হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী বাঙালি জাতি। খাদ্যরসিক বাঙালিরা প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে।
তবে এক্ষেত্রে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়।
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা।
যখনই পিঠা-পুলি,পায়েস কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ও মনে ভেসে ওঠে।
শীতকাল মানেই পিঠার সমারোহ। শীতকালীন পিঠার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল পরিচিত পিঠা হলো চিতই পিঠা, যা আজকাল শহরতলির অলি গলিতেও খুঁজে পাওয়া যায়।
■ চিতই পিঠার বাংলা নাম আশকে পিঠে (বাংলা: আসকে পিঠে বা আস্কে পিঠে)
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় চালের পিঠাগুলোর মধ্যে একটি।
এটি ঢাকা পিঠা, চিকুই পিঠা এবং সোরা পিঠা নামেও পরিচিত।
এটি দেখতে কিছুটা দক্ষিণ ভারতীয় ইডলির মতো।
পৌষ সংক্রান্তির সময়, আশকে পিঠা তৈরি করা হয়।
আশকে পিঠা সাধারণত গুড় দিয়ে খাওয়া হয়, তবে এটি মসুর ডাল, মটর,মাছের তরকারি এবং এমনকি মাংসের তরকারি দিয়ে খাওয়া হয়।
অতি সাধারণ এই পিঠাটি গুড় বা ঝাল শুঁটকি ভর্তা দিয়ে খেতে খুবই মজা। এই চিতই পিঠাকেই সারা রাত দুধে বা গুড়ের রসে ভিজিয়ে তৈরি করা হয় দুধ চিতই বা রস পিঠা।
■ খোলাজালি পিঠা বা খোলাজা পিঠা
অন্যান্য নাম:খোলাজা পিঠা, খোলা পিঠা, খোলা চিতই, পাতলা চিতই।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠা চিতই পিঠার সাথে এই পিঠার রূপ ও স্বাদে অনেক মিল রয়েছে।
খোলাজালি পিঠাকে চিতই পিঠার পাতলা সংস্করণও বলা যায়।
এ কারণে এ পিঠাকে পাতলা চিতই ও বলা হয়।
দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় খাবার দোসার সাথে নোয়াখালীর এ খোলাজালি পিঠার দেখতে অনেক মিল থাকলেও খেতে কিছুটা ভিন্ন।
খোলাজালি পিঠা বা খোলাজা পিঠা চালের গুঁড়ার তৈরি একটি বাঙালি পিঠা যা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের নোয়াখালী অঞ্চলে উৎপন্ন এবং খুবই জনপ্রিয়।
ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল অর্থাৎ নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার কিছু অঞ্চলে বেশ প্রচলিত এবং বহুলভাবে জনপ্রিয়।
এ পিঠা ঐতিহ্যগতভাবেই মাটির খোলায় তৈরি করা হয়।
সাদা রঙের এই পিঠা দেখতে গোলাকার, অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্রবহুল এবং খেতে মুচমুচে বা তুলতুলে হয়।
■ ভাপা পিঠা হল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের (যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারত) এক ধরনের চালের পিঠা।
ভাপা পিঠা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।
এটি একটি স্টিমড রাইস কেক (ভাপ বা বাষ্পের সাহায্যে তৈরি চালের পিঠা) যা চালের গুঁড়ার বা আটা দিয়ে তৈরি।
পিঠার পুর হিসেবে নারকেল এবং খেজুরের গুড় ব্যবহৃত হয়।
খেজুরের গুড়ের পরিবর্তে বাদামী চিনি বা আখের গুড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাধারণত বাংলাদেশে ভাপা পিঠা ডিসেম্বরে খাওয়া শুরু হয়।
■ গুড় গোলানো চালের আটা তেলে ছেড়ে দিয়ে যে পিঠা তৈরি করা হয়, তার নাম তেল পিঠা।
■ পাটিসাপটা পিঠা
গুড় দিয়ে তৈরি হালকা বাদামি অথবা চিনির তৈরি সাদা রঙের পাটিসাপটা আরেকটি সুস্বাদু পিঠা।
এটি হল এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মিষ্টি পিঠা বা স্টাফড প্যানকেক যা স্টাফ করা নারকেল বা মাওয়া দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এটি ময়দা এবং সুজি দিয়ে মোড়ানো হয়। এটি বেশিরভাগই চায়ের সাথে স্ন্যাকস হিসাবে পরিবেশন করা হয় তবে আপনার ক্ষুধা মেটাতে দিনের যে কোনও সময় এটি উপভোগ করা যেতে পারে।
এটি বাঙালিদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।পাটিসাপটা শুধু শীতকালেই নয়, আজকাল সারা বছরই বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকানে পাওয়া যায়।
■ চমত্কার আরেকটি পিঠা হলো নকশি পিঠা। এই পিঠার গায়ে বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা হয় বা ছাঁচে ফেলে পিঠাকে নানা রকম নকশার আদলে তৈরি করা হয় বলেই এ পিঠার এমন নাম।
নকশি পিঠা তৈরির জন্য প্রথমে আতপ চালের গুঁড়া বা আটা সেদ্ধ করে মণ্ড তৈরি করা হয়।
এই মণ্ড বেলে মোটা রুটির মতো তৈরি করে তার ওপর চাঁদ, তারা, মাছ, গাছ, ফুল, লতাপাতা ইত্যাদির নকশা করা হয়।
হাতের বদলে ছাঁচ দিয়ে পিঠাতে নকশা আঁকা হয়।
ছাঁচগুলো সাধারণত মাটি, পাথর, কাঠ বা ধাতু দিয়ে তৈরি হয়।
এসব ছাঁচের ভেতর দিকে নকশা আঁকা থাকে।
প্রতিবছরই শীতের আগমন থেকে শুরু করে শীতের শেষ পর্যন্ত গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে চলে পিঠাপুলির উৎসব।
পিঠা বাঙালির প্রিয় খাবার।
এ দেশে এমন মানুষ কমই আছে, যারা পিঠা পছন্দ করে না।
পিঠা নিত্যদিনের খাবার না হলেও শীতকালে বাংলার ঘরে ঘরে পিঠার ব্যাপক কদর রয়েছে। উৎসব আয়োজনেই পিঠা নামক বাড়তি খাবার তৈরি করা হয়।
এবং বর্তমানে শুধু বাড়িতে নয় বরং হাট বাজারেও হরেক রকমের পিঠার কদর বেড়েছে। শীতকালের এই পিঠা বিক্রি করে শতাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।
আমাদের আরও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
Writer
Kulsuma Bahar Bethi
Content Writing Intern
YSSE