শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার, এবং আগামী দিনের দেশের বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের গৌরববাদী ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষার প্রস্তাবনা প্রযুক্তির জোরে প্রগতি করছে।
বৃদ্ধ বিদ্যালয় সিস্টেমে পড়া, পুঁথিগত শিক্ষাকে পেছনে ফেলে দক্ষতা এবং প্রযুক্তির জোরে এগিয়ে চলা, বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রসমূহের সাথে তাল মিলিয়ে চলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেয়ার কারণ :
বিদেশে পড়াশোনা প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য দেশের শিক্ষাসংস্থানে আপনার উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, এটি আপনার পেশাগত জীবনে অধিক সাহায্য করতে পারে।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ-সুবিধা সীমিত হতে পারে, তাই বিদেশে পড়া লেখার সুযোগ সুবিধা নিয়ে, আপনার উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে।
বিদেশে পড়া আপনার নেতৃত্ব ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, এটি আপনাকে নিজেকে একটি বিশ্ব নাগরিক হিসেবে পরিপূর্ণ করতে সাহায্য করতে পারে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিদেশে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার স্বপ্ন নিয়ে তার স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে। কোন কোন শিক্ষার্থী আবার এইচএসসি পাস করার পর স্নাতক লেভেলে পড়ার জন্য পাড়ি জমায় তাদের স্বপ্নের দেশে।
তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী যে লেভেলের হোক না কেন তার বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাকে কিছু পূর্ণ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক একজন শিক্ষার্থীর বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কি ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন হয়।
১. প্রস্তুতি গ্রহণ :
একাডেমিক রেজাল্টে গুরুত্ব দিতে হবে।
স্কলারশিপ ভিসার জন্য যোগ্য করে তোলা
একাডেমি সনদ সংগ্রহ করে রাখা।
তারই পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস কিংবা পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকা আবশ্যক।
বিদেশের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন।
২. ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি :
সঠিকভাবে, ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা প্রস্তুতি নেওয়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ভাষা-গত দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা স্কোর উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই পথে যাওয়া আপনাকে আপনার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সাহায্য করতে পারে।
প্রস্তুতি পূর্বে যে সকল বিষয়গুলোর উপর নজর দেওয়া উচিৎ
- ইংরেজি ভাষা শিখার প্রস্তুতির জন্য আপনি অফলাইন কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করতে পারেন।
- টিউটরিং সেন্টারও রয়েছে যেখানে ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার জন্য সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ এটি,ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা (IELTS, TOEFL, PTE) এছাড়াও কিছু স্ট্যান্ডারাইজড টেস্ট (GRE, SAT ইত্যাদি পরীক্ষার স্কোর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ইংরেজি দক্ষতা স্কোর বাড়াতে স্বাধীনভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অনলাইন সোর্স, প্র্যাকটিস টেস্ট, ও বই ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইংরেজি বলা, শেখা, শেখা ও বোঝার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সময় দিতে হবে এবং ইংরেজি বুক ক্লাবে যোগ দিন বা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
Duolingo, Google translate , Chat GPT এই অ্যাপস গুলো আপনাকে ইংরেজি শিখতে অনেকটা এগিয়ে রাখবে।
৩. রিসার্চ পেপার :
বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে রিসার্চ পেপারের গুরুত্ব অত্যধিক। নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উল্লেখ করা যায় :
বিদেশে বৃদ্ধিশীল শিক্ষা প্রদানকারী সংস্থাগুলি রিসার্চ পেপারের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। স্কলারশিপে একটি সিডিপি বা পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রণয়নের তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে, যা আপনার উচ্চশিক্ষার জন্য একটি স্পেশাল স্কলারশিপ অর্জনে সাহায্য করে।
রিসার্চ পেপার আপনার গবেষণা সম্পর্কিত দক্ষতা এবং প্রফেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির একটি দরজা। এটি আপনার গবেষণা শুরু করা থেকে প্রকাশ করা, এবং গবেষণা সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে, যা ব্যবসায় এবং গবেষণা সম্পর্কিত ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা সম্পর্কিত স্কলারশিপ : অনেক স্কলারশিপের আবেদনের সময়, গবেষণা পেপারের মান একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। একটি ভাল রিসার্চ পেপার, সিজিপিএ আপনাকে পুর্নাঙ্গ স্কলারশিপ পেতে অবশ্যই সাহায্য করবে।
৪. সুপারিশ:
যখন বিদেশে উচ্চ শিক্ষার কথা আসে, তখন সুপারিশ চিঠি গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত আপনাকে ২-৩ জনের সুপারিশের প্রয়োজন হবে যারা আপনাকে ভালোভাবে চেনে। যাইহোক, আপনি যদি পরিবারের কোনো সদস্য, শিক্ষক, পরামর্শদাতা বা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে সুপারিশ পেতে সক্ষম হন, তাহলে সেটি আপনাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে।
৫. অভিজ্ঞতা:
উচ্চশিক্ষা সম্পন্নের পর অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি বিদেশে চাকরি নিশ্চিত করতে অনেক উপকৃত হতে পারেন। অতএব, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আপনাকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অংশীদার হওয়ার মাধ্যমে নিজস্ব কিছু দক্ষতা বৃদ্ধি করা অনেক উপকারী হতে পারে।
বাংলাদেশে, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে যেগুলোর সাথে আপনি যুক্ত হতে পারেন। এই স্বেচ্ছাসেবী অভিজ্ঞতা আপনাকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া –
প্রথমত আপনাকে নির্বাচন করতে হবে উচ্চ শিক্ষার জন্য আপনার পছন্দনীয় দেশ কোনটি। নিজের পছন্দের দেশ নির্বাচনের পরেই আপনাকে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে।
একবার আপনি একটি দেশ বেছে নিলে, তারপর আপনি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং জীবনযাত্রার মানের মতো বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে একটি শহর নির্বাচন করতে পারেন। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, কানাডা এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো তাদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আধুনিক জীবনযাত্রার মানের জন্য সুপরিচিত।
যাইহোক, একটি দেশ বাছাই করার সময় বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যেমন অধ্যয়নের খরচ, আবাসন, স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ ইত্যাদি।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ :
– আপনার পছন্দনীয় বিষয়
– শিক্ষার মান
– শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের মান
– শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান
– কোর্সের সময়কাল এবং টিউশন ফি
– বৃত্তির সুযোগ
– বাসস্থান
– ভর্তির যোগ্যতা
একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করার সময় নিজেকে একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এর পরিবর্তে, আপনার যোগ্যতা এবং আগ্রহের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আবেদন করুন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার অর্জনে বৃত্তির জন্য আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কী? এখানে একটি তালিকা আছে :-
১. বৃত্তি আবেদন ফর্ম : যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বৃত্তি ফর্ম ডাউনলোড করুন এবং পূরণ করুন।
২. একাডেমিক সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট : আপনার শিক্ষাগত সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন এবং যাচাই করুন।
৩. পাসপোর্ট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি : কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদসহ একটি বৈধ পাসপোর্ট প্রস্তুত রাখুন এবং আবেদন পত্রের সাথে এর অনুলিপি জমা দিন।
৪. ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষার স্কোর : আপনার ইংরেজি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার স্কোর সংগ্রহ করুন এবং প্রত্যয়ন করুন।
৫. উদ্দেশ্যের বিবৃতি : আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য একটি ভাল SOP লিখুন।
৬. সুপারিশ পত্র : আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ বা ২ জন প্রফেসরের কাছ থেকে সুপারিশ পত্র নিতে পারেন যা আপনাকে বৃত্তি পেতে কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখবে।
৮. পিতামাতার আর্থিক তথ্য : আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রমাণ করার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় নথি প্রদান করুন।
৯. স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র : শারীরিক সুস্থতা যাচাই করার জন্য একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র জমা দিন।
১০. গবেষণাপত্র : আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে প্রকাশিত নিবন্ধন এবং জার্নাল লিঙ্ক প্রদান করুন।
বর্তমানে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অত্যন্ত চাহিদা রয়েছে। একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের ফলে চাকরির সুযোগও অধিক। ফলশ্রুতিতে, আপনি যদি একটি উচ্চ মানের ক্যারিয়ারের মাধ্যমে ভালো জীবন যাপনের আকাঙ্ক্ষা করেন, তাহলে বিদেশে অধ্যয়ন করা আপনার জন্য একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখক
তাবাসসুম আক্তার তাবা
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE