কোনো স্থান বা এলাকার ৩০৪০ বছরের গড় আবহাওয়াই হলো জলবায়ু। আমাদের পৃথিবীটা একটা ভৌগোলিক স্থান, আর এই স্থানের জলবায়ু নির্ভর করে বেশ কিছু নিয়ামকের উপর। আমাদের পৃথিবীর ভাগ জল এবং এক ভাগ স্থল। এই জলভাগের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে সমুদ্র। এই সমুদ্র প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হচ্ছে এবং প্রবাহিত হওয়ার ফলে স্রোত উৎপন্ন হচ্ছে এবং সেটা নানা ভাবে বিশ্ব জলবায়ুকে প্রভাবিত করছে। সমুদ্রস্রোত বিশ্ব জলবায়ুর এক অপরিহার্য নিয়ামক।

আসুন কিভাবে সমুদ্রস্রোত বিশ্ব জলবায়ুকে প্রভাবিত করছে সেটা জেনে নেই,

১। উষ্ণতা : প্রতিটি মহাদেশ বা দেশের পাশ দিয়ে অনেক বড় বড় সাগর মহাসাগর প্রভাবিত হচ্ছে। যে দেশের উপকূলের কাছ দিয়ে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়, সেই দেশের জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। উষ্ণ স্রোতের উপর দিয়ে আগত বায়ু উপকূলের দেশগুলোর উত্তাপ বৃদ্ধি করে  

আবার শীতল স্রোত উপকূলস্থ দেশগুলোর জলবায়ুকে অপেক্ষাকৃত শীতল করে। শীতকালে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ইংল্যান্ড, নরওয়ে এমনকি জাপানেও ঠান্ডা কমে যায়। লন্ডন অপেক্ষাকৃত নিউইয়র্ক দক্ষিণে অবস্থিত হলেও নিউইয়র্কের কাছ দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় বলে সেখানে শীতকালে লন্ডন অপেক্ষা তীব্র শীত অনুভূত হয়।

২। জলীয় বাষ্প : উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে সমুদ্রবায়ু প্রবাহিত হয়ে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প আহরণ করে। এই বায়ু শীতল অঞ্চলে প্রবাহিত হলে উপকূলের কাছে বেশি বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে। আবার শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুর প্রভাবে উপকূলসহ দেশের বায়ু বেশি শীতল হয়। ঐরূপ বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি না হয়ে তুষার পাত হয়। এজন্য ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে উত্তর আমেরিকার ল্যাব্রাডর উপদ্বীপে প্রচুর তূষারপাত হয়। 

৩। কুয়াশা : উষ্ণ শীতল স্রোতের মিলনস্থলে এদের পরস্পরের তাপের বেশি প্রার্থক্যের জন্য এবং অতি অল্প স্থানে বেশি তাপের পরিবর্তনের ফলে কুয়াশা ঝড়বৃষ্টি হয়ে থাকে। 

৪। মরুভূমির সৃষ্টি : যে সমস্ত দেশের উপকূলের পাশ দিয়ে শীতল সমুদ্র স্রোত বাহিত হয়, সেই সমস্ত অঞ্চলে খুব নগন্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় বলে, বৃষ্টিপাতের অভাবে মরুভূমির সৃষ্টি হয়। যেমনআফ্রিকার উত্তর পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে সাহারা মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। আবার দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণপশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত শীতল হ্যামবোল্ড স্রোতের প্রভাবে পৃথিবীর শুষ্ক তম মরুভূমি আটাকামার সৃষ্টি হয়েছে।

৫। এল নিনো লা নিনার প্রভাব : এল নিনো লা নিনা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত উষ্ণ (এল নিনো) শীতল স্রোত (লা নিনা) এই দুটি উষ্ণ শীতল স্রোতের পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব প্রশান্ত মহাসাগরের দুই উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

যেমন লা নিনা বছরগুলিতে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে এলনিনো যে বছর আবির্ভূত হয় সে বছরগুলিতে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে (পেরু ইকুয়েডর উপকূল) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় পশ্চিম উপকূলে (দক্ষিণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) হ্রাস পায়।

সমুদ্রস্রোত না থাকলে আমাদের পৃথীবির তাপমাত্রা কখনো পরিবর্তন হতো না বরং পৃথিবীতে যেই স্থানে হৈম শীতল সেই স্থানে তীব্র শীত বিরাজমান থাকতো আবার তীব্র উষ্ন অঞ্চলে সব সময় তীব্র উষ্নতা বিরাজ করতো।

কি দারুন না বিষয়টা?

আমাদের এই বিশ্বকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের জলভাগকে এজন্যে দূষনমুক্ত রাখা উচিত। কেননা সমুদ্র টিকে থাকলে আমাদের এই অতি পরিচিত পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় থাকবে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন না ঘটলে আমরা মানুষজাতি শান্তিতে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারবো। সমুদ্রের ক্ষতি না করে টেকসই উপায়ে ব্যাবহার করা নিশ্চিত করতে হবে।

তবেই না আমাদের জীবন সমুদ্রস্রোতের ন্যায় প্রভাবিত হবে সুখের সাগড়ে।

 

আরোও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

লেখক

মোঃ রায়হান কবীর

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE