“ও তুই লাল পাহাড়ের দেশে যা

রাঙ্গামাটির দেশে যা

এখানে তোকে মানাইছে গো…….

এক্কেবারে মানাইছে নাই গো……….”

অনেকের কাছেই নিশ্চয়ই খুব পরিচিত এই গানটি, তাই না ? 

হ্যাঁ, বলছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটির কথা। যেখানে-মেঘ পাহাড় বন এর অপূর্ব এক মিলন মেলার দেখা মেলে।  নয়াভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি রাঙ্গামাটি।

সবুজে আচ্ছাদিত উঁচুনিচু পাহাড়ী পথ এঁকে-বেঁকে চলছে। ইতিহাসের স্বাক্ষী কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই লেকের নীল জলধারার সৌন্দর্য, পথিমধ্যে ছোট ছোট ঝর্ণা, পাখির কিচির মিচির, রঙিন প্রজাপতি, ঘাস ফড়িং এর দল বেঁধে উঁড়ে চলা দেখে মনে হবে যেন– একি স্বপ্ন, না সত্যি!

রাঙ্গামাটির পূর্বকথা: 

১৬৬৬ সালে এ অঞ্চলে মুঘোলদের অনুপ্রবেশ ঘটে। ১৭৬০ – ৬১ সালে ইংরেজ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে। এ ভাবে কালের পরিক্রমায় ১৮৬০ সালের ২০ জুলাই রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সৃষ্টি হয়। ১৯৭১ সালে রাঙ্গামাটি ছিল ১ নং সেক্টরের অধীন। স্বর্গীয় সৌন্দর্যের পটভূমি রাঙ্গামাটিতে বাঙালী ছাড়াও ১৪ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোক বাস করে।

দর্শনে আর অনুভূতিতে কেমন এই রাঙ্গামাটি? 

রাঙ্গামাটির কথা বলা শুরু করলেই প্রথমেই কল্পলোকে মনের কোনে যে ছবিটি ভেসে ওঠে সেটা হয়তো কোন ছবিটা দেখা রঙিন একটি ঝুলন্ত সেতু! পর্যাটন কম্পেক্সের ভিতর রয়েছে এই ঝুলন্ত সেতুটি।  

কিন্তু এই সেতু ছাড়াও এখানকার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় যাদুঘর, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, বাংলাদেশের সবথেক উঁচু প্রাকৃতিক ঝর্ণা শুভলং, পেদা টিং টিং, তবলছড়ি বাজার, রিজার্ভ বাজার, কশেলং মাইনিমুখ, বুড়িঘাট, রাঙ্গাপানি, কর্ণফুলি কাগজকল, বেতবুনিয়া ভূ-ঊপগ্রহ কেন্দ্র, কাপ্তাই বাঁধ ইত্যাদি।

রাঙ্গামাটি সদরের রিজার্ভ বাজার থেকে বিভিন্ন সাইজের নৌকা ভাড়া করে চলে যেতে পারেন এইসব জায়গা ভ্রমণে!  তবে সাবধান দালালদের খপ্পরে পড়বেন না কিন্তু।

শুভলং যাবার পথে পেদা টিং টিং নামক অবকাশ কেন্দ্রে সময় কাটিয়ে সবগুলো স্পটেই আপনি ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে পারবেন। লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ পাহাড় আপনার মনকে এতই নাড়া দিবে যে মন চাইবে এখানেই ঘর বানিয়ে থেকে যেতে  । 

হ্যাঁ ঠিক!  এতটাই সুন্দর আমাদের দেশ !

অথচ আমরা চলেছি মনের খোরাক মিটাতে ভিন দেশে? একবার নিজের দেশটা ঘুরুন চারদিকে ! দেখতে পাবেন কত সুন্দর এই সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা আমাদের এই বাংলা। তার পর না হয় বিদেশ যাওয়া যাবে ক্ষণে! 

শ্যালো ইঞ্জিনের অবিরাম ভড ভড শব্দ ঝালাপালা করে দিতে পারে আপনার কান তবে ৩০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শুভলং ঝর্ণা থেকে ঝরে পড়া অবিরাম পানির ধারা চোখের নাগালে আসা মাত্রই আপনার ঝালা পালা কানের তালা একেবারে নিমিষেই যেন স্তব্ধ হয়ে যাবে!  বিষ্ময়ের এক  দৃষ্টিতে চেয়ে থাকবেন ওটার দিকে! আর  স্বচ্ছ পানিতে গোসল না সেরে ফিরতি পথ ধরলে আপনার মন অতৃপ্ত রয়েই যাবে।

এরপরে আরো রয়েছে ওয়াজ্ঞা চা এস্টেট, আসাম বস্তি ব্রীজ, উপজাতীয় জাদুঘর ও কর্ণফুলী পেপার মিল! এসকল জায়গা ঘুরে না আসলে যেন অতৃপ্তই থেকে যাবে আপনার আত্মা। বরকল, কাপ্তাই লেকের পাশে বসে চায়ের কাপে চুমু না দিলে নীল আকাশের বিশালতার উপলব্ধি কিভাবে করবেন?  

কোন এক গোধূলিতে  বসে কফি বা চা  পান করতে করতে উপভোগ করতে পারবেন অপরূপ সূর্যাস্তের দৃশ্য। এ সময় এতটাই অভিভূত হবে যে, সূর্য্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য আপনার মোবাইল ফোনে ধারণ করতেই ভুলে যাবেন।

আর বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর জীবন চিত্র  পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি দর্শনের আনন্দকে বাড়িয়ে দিবে আরও বহু গুনে। আর যদি ভাগ্যক্রমে যেতে পারেন তাদের কোন উৎসবের সময় তাহলে তো পুরোই সোনায় সোহাগ! 

কিন্তু যখন ফেরার পথ ধরবেন মনে হবে কি যেন একটা রেখে চলেছেন এই কাপ্তাই লেকের বুকে ! বিষন্ন মনে যান্ত্রিক জীবনে প্রবেশ করলেও সেই আনন্দক্ষণ মূহুর্তটাকে মনের কোনে রেখে দিতে পারবেন দীর্ঘদিনের স্মৃতি হিসাবে। 

তাহলে আর দেরি কিসের? 

ভ্রমণপিপাসু কিংবা প্রকৃতিপ্রেমী

যারা এই নয়নাভিরাম ও অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাখেলা দেখতে চান বা উপভোগ করতে চান বা স্মৃতির পাতায় এই অপরূপ দৃশ্য বাঁধিয়ে রাখতে চান তারা আর দেরি না করে উপভোগ করে ঘুরে  আসুন গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথে! 

লেখক

মাফরুহা সুমাইয়া

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE