“উদ্যোক্তা” এই শব্দের সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। একজন ব্যক্তি যখন নিজের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে কোন চাকরি বা কারো অধিনস্ত না থেকে নিজে থেকেই কোন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার চেষ্টা করেন বা পরিকল্পনা শুরু করেন তখন তাকে উদ্যোক্তা বলা হয় । বর্তমানে বাংলাদেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে,  নারীদের এই সংখ্যা এই ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ভাবে এগিয়ে আছে।

 

নাদিয়া বিনতে আমিন:

 

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ওয়েন্ড সভাপতি নাদিয়া বিনতে আমিন। তিনি মনে করেন, একটা দেশের প্রান্তিক নারী সমাজের যখন উন্নতি হবে তখন সেই দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশের নারীর সক্ষমতা অর্জনের জন্য তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন দেশজ পণ্য দেশে ও বিদেশে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের উদ্যোগ নিয়ে তাদের অর্থনীতিকে মজবুত করার চেষ্টা করছেন। তার সুফল ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে।

’ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান উইমেন এন্টারপ্রেনারস’ (FIWE) বাংলাদেশের নারীর কর্মসংস্হান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে বিশেষ অবদানের জন্য এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নাদিয়া বিনতে আমিনকে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রদান করে সম্মানিত করেছেন।

নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তাঁদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি সকলকে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। নারীরা তাদের নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে আগামীর পৃথিবীতে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করবে এটাই আজ নারী সমাজের প্রত্যাশা।

 

সামিরা জুবেরি হিমিকা:

নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ার আগে তিনি কাজ করছেন দেশি-বিদেশি নানা যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে। অভিজ্ঞতার ঝুলি করেছেন সমৃদ্ধ, শিখেছেন অনেক কিছুই। শেষে নিজেই আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে গড়ে তোলেন টিম ইঞ্জিন নামের প্রতিষ্ঠান, যার ম্যানেজিং ডিরেক্টর তিনি নিজেই। সামিরা জুবেরি হিমিকা’র কথা বলছি।দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করে তিনি কাজ শুরু করেন ইউএনডিপিতে। পরবর্তীতে কাজ করেন বিবিসি ওয়াল্ড সার্ভিস, বাংলাদেশের ডেপুটি প্রধান হিসেবে। এরপরে কাজ করেন জিপি হাউজ আর্ট হাব নামের এক প্রজেক্টে। এটি ছিল কোনো বেসরকারি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে পরিচালিত প্রথম উদ্যোগ। প্রায় ৫-৬ বছর এভাবে কাজ করে তিনি নিজেই একদিন উদ্যোগী শুরু করেন নিজের প্রতিষ্ঠানের। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘টিম ইঞ্জিন’ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা নীতি নির্ধারণী বিষয়ে কাজ করছে।একজন মহিলা হিসেবে টেলিকম সেক্টরে কাজ শুরু করা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু হিমিকার নানা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে সাহায্য করেছে এক্ষেত্রে। নিজের প্রতিষ্ঠান বাদেও তিনি বেসিসের একজন এক্সিকিউটিভ কমিটি সদস্য। বাংলাদেশে প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে তিনি এখন এক অতি পরিচিত নাম।

সেলিমা আহমাদ:

 

সেলিমা আহমাদ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী। তিনি নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। তিনি বর্তমানে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব ব্যাংক জনতা ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালে ব্যবসায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি অসলো বিজনেস ফর পিস পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর উইমেনের বৈশ্বিক দূত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষক। নিটল-নিলয় গ্রুপের ২৬টি কোম্পানী রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং ৩টি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী। এর মধ্যে রয়েছে অটোমোবাইল, সিমেন্ট, পেপার, রিয়েল এস্টেট, ইলেকট্রনিক্স এবং আর্থিক সেবা।

 

সাবরিনা ইসলাম:

 

মাত্র ২৪ বছর বয়সেই নতুন কিছু করার চিন্তা থেকে কাজ শুরু করেন সাবরিনা। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত অন্যতম প্রাচীন কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘কারিকা’তে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আইনে পড়ার সময়ই ১৯৯৮ সালে তিনি ছোট্ট পরিসরে তার প্রতিষ্ঠান ‘রিফ্লেকশন’এর যাত্রা শুরু করেন। সেসময়ে ইস্কাটনের ৪০০ স্কয়ার ফিট দোকানে মাত্র দুজন কর্মী কাজ করত।ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ সম্পন্ন করা সাবরিনা মহিলা উদ্যোক্তা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।মহিলাদের উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।মহিলাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে উৎসাহিত করার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।সাবরিনা জানান, বাংলাদেশে মহিলা উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়াতে সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের মহিলাদের বিভিন্ন কাজ শেখার ট্রেনিং সেন্টারও অনেক কম বলে মনে করেন তিনি। মহিলাদের সঠিক ট্রেনিং, পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্থিক ঋণ সুবিধা এবং অন্যান্য সেবার ব্যবস্থা করা হলে বাংলাদেশেও মহিলা উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

 

রুবানা হক:

 

রুবানা হক বাংলাদেশের একজন স্বনামখ্যাত নারী উদ্যোক্তা।তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মোহাম্মদী গ্রুপ একটি পোশাক নির্মাতা ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রসিদ্ধ। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক (রাজনীতিবিদ)। রুবানা হক আনিসুল হকের স্ত্রী।বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর নির্বাচিত প্রথম নারী সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পরপর দুবার “বিবিসি ১০০ নারী” নিবন্ধে তার স্থান পেয়েছিলেন।তিনি একজন কবি ও লেখক। ২০০৬ সালে তিনি কবিতার জন্য সার্ক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর ভাইস চ্যান্সেলর।

 

নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমন সফলতার সাথে ব্যবসা করছেন নারী উদ্যোক্তারা। তারা নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরা তৈরি করছেন। তৈরি করে নিচ্ছেন নতুন আত্মপরিচয়।  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী উদ্যোক্তার এই বিপুল সম্ভাবনা শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা মেলে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তার। যারা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে।

এরকম আরো ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। 

 

লেখক, 

প্রবাল দেব নাথ

ইন্টার্ণ, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট, 

YSSE