ছোট থেকে বড় সকলেই গোয়েন্দা গল্প পড়তে পছন্দ করে। বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দা গল্পের রহস্যের টানটান উত্তেজনা, ধাঁধায় ফেলে দেয়া অপরাধ কল্পকাহিনী বা রহস্য কল্পকাহিনী তে গোয়েন্দারা মাঁথা খাটিয়ে তদন্ত করে। প্রতিটি গোয়েন্দা গল্পে টানটান উত্তেজনায় রোমহষর্ক কল্পকাহিনী তে ডুব দিতে পাঠকরা গোয়েন্দা গল্প পড়তে পছন্দ করে। 

বাংলা সাহিত্যে এমন অনেক গোয়েন্দা চরিত্র রয়েছে। চলুন জেনে আসি, বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় পাঁচটি গোয়েন্দা চরিত্র সম্পর্কে। 

 

  • সত্যজিৎ রায়ের “ফেলুদা সিরিজ”

ফেলুদা, নামটি কে না শুনে থাকবে। বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ রায়ের কিংবদন্তী গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা। ফেলুদার পুরো নাম প্রদোষ চন্দ্র মিত্র। ফেলুদার প্রধান সহকারী তোপশে এবং অনুসন্ধিৎসু লালমোহন গাঙ্গুলীর সাথে, ফেলুদা অতুলনীয় বুদ্ধি এবং তার পর্যালোচনা, বিশ্লেষণের  মাধ্যমে রহস্যের উন্মোচন করে। ফেলুদা শার্লক হোমসের বিশাল ফ্যান ছিলেন। ফেলুদা রহস্যগুলোর জোট ভাঙাতে তার প্রধান হাতিয়ার বুদ্ধি। ফেলুদা সিরিজ, পাঠকদেরকে কেবল রহস্যময় রহস্যের চেয়ে বেশি কিছু প্রদান করে।  “ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি” থেকে “সোনার কেল্লা” পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের গল্প বলার ক্ষমতা এবং ফেলুদার ক্যারিশমা পাঠকদের কাছে প্রিয় করে তোলে। 

 

  • শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের “ব্যোমকেশ বক্সী”

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের “ব্যোমকেশ বক্সী” একটি জনপ্রিয় চরিত্র যা ব্যোমকেশের দুঃসাহসিকতার এবং প্রখর পর্যবেক্ষণ দক্ষতার মাধ্যমে রহস্য জট 

ভাঙার গল্পকে তুলে ধরে। ব্যোমকেশ নিজেকে সত্যান্বেষী বলতেই পছন্দ করে। ব্যোমকেশ বক্সী প্রথম আসে “ সত্যান্বেষী” গল্পের মাধ্যমে। ব্যোমকেশের বন্ধু অজিত, ব্যোমকেশের অভিযানগুলো লিপিবদ্ধ করে । ব্যোমকেশের স্ত্রীর নাম সত্যবতী। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ নিয়ে লেখার পর তুমুল জনপ্রিয়তা পায় পাঠকদের কাছে।  “সত্যান্বেষী” এবং “অর্থমানার্থম” রহস্য সমাধানের মাধ্যমে গল্পের আকর্ষণ আজও পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়। 

 

  • সমরেশ মজুমদারের “অর্জুন” 

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুন।  অর্জুনের বাড়ি জলপাইগুড়ি শহরে। বিদেশেও অর্জুনের কয়েকটি অভিযান রয়েছে। অর্জুন নিজেকে গোয়েন্দা পরিচয় দিতে পছন্দ করেনা, সে নিজেকে সত্যসন্ধানী বলে থাকে। অর্জুনের গুরু প্রাক্তন গোয়েন্দা অমল সোম। এছাড়াও  মেজর চরিত্র প্রায়শই অর্জুনের সঙ্গী হয়েছেন বিভিন্ন অভিযানে। সত্যসন্ধানী অর্জুন সিরিজের কাহিনীগুলির মধ্যে রয়েছে খুনখারাপি, লাইটার, কালাপাহাড়, দিনদুপুরেই রাতদুপুর ইত্যাদি। 

 

  • নিহাররঞ্জন গুপ্তের “কিরীটী রায়”

নীহাররঞ্জন গুপ্ত আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কিরীটী রায়ের সাথে, একজন মেধাবী গোয়েন্দা যার বিভ্রান্তিকর কেস সমাধানে অতুলনীয় দক্ষতা রয়েছে। “কিরীটী অমনিবাস”, কিরীটী রায় এমন একটি চরিত্র যা বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যে একটি অনন্য স্থান তৈরি করেছে। কিরীটী রায় রহস্যভেদী হিসেবেই নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন। তার সহকারী সুব্রত, স্ত্রী কৃষ্ণা।  নীহাররঞ্জন গুপ্তের সৃষ্টি কিরীটী রায় বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। কিরীটীর অ্যাডভেঞ্চারের মাধ্যমে, পাঠকরা একটি রোমাঞ্চকর যাত্রায় মগ্ন থাকে। 

 

  •  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “কাকাবাবু”

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্টি, রাজারায় চৌধুরী, যাকে সবাই ‘কাকাবাবু’ বলে জানে, বাংলা সাহিত্যে একটি প্রিয় এবং আইকনিক চরিত্র হিসাবে আবির্ভূত হয়, তার অদম্য চেতনা এবং দুঃসাহসিক চরিত্র দিয়ে পাঠকদের হৃদয় কেড়ে নেয়। কাকাবাবু মধ্যবয়সী, সাহসী, বুদ্ধিমান একজন ব্যাক্তি। কাকাবাবুর আসল নাম ‘রাজা রায়চৌধুরী’। এক রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তার একটি পা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবুও তিনি থেমে না থেকে একটি ক্রাচ ও ভাইপো সন্তু এবং  সন্তুর চাপাবাজ বন্ধু জোজোকে নিয়ে অনেক রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চার করেছেন। কাকাবাবু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও বুদ্ধির জোরে বিভিন্ন জটিল সব সমস্যার সমাধান করেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কাকাবাবুকে নিয়ে মোট ৩৬টি উপন্যাস ও ৬টি গল্প লিখেছেন। কাকাবাবুকে নিয়ে প্রথম লেখা “ভয়ঙ্কর সুন্দর” প্রকাশিত হয় ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকায়।  কাকাবাবুর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীগুলো হলো সবুজ দ্বীপের রাজা, খালি জাহাজের রহস্য, জঙ্গলগড়ের চাবি ইত্যাদি।

 

এই গোয়েন্দা গল্পগুলো, বাংলা সাহিত্যকে করেছে অতুলনীয়। রহস্য যাত্রা শুরু করার সাথে সাথে, এমন এক জগতে নিমজ্জিত হয় যেখানে রহস্য প্রচুর এবং বুদ্ধির জয় হয়। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ৫টি গোয়েন্দা চরিত্র ছাড়াও আরো অনেক গোয়েন্দা চরিত্র রয়েছে। কৌতুহল, রহস্যময়, রোমাঞ্চে ভরপুর গোয়েন্দা গল্পে পড়তে এই ৫টি গোয়েন্দা চরিত্র বেছে নিতে পারেন। 

 

আরোও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক  করুন। 

 

লেখিকা, 

তৌহিদা

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE