শশী লজ:

ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত ময়মনসিংহ জমিদার বাড়িরই আরেক নাম শশী লজ। রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী পুত্রকে ভালোবেসে পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামানুসারে বাড়িটির নাম রাখেন শশী লজ। বাড়িটির পিছন দিকে রয়েছে একটি দোতল বিশিষ্ট স্নানাগার। যেখান থেকে মার্বেল পাথরে বাধানো বিশাল পুকুরের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়াও এই জমিদার বাড়ির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট হলো এখানে একটি পদ্মবাগান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অনেক প্রাচীন এবং দূর্লভ বৃক্ষের আবাসস্থল। বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব মুর্শীদকুলি খাঁর আমলে জমিদারি লাভ করে এই জমিদার বংশ। এরপর দীর্ঘদিন পর্যন্ত বংশীয় সিলসিলা চলতে থাকে পালক বা দত্তকপুত্রের মধ্য দিয়ে। শশীকান্ত আচার্য নিজেও সূর্যকান্ত আচার্যের দত্তক পুত্র ছিলেন এবং উনার মধ্য দিয়েই ময়মনসিংহের জমিদার বংশের সমাপ্তি ঘটে।

পুঠিয়া রাজবাড়ি:
মন্দিরে মন্দিরে ঘেরা এই রাজবাড়িটি রাজশাহীর পুঠিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই জমিদারির অন্যতম পূর্বপুরুষ নীলাম্বর ১৭০০ শতকে সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে “রাজা” উপাধি লাভ করেন এবং বংশপরম্পরায় তা পরবর্তীতে রাজবাড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই রাজবাড়ির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বিশাল বিশাল ছয়টি রাজ দীঘি এবং বাংলার বিভিন্ন স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করে তৈরি করা অনেকগুলো মন্দির। এই রাজবাড়িতে হাওয়াখানা নামক একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে যেটি মূলত তৎকালীন জমিদারদের একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র। ২০২১ সালে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঘেরা এই রাজবাড়িটিকে একটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বালাপুর জমিদার বাড়ি:
ঢাকার অদূরে নরসিংদীতে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি একটি সুবিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি। ১৯৪৭ সালে এই জমিদারির সর্বশেষ জমিদার কালীমোহন সাহা দেশ ত্যাগ করলে সমাপ্তি ঘটে বালাপুর জমিদারির।সুবিশাল আকৃতির প্রত্নতাত্ত্বিক নৈপুণ্যে ঘেরা এই জমিদার বাড়িটি সংস্কারের অভাবে হারাতে বসেছে এর জৌলুস।এখনো প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত এই জমিদার বাড়িটিতে উঁকি দিলে দেখা মিলে বিরল প্রজাতির অনেক গাছ-গাছালি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের।

ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি:
১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই জমিদার বাড়িটি প্রসিদ্ধ লাভ করে এই জমিদারির অন্যতম সুযোগ্য সন্তান স্যার সৈয়দ নওয়াব আলীর সময়কালে। এই জমিদার বাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বাগান এবং চিড়িয়াখানা। ধানবাড়ী জমিদার বাড়ির বংশধরগণ জীবিত থাকায় এই বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য আবহমান কাল ধরে টিকে আছে। মোঘল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে তোরণ,পায়েকপেয়াদাদের বসতিস্থল, নায়েবঘর এবং বৈঠকঘর। বর্তমানে দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেশ নামডাক কুড়িয়েছে এই জমিদার বাড়িটি।

মুড়াপাড়া রাজবাড়ি:
নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত মঠেরঘাট জমিদার বাড়ি নামে। নাচঘর, আস্তাবল, কাচারি ঘর সহো এই বাড়িটি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। নাটোরের রাজার একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন এই জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা রামরতন ব্যানার্জি। মূলত তিনি তার বিশ্বস্ততার পুরষ্কার স্বরূপ রাজার কাছ থেকে মুড়াপাড়া অঞ্চলে সম্পত্তি লাভ করেন এবং এই জমিদারিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে শতবর্ষ প্রাচীন এই জমিদারির শেষ জমিদার জগদীশ চন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত কঠোর, যিনি খাজনার জন্য প্রজাদের চুল কেটে দেয়া থেকে শুরু করে ঘর-বাড়ি পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিতেন। ১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে দেশ ত্যাগ করলে সমাপ্তি ঘটে এই অঞ্চলের জমিদারির এবং সেই সাথে ফাঁকা হয়ে যায় মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ি।

জমিদার নেই, সেই সাথে নেই জমিদারিও! তবুও আবহমান কাল ধরে পূর্বপুরুষদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, রুচিবোধ, সৌখিনতার স্মৃতি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে এসব জমিদার বাড়ি। এই বাড়ি গুলোর প্রতিটি উপদান, প্রতিটি কর্ণার, প্রতিটি আসবাবপত্র, প্রতিটি স্থাপত্য বহন করে চলেছে অনেক না বলা কথা, অনেক স্পর্শ, জমিদার পারিবারিগুলোর সুখ-দুঃখ;সেই সাথে পারিবারিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাস। সঠিক পরিচর্যা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপই একমাত্র রক্ষাকর্তা হিসেবে আগলে রাখতে পারে ইতিহাসের এসকল নিরব সাক্ষীদের। হয়তো তবেই দৃষ্টিনন্দন এবং বিলাস বহুল এই বাড়িগুলো সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আরো কয়েক শতাব্দী!

আরো এরকম ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

লেখক
মারজানা আক্তার মারিয়া
ইন্টার্ন
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE.