যাদের রাগ বেশি তাদের মন ভাল হয়, পুরুষ মানুষের রাগ বেশি থাকে, মেয়ে মানুষের এত রাগ দেখালে চলেনা , পৃথিবীর সব প্রচলিত মিথ্যেগুলোর মধ্যে এগুলো  কয়েকটি। রাগ নিয়ে আমাদের হাজারো কথা। কিছু ক্ষেত্রে তো রাগ করাকে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে নিই। কিন্তু এই রাগ কখনোই স্বাভাবিক বা সাধারণ হতে পারেনা। 

 

রাগ আমাদের নিজেদের তৈরি। কোনো ধর্মেও রাগের স্থান নেই। আমরা চাইলেই রাগ নামক বস্তুকে উধাও করে ফেলতে পারি শুধু মাত্র নিজের চিন্তা শক্তি ও ভাবনা শক্তিকে বসে এনে। এখন কথা হচ্ছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই পরম্পরা আজ আমি বললাম বলে কি নিমিষেই শেষ হবে? না হবেনা। তবে পৃথিবী, সমাজ, পরিবার কে সুন্দর ও মাধুর্যপূর্ন করতে রাগ নিয়ন্ত্রণ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা জানলে মানুষ নিজ গরজেই এই বিষয়ে সতর্ক হবে।

 

 রাগ প্রকাশে তাতক্ষণিক কিছুটা স্বস্তি পেয়ালেও তা কিন্তু শরীরের জন্য ডেকে আনে দীর্ঘায়ু রোগ।

এনটিভি এর একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাগের দরুন কি কি ক্ষতি হয়। নিম্নে তুলে ধরা হলো:

 

১. ক্রোধ বা রাগ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়

অতিরিক্ত রাগ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, টানা দুই ঘণ্টা যদি কেউ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে তাঁর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণে। 

 

২. স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে

অতিরিক্ত রাগ কিন্তু স্ট্রোকেরও ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যদি আপনার হুট করে রাগ উঠে যায় এবং তা অনেকক্ষণ ধরে স্থায়ী, তবে দ্রুত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কেননা, এটি মস্তিষ্কের ওপর চাপ ফেলে। এতে মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো বন্ধ হয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।  

 

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়

আপনি যদি সব সময় রেগে থাকেন বা স্বাভাবিকভাবে আচরণ করতে না পারেন, দেখবেন কেমন যেন দুর্বল লাগছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, টানা ছয় ঘণ্টা মন-মেজাজ খারাপ থাকলে বা রেগে থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হয় শরীরে। 

 

৪. বিষণ্ণতা বাড়ায়

অতিরিক্ত রাগ বা মেজাজ মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা তৈরি করে। কোনো বিষয়ে রেগে গেলে এবং বিষয়টি সমাধান করতে না পারলে আমাদের মধ্যে বিষণ্ণতা তৈরি হয়। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা  করুন। রাগ দেখিয়ে কিন্তু সমস্যার সমাধান করা যায় না। শুধু শুধু মানুষের কাছে অপ্রিয় হতে হয়। 

 

৫. আয়ু কমিয়ে দেয়

রাগ মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়। গবেষণায় বলা হয়, সুখী মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচে। সব সময় ক্ষেপে গেলে বা অল্পতেই রাগ করার প্রবণতা থাকলে আপনি কিন্তু নিজের সুখকেই নষ্ট করছেন। রাগ সংবরন ও ক্ষমা করাও কিন্তু ইবাদত। আমরা ইবাদত ও সোয়াবের উসিলায়ও আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ এ আনতে পারি।

 

শাঈখ মুহাম্মদ উছমান গনী বলেন,নবী করিম (সা.) বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ (আবু দাউদ)। এ ছাড়া নবীজি (সা.) শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বলেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো)

“আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম”

অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (মুসলিম, অধ্যায়: ৩২, হাদিস: ৬৩১৭)

 

জীবনের এক কঠিনতম সময়ে আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) তায়েফে গিয়েছিলেন, আশা করেছিলেন তায়েফবাসী তাঁর কথা শুনবে, তাঁকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সহযোগিতার পরিবর্তে তিনি পেলেন অপমান। তাঁর শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পায়ে গিয়ে জমাট বাঁধল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একজন ফেরেশতা এলেন। ফেরেশতা তায়েফের দুপাশের পাহাড় এক করে দিয়ে তায়েফবাসীকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু দয়াল নবী (সা.)-এর উত্তর ছিল, ‘ (না, তা হতে পারে না) বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশে এমন সন্তান দেবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না।’ (বুখারি, খণ্ড: ৪, অধ্যায়: ৫৪, হাদিস: ৪৫৪)

 

হজরত আলী (রা.) এক যুদ্ধে অমুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধানকে সম্মুখযুদ্ধে ধরাশায়ী করলেন এবং যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন, তখন তিনি আলী (রা.)-এর মুখে থুতু নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আলী (রা.) লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলেন। তখন ওই সেনাপ্রধান বললেন, ‘আপনি আমাকে হত্যা করতে পারতেন, কিন্তু তা করলেন না কেন?’ উত্তরে আলী (রা.) বললেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। আপনার সঙ্গে আমি যুদ্ধ করেছি শুধু আপনার অবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহের কারণে। আমার মুখে থুতু নিক্ষেপের পর আমি যদি আপনাকে হত্যা করতাম, তবে তা হয়ে পড়ত আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহার বহিঃপ্রকাশ, যা আমি কখনোই চাই না।’ (সাহাবা চরিত)

 

নবীজি (সা.) একবার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা অধিক শক্তিশালী মনে করো?’ তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘যে ব্যক্তি কুস্তিতে অন্যকে হারিয়ে দিতে পারে।’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (বুখারি: ৫৬৮৪)আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগমাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী, তাদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করে। যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৬-৩৭)

 

Written by,

Sadia Akter,

Intern, Content Writing Department,

YSSE.