ফ্রিল্যান্স বা ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আমরা যে  যা ধারণাই রাখি না কেন শব্দটা আমাদের কাছে ইন্টারেস্টিং , বর্তমানে অনেকেই এই সেক্টরটির দিকে আগ্রহী হচ্ছে। এবং এর বেশ কিছু কারণও রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের ক্ষেত্রের ভ্যারাইটিস ও বিভিন্ন সুবিধা ও সহজলভ্যতার কারণে তারা ফ্রীল্যান্সিং কে নিজের কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী হচ্ছে , অনেকে পার্ট টাইম বা অফিস বা চাকরীর পাশাপাশি করছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের স্বাধীনতা, নমনীয়তা, বা  কারো অধীনে কাজ না করে নিজে কাজ চালিয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে ফ্রিল্যান্সিং জবগুলোর চেয়ে সহজ মনে হলেও যখন আপনি এই সেক্টরে নতুন, অন্যান্য নতুন ফ্রিল্যান্সারদের মতই আপনিও কিছু ভুল করতে পারেন যেগুলো আপনাকে এতে সফল হতে কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আপনি যদি এই সেক্টরে নতুন হয়ে থাকেন এবং কমন ভুলগুলি নিয়ে আগে থেকেই জেনে রাখেন তাহলে সহজেই আপনি সতর্কভাবে এসব এড়িয়ে যেতে সক্ষম হবেন।  এখন আমরা এমনি কিছু সাধারণ ভুল গুলোর কথা বলবো যেগুলো  একজন ফ্রিল্যান্সারের সফল হতে অবশ্যই এভোয়েড করা উচিত।  

 

১) ঘন্টাপ্রতি চার্জ কম রাখা 

 

 ফ্রিল্যান্সিং এ সাধারণত নতুন ফ্রিল্যান্সাররা প্রথমেই যে ভুলগুলো করে তার মধ্যে একটি হচ্ছে  এটি। আপনি যে বিষয়েই কাজ করতে যান এখানে আপনি নিজের যোগ্যতা ও কাজ দিয়ে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জন করছেন, আপনার এটা মনে হতে পারে কম রেট বা চার্জ ক্লায়েন্টকে আকৃষ্ট করতে পারে। কিন্তু আপনি যখন নতুন কাজ করছেন এবং আপনার কাজ সম্মন্ধে ক্লায়েন্ট জানেনা তখন আপনার চার্জ পার আওআর একটি বড় ইনডিকেটর হিসেবেও কাজ করবে।

ক্লায়েন্টরা কাজের সাধারণ চার্জ জেনেই একজন ফ্রিল্যান্সারকে খোঁজে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তাই সাধারণের চেয়ে কম চার্জ ক্লায়েন্টের কাছে আপনার কাজ এর মান সম্পর্কে একটি  খারাপ ধারণা হতে পারে। সাধারণত ফ্রীল্যান্সাররা শুরুতে কাজের ক্ষেত্রবিশেষে কি রেঞ্জের ভিতর তাদের চার্জ রাখে সে বিষয়ে জেনে নেয়া। তারপর আপনার কাজের ধরন, স্কীল, প্রয়োজন অনুযায়ী একটি রেট ধারণ করা। যেমন আপনি কোন প্রজেক্ট ৩/৪ ইউএস ডলার চার্জ ঠিক করলেন কিন্তু এটার সধারণ প্রাইস রেঞ্জ ৮-১২ ডলার। 

 

২) ক্লায়েন্টদের অব্যবস্থাপনা

 

ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ক্লায়েন্টদের সাথে ব্যবস্থাপনায় সঠিক হওয়া । কেননা যখন কোন ক্লায়েন্ট কাজ করানোর জন্য ইন্টার্ভিউ নেয় তখন নিজেকে কাজটার জন্য কিভাবে সবচেয়ে উপযুক্ত তা তুলে ধরা গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়। ক্লায়েন্ট  কাজটির কি ধরনের রেজাল্ট আশা করছে বা তার ডিমান্ড সঠিক ভাবে বুঝে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে । ক্লায়েন্ট কাজের খুঁটিনাটি ( কোন সফটওয়্যার এ করছেন, আপনার ট্রিক্স এন্ড টিপস, ইত্যাদি কাজের ডিটেইল) জানতে আগ্রহী হলে  তাকে নিজের সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে কাজের মাধ্যমে তা বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। আর প্রজেক্ট নেয়ার পর ক্লায়েন্টদের সাথে নিয়মিত কাজের আপডেট দেখাতে হবে, এতে তারা কাজটা যেভাবে চাচ্ছে সেভাবে কাজটি সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা বা ফিডব্যাক পাওয়া এবং ভবিষ্যতে আরও কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। 

 

৩) স্বল্প সময়ের জন্য ফ্রিলান্সিং করার ভাবনা 

 

 অনেকেই ভেবে থাকেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা মাত্রই আপনার অর্থ উপার্জন হয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণই ভুল ধারণা। ফ্রিল্যান্সিং আপনি দীর্ঘমেয়াদী কোন অফিসের কাজ করছেন না, বরং বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের সাথে বিভিন্ন সময়ে। আপনি যদি এখানে নতুন হয়ে থাকেন, প্রথমেই কাজ না পেলে বা কম টাকা উপার্জন হচ্ছে দেখে হাল ছেড়ে দেন তাহলে এটা আপনার জন্য নয়। ফ্রিল্যান্সিং এ দরকার প্র্যাকটিস,  ধৈর্য্ ও সময়। সুতরাং আপনি কিছুদিনের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে আসতে চাইলে আপনার সফল হবার সম্ভাবনা খুব কম। 

 

৪) নেটওয়ার্কিং এর মধ্যে না থাকা 

 

ফ্রীল্যান্সিং আপনি নিজেই নিজের কাজের মালিক এ কথা ঠিক হলেও আর বেশ কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে যা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্লায়েন্ট এর কাছে আপনার একটি সুন্দর প্রোফাইল অনেক গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু শুধু এতেই আপনি ক্লায়েন্ট এর কাছে পৌছাতে নাও পারতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং জগত বা ক্লায়েন্টজগতের সাথে আপনার যোগাযোগ থাকতে হবে। যোগাযোগ বেশি হলেই বেশি সংখ্যক ক্লায়েন্ট দের মধ্য থেকে কাজ বাছাই করে নিতে পারবেন ও আপনার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে। 

 

৫) সিস্টেমিক রুটিন 

 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমাদের ক্লায়েন্ট বিদেশি বা ভিন্ন টাইম জোনের হয়ে থাকে, অনেকে ইমারজেন্সি কাজের জন্য যেমন ওয়েব সাইট ডাউন হয় গেছে যত দ্রুত সম্ভব ঠিক করে দিতে হবে, বা বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্ট এর মুখোমুখি হতে হয়।  সেক্ষেত্রে আপনার মাথায় রাখতে হবে কোন কাজটি নিলে আপনি ভালোমতো কাজটি শেষ করতে পারবেন আপনার দৈনন্দিন জীবনে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট ছাড়া বা কম করে। আপনি সপ্তাহ প্রতি কত ঘণ্টা ব দিনে কত ঘণ্টা কাজ করতে পারেন এটা ঠিক করে নিন এবং সে হিসাবে ক্লায়েন্ট  নির্বাচন করুন।  

 

৬) স্কিল ছাড়াই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা বা কম স্কিল থাকা 

 

অনেকেই কাজ সম্মপর্কে ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে বা একেবারেই না নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে আসে। এটা অত্যন্তই একটি ভুল স্টেপ। আপনি একটি বিষয়ে পারদর্শী হলে শুধু সেই সেক্টরেই কাজ করুন। ক্লায়েন্ট আপনার কাছে কোন কাজ দিয়ে অবশ্যই এটা এক্সপেকট করে যে কাজটি অন্য কারো চেয়ে আপনি ভালো ভাবে করবেন । আপনার যদি স্কিল না থাকে এবং কাজটি ভালোভাবে করতে না পারেন তাহলে আপনি ফ্রীল্যান্সিং করে সফল হতে পারবেন না।

আপনার আগ্রহের বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে ফ্রীল্যান্সিং করুন 

 

৭) সব ধরনের প্রজেক্ট একসেপ্ট (Accpect) করা  

 

এই ভুলটি সাধারণত নতুন ফ্রীল্যান্সাররা করে থাকে। প্রথম কাজ পাওয়া আনন্দের বিষয় এবং কাজ করতে করতে যখন আরো কাজ হাতে আসে, এমনকি আগের প্রজেক্ট থাকা সত্ত্বেও অনেকে নিউ প্রপোজাল গুলো একসেপ্ট করে নেয়। এতে করে দু ধরণের সমস্যা হয়, প্রথমত আপনি আগের প্রজেক্টগুলোয় ফোকাস করতে পারেন না পুরোপুরি এবং দ্বিতীয়ত আপনার কাজের বাইরের লাইফস্টাইল এলোমেলো হয়ে যায়, ফিজিক্যালি ফিট থাকাও সম্ভব হয়না অনেকসময়।  

 

৮) কমিউনিকেশন স্কিল 

 

আবশ্যই আরেকটি গুরুত্ত্বপূর্ণ ভুল হলো আপনি ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ এ কমিউনিকেট করতে পারেন না কিংবা সাধারণ ক্লায়েন্টদের সাথে কাজের জন্য দরকারি প্রফেশনাল আলাপ চালিয়ে যেতে পারেন না। আপনার একটি প্রজেক্ট এর জন্য কন্ট্রাক্ট করা অনেক জরুরি। আর যদি ক্লায়েন্ট বাইরের দেশের বা ভিন্ন ভাষভাষী হয়ে থাকে, আপনি কতো ফ্লুয়েন্টলি তার সাথে কমিউনিকেট করতে পারছেন  তা ফ্রিল্যান্সিংয়ের একটি অন্যতম অপরিহার্য দক্ষতা। 

 

৯) ডেডলাইনের মধ্যে কাজ জমা না দেয়া 

 

অনেকে অনেক প্রজেক্ট হাতে নিয়ে ফেলে অথবা  রুটিন না মিলিয়ে কাজ নিয়ে পরে প্রজেক্টটা নির্দিষ্ট টাইমের মধ্যে ক্লায়েন্টকে দিতে পারে না। আপনার পাইপলাইনে যদি আগেই প্রজেক্ট থাকে কিংবা আপনি নিশ্চিত নন নতুন একটি প্রজেক্ট  আপনি নির্দিষ্ট টাইমে শেষ করতে পারবেন কিনা, প্রজেক্টটি নেয়া হতে বিরত থাকুন। এটা থেকে পরের পয়েন্ট টি আসে। 

 

১০) স্পেক ওয়ার্ক করা 

 

স্পেক(spec) ওয়ার্ক বলতে মূলত বুঝায় আপনি ক্লায়েন্ট এর সাথে কোন কন্ট্রাক্ট এ নেই কাজটি নিয়ে, বা কাজটি আপনার করার পর তারা এটি নিবে কিনা বা আপনাকে টাকা দিবে কিনা তা না নিশ্চিত করেই যে কাজ দেয়া বা নেয়া হয়। হয়তো ধরুন কোন কোম্পানি আপনাকে লোগো ডিসাইন এর জন্যে হায়ার করতে চায় কিন্তু আপনি জানেন না কাজটি আপনি করলে এই লোগোটিই তারা নিবে  মূলত এ ধরণের  প্রধান প্রধান  ভুলগুলো এড়িয়ে  ধৈর্য নিয়ে কাজ চালিয়ে গেলে  ফ্রিল্যান্সিং একটি  বেশ লাভজনক প্লাটফরম। আর সময় এবং অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে নিজেদের পছন্দসই একটি প্লেস তৈরি করে ফেলাও অনেক সহজ হয়ে যায়। 

প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারের উচিৎ উপরোক্ত ভুলগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা এবং তা থেকে বিরত থাকা। এতে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হবে সফল এবং ব্যাপক সম্ভাবনাময়ী। আশা করি এই আর্টিকেল আপনাদের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক এবং সঠিক গাইডলাইন পেতে সহায়তা করবে।

 

এরকম আরও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

 

লেখিকা,

ফারিহা আলিফ

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE