আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারী পুরষ উভয়ে অংশ নিয়েছিলেন সমান গতিতে। কেউ কারো উপর ভার চাপিয়ে বসে থাকেননি। পুরুষ যেমন ঘরের বাইরে ছিলেন উদ্যামি, কঠোর, দেশকে মুক্তির আকাংক্ষা ছিল তাদের মনে। তেমনি নারীরা তাদের পেছনে থেকে মনোবল, আত্মবিশ্বাস দিয়ে পাঠিয়েছেন দেশকে স্বাধীন জন্য। 

তেমনি এক অদম্য নারী হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা। যিনি পর্দার আড়ালে থেকেই  তাঁর ধৈর্য্য, সাহসিকতা, দায়িত্ব, মায়া-মমতা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন সংসার। একজন রাজ্নীতিবিদ না হয়েও নিজের বিচক্ষণতা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন এই বাংলার হাজারো নারীর স্বপ্ন।  

আজ এই মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বলব তাঁর কথা। সেই মহীয়সী নারীর কথা। শেখ ফজিলাতুন্নেছা, পরিচিত আরও নানা নামে। কখনো তিনি রেণু, কখনো বেগম মুজিব কখনো বা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

জন্ম তাঁর ১৯৩০ সালের ৮ই আগস্ট। ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে ছোট্ট সন্তান। ডাকনাম রেনু। খুব বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেন নি। অবসরে বই পড়তে ভীষণ ভালবাসতেন তিনি। অল্প বয়সেই প্রথমে বাবা তারপর মাকে হারান এই মহান হৃদয়ের নারী। পরবর্তিতে দাদা শেখ কাশেমের কাছেই বড় হন তিনি। তবে মা মারা যাওয়ার মাত্র ২ বছর পরেই মারা যান প্রিয় দাদা ও। পরে তিনি বড় হন বঙ্গবন্ধুর মায়ের আচঁলের নিচে। তিনি নিজের মেয়ের মত করে লালন করেন ছোট্ট রেণুকে।

জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তিনি এক অদম্য নারী। বাবা মা হারা হয়ে খুব অল্প বয়সে বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। তবে সেটা পরিস্থিতির কারনেই তাঁর দাদা তাঁকে বঙ্গবন্ধুর সাথে বিয়ে দেন। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর সকল সম্পত্তি শেখ ফজিলাতুন্নেছার নামে ও তাঁর বোনের নামে লিখে দিতেন। সে কারনেই তাঁকে মাত্র তিন বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ও তখন শুধু শুনেছেন যে উনার বিয়ে হয়েছে।

তবে ১৯৩৯ সালে যখন দুইজনই একটু বড় হয়েছেন তখন আয়োজন করে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করা হয়।  

বিয়ের পর যখন বঙ্গবন্ধুর সাথে নিজের নাম জড়ালেন, তখন নিজের সর্বস্ব দিয়েই বঙ্গবন্ধুকে আম্ৃত্যু সঙ্গ দিয়ে গেছেন। যখন বঙ্গবন্ধু দেশের ও দশের জন্য কাজ করতে গিয়ে জেলের ভিতরে দিন কাটালেন, তখন বঙ্গমাতা একটু সময়ের জন্যও নিশ্চিন্তে থাকতে পারেননি। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় পার হত তাঁর দিন।

বঙ্গবন্ধু যখন দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে তাঁর স্বাস্থ্য ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো, তখন উনাকে দেখে বঙ্গমাতা খুব কষ্ট পেলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘ জেলে থাক আপত্তি নেই। তবে স্বাস্থের দিকে নজর রেখ। তোমাকে দেখে আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বুঝা উচিৎ আমার দুনিয়ায় কেউ নেই। ছোট বেলায় বাবা-মা মারা গেছেন, তোমার কিছু হলে বাঁচব কি করে?’

অত্যন্ত বিচক্ষণতার অধিকারী হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সুনিপুণ ভাবে সামলে নিয়েছেন ছেলেমেয়ে, সংসার, রাজনীতির নানা সমস্যা। মানুষের মত মানুষ করেছেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলকে। গড়ে তুলেছেন মানুষের জন্য স্বদা প্রস্তুত থাকার মানসিকতা নিয়ে।

কতটা সাহসি হলে একজন নারী, একজন মা পারেন তাঁর দুই সন্তানকে যুদ্ধের ময়দানে পাঠাতে, যেখানে নিজের স্বামী দীর্ঘদিন জেল বন্দী, নেই ফিরার কোনো আশা ! 

বঙ্গমাতা মানবিকতা শুধু সু-সময়ের জন্য ছিল না। তাঁর মানবিকতা, উদারতা ছিল সুখে দুঃখে শুত্রু মিত্র সকলের জন্যই। যখন তিনি ভীষণ বিপদে পরিবার-পরিজন, নিজের সন্তানদের নিয়ে তখনও দেখা মিলেছিল চির মমতাময়ী বেগম মুজিবকে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর যখন দেশ স্বাধীন হয় তখনো তিনি ছিলেন পরদিন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দি। মিত্র বাহিনীর মেজর তারার সাহায্যে বঙ্গমাতার বাড়ির পাহারায় যে পাকিস্তানি সৈন্যরা ছিল তারা আত্মসমর্পণ করে  ১৭ ডিসেম্বর। তবে দুজন পাকিস্তানি সৈন্যের সহায়তায় শেখ জামাল বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। কিন্তু তাই বলে বঙ্গমাতা তাঁদের শাস্তি দিলেন না। বরং মেজর তারা কে বললেন ওই দুজন সৈন্যকে যেন কিছুই করা না হয় !

 

বঙ্গমাতার উদারতা, মমতাময়ী ব্যবহার আজ খুব কমই দেখা যায়। আমাদের উচিৎ বঙ্গমাতার জীবনাদর্শ থেকে অনেক কিছু শিখা। তিনি প্রত্যেক নারীর জীবনে এক মহান আদর্শ হয়ে থাকবেন। 

এরকম আরও ব্লগ পড়তে চাইলে এখানে চাপুন

 

লেখক-

রুবাইয়া বেগম

ইন্টার্ন কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE.