে শুরু করে, প্রতিকূল পথ ধরে এই তরুণ এবং উদীয়মান ব্যক্তি সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে, কঠোর পরিশ্রম এবং সত্য নিষ্ঠার সাথে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তার লক্ষ্য অর্জন করেছেন। দেশের তরুণ প্রজন্ম যখন মাসিক উপার্জন নিয়ে অব্যাহতভাবে চাকরির নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কঠোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তখন মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী উদ্যোক্তা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও সহজতর করেন। তিনি ভিন্ন ধারার দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করছেন এবং একটি শক্তিশালী তথ্য কাঠামো তৈরি করে তরুণ উদ্যোক্তাদের তাদের নিজ ক্ষমতায় সাফল্যের পথ দেখিয়ে চলেছেন।
গত এক দশক ধরে ব্যবসায় তরুণদের পদচারণা ইতিবাচক হারে বেড়ে চলছে । এর প্রধান কারণ- তরুণরা বর্তমানে নিজ নিজ চিন্তা-ভাবনাগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো- ইন্টারনেটের প্রসার। ইন্টারনেটের প্রসারের কারণে মানুষ খুব সহজেই তাদের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারছেন। এর এজন্যই বর্তমানে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা তৈরী হচ্ছে। তারা বার বার দেখিয়ে দিচ্ছেন- নিজেদের আইডিয়াগুলোকে সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে, সফলতা পাওয়া কঠিন কিছু নয়। অন্য ভাবে বলা যায়, তরুণদের জন্যে সময়ের সদ্ব্যব্যবহারেরও একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করে যাচ্ছেন। এছাড়া তারা প্রমাণ করেছেন, উদ্যোক্তা হতে গেলে বয়স কোন বিষয় নয়। শুধু সঠিক পরিকল্পনা, অভিনব আইডিয়া আর দৃঢ় মনোভাব প্রয়োজন।
আজ এমনই একজন তরুণ এবং উদীয়মান উদ্যোক্তার উদাহরণ তুলে ধরবো আপনাদের সামনে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী। পড়ালেখা শেষে বেকার থাকলেও এখন বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে প্রতি মাসে তিনি আয় করেন ১১ থেকে ১৬ লাখ টাকা। পাশাপাশি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘এমআইটি সল্যুশনস’-এ ৩০ কর্মীর কাজের সুযোগও করে দিয়েছেন তিনি। ফ্রিল্যান্সিং কাজে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে সম্মাননাও পেয়েছেন মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকীর পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন অনলাইনে আয় করার জন্য ‘ক্লিক টু আর্ন’ভিত্তিক বিভিন্ন কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু ভুয়া এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৯ হাজার টাকা লোকসান হয় তাঁর। পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই এতগুলো টাকা লোকসান হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। পরে বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। সেখানে গ্রাফিকস ডিজাইন শেখার সময়ই অনলাইন মার্কেটপ্লেস ওডেস্কে (বর্তমানে আপওয়ার্ক) প্রোফাইল খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়ার চেষ্টা করেন। শুরুতে দীর্ঘদিন কাজ না পাওয়ার কারণে হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা হয় তাঁর। সে সময় পরিবারের আর্থিক সমস্যা দূর করতে এলাকায় কম্পিউটার মেরামত ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী। তবে সফলতা না পাওয়ায় ঢাকায় এসে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ইন্টার্নশিপ করার সময় ফ্রিল্যান্সিং কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা হওয়ার পাশাপাশি নিজেকে এ কাজের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলেন মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় আট বছর চাকরি করার পর নিজেই পুরোপুরিভাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করেন।
চাকরি ও ফ্রিল্যান্সিং একই সঙ্গে
মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী জানান, ‘চাকরির পাশাপাশি ২০১৪ সালে পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করি। এ সময় আমি মূলত সাবেক প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মাদ মনির হুসাইনের অনলাইন দলের সদস্য হিসেবে প্রকল্পভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতাম। হঠাৎ একটা বড় প্রকল্পের কারণে আমাকে স্থায়ী বা নির্দিষ্ট বেতনে সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরির অনুরোধ করেন তিনি। রাজি না হলে অনলাইনে কাজ না দেওয়ার কথাও জানান। তখন বাধ্য হয়েই নির্দিষ্ট বেতনে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করি। একই সময়ে ব্যক্তিগতভাবে ফাইভার এবং আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে থাকি। কিন্তু কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে বাধা দেওয়া হয় এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে থাকা আমার সব প্রোফাইল অকার্যকর করে দেওয়া হয়।’
এগিয়ে যাওয়ার গল্প
চাকরি ছাড়ার পর নিজে ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি যৌথভাবে ‘এমআইটি সল্যুশনস’ নামের একটি ফ্রিল্যান্সিং–ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চালু করেন মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানটির কাজের ধরন উল্লেখ করে মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী বলেন, ‘এজেন্সি হিসেবে আমরা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং গ্রাফিকস ডিজাইন নিয়েও কাজ করে থাকি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩০। প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠান থেকে ১১–১৬ লাখ টাকা আয় হয়। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও আমি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে থাকি।’
নতুনদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাত খুবই সম্ভাবনাময়। আমি সফল ফ্রিল্যান্সারদের মধ্য থেকে সফল উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কাজ করতে চাই। সবার সহযোগিতা পেলে ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার মডেল নিয়ে কাজ করব।’
এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন
লেখক,
ফারিহা আলিফ
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE