আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেছেন, লেখক হিসেবে আপনার বিচার করা উচিত নয়, বোঝা উচিত।হেমিংওয়ের এই উক্তিটি লেখকদের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনই ব্লগিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য। কেননা ব্লগিং মানেই যে শুধু লেখালেখি করা বিষয়টা এমন নয়, কীভাবে ব্লগিংকে যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে এর সেরাটা পাওয়া যায় এই সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা উচিত। 

ব্লগিং এর যাত্রা 

ব্লগ শব্দটি এসেছে ইংরেজি Weblog থেকে যেটি প্রথম ব্যবহার করেন ১৯৭৭ সালে মার্কিন নাগরিক জন বার্জার। পরবর্তীতে শব্দটি দুভাগে বিভক্ত হয়; We এবং Blog, যার অর্থ দাঁড়ায়আমরা ব্লগ করি‘, যা সামাজিক দিকটিকেও তুলে ধরে। তবে ব্লগ তো কেবল ইংরেজি শব্দ, তাহলে এর বাংলা পরিভাষা কী হতে পারে?আসুন সেটা জেনে নেওয়া যাক!

ব্লগের বাংলা পরিভাষা শব্দ দাঁড়ায় নোট বা ডায়েরি যেখানে আমরা নিজেদের রোজনামচা লিখি। তবে বর্তমান প্রযুক্তির সাথে সাথে ব্লগিং এখন আধুনিক জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কেননা ব্লগের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের মুক্তবুদ্ধির চর্চা করার সুযোগ পায়। নানান বিষয় ব্লগের লেখায় ফুটে উঠছে। 

ব্লগিংয়ের মাধ্যমেই অনেকের পেশাগত পরিচিতি এবং প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর বিশেষ করে যারা লেখালেখিতে আগ্রহী, তাদের জন্য ব্লগ হচ্ছে একটি সৃজনশীল শিল্পমাধ্যম যেখানে স্বাধীনভাবে প্লাটফর্মটি ব্যবহার করা সম্ভব, একই সাথে আয়ের সুযোগও তৈরি হচ্ছে। 

ব্লগিংয়ের উদ্দেশ্য

ব্লগিংয়ের উদ্দেশ্য নানাবিধ হতে পারে৷ অনেকেই নিজেদের চিন্তাচেতনা প্রকাশের জন্য লেখালেখি করে, কেউবা পেশাগত উন্নতির জন্য, অথবা খ্যাতি অর্জনের জন্য। কিন্তু ব্লগিং এমন একটি মাধ্যম যেখানে লেখকের চিন্তাচেতনার শৈলী ফুটে উঠবে ব্লগের প্রতিটি লাইনে। ব্লগিং এককথায় খুব সহজ বা খুব কঠিন এমনও নয়। কিন্তু ব্লগিং একটি মাধ্যম যেখানে পাঠক এবং লেখকের সংযোগ সৃষ্টি হয়, একই সাথে আয়ের সুযোগ তৈরি হয়। 

সোজাসাপ্টায় বলতে গেলে, লেখালেখিতে নিজের দক্ষতা তুলে ধরে মাধ্যমে একজন লেখক ব্লগার হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলতে পারে এবং সেই থেকে তার ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও রয়েছে। কিন্তু ব্লগিংয়ের মূল উদ্দেশ্য অনেক ধরনের হতে পারে। তবে স্থায়ী সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু দক্ষতা অর্জন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সফলতা লাভের জন্য যে যে বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন সেগুলো নিম্নরূপ

লেখালেখিতে দক্ষতা: ব্লগিংয়ের মূল ভিত্তি হলো লেখালেখি। কিন্তু শুধু লিখলেই যে একটা চমৎকার ব্লগ লেখা হয়ে যায় বিষয়টা এমনও নয়। পাঠককে আকর্ষণ করার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি লেখাকে আকর্ষণীয়, সহজবোধ্য এবং তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে। যাতে পাঠকদের আগ্রহ এবং মনোযোগ ধরে রাখা যায়। 

কন্টেন্ট রিসার্চ: ব্লগে আমরা যা কিছু লিখতে যাই না কেন, মূলত যে বিষয়ে ব্লগ লিখব সেটা নিয়ে যথেষ্ট ধারণা এবং জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, যাতে ব্লগটি তথ্যবহুল, নির্ভুল এবং উপকারী হয়। কেননা ব্লগপোস্টের মান ভালো না হলে পাঠকদের আগ্রহ সেই ব্লগের প্রতি কমে যায়।

SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন): SEO হলো এমন একটি পদ্ধতি, যা কনটেন্টকে সার্চ ইঞ্জিনে পাঠকের কাছে সহজে পৌছতে সাহায্য করে। ভালোমানের SEO কৌশল অনুসরণ করতে পারলে ব্লগের ভিউ বাড়ে। পাঠকদের সহজে সেটা পৌছে যায়। ফলে সার্চ ইঞ্জিনে ব্লগের উপস্থিতি বাড়াতে SEO পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন: বর্তমান যুগ এককথায় সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়াতে সত্য বা মিথ্যা যেকোনো খবর বুলেটের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্লগাররা সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট প্রচার করে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। এতে ব্লগের জনপ্রিয়তা বাড়ে এবং একটি বড় পাঠকগোষ্ঠীর সংযোগ সৃষ্টি হবে।

ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট তৈরির দক্ষতা: শুধু লেখালেখি করতে পারলেই যে ব্লগের ভিউ অনেক বেড়ে যাবে তা নয় কিন্তু। মূল বিষয়টা হচ্ছে দৃশ্যমান কিছু যদি আকর্ষণীয় ভাবে পাঠকদের কাছে তুলে ধরা যায় তাহলে সেটার প্রতি তারা আকৃষ্ট হবে পাশাপাশি প্রাণবন্ত এবং গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

নিজস্ব ব্র্যান্ডিং এবং পাঠকদের চাহিদা বিশ্লেষণ: একটি সফল ব্লগার নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে আগ্রহী হন। ফলে কোন ধরনের কন্টেন্ট পাঠকদের আকর্ষণ করে এবং কেমন বিষয়বস্তু তারা বেশি পড়তে চায়, এই ধরণের বিশ্লেষণধর্মী ক্ষমতা একজন ব্লগারের মধ্যে অবশ্য থাকা প্রয়োজন।

ধৈর্য এবং ধারাবাহিকতা: ব্লগিংয়ে রাতারাতি সফলতা আসে না সেটা কমবেশি আমাদের সকলের ধারণা রয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যেখানে ধৈর্য এবং ধারাবাহিকতার প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকে এর ভালো ফলাফল না আসলেও নিয়মিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পাঠকের চাহিদা এবং আকর্ষনকে ভিত্তি করে নতুনত্ব আনা প্রয়োজন। কেননা ব্লগিং শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, এটি নিজের চিন্তা মনোভাব গভীরভাবে প্রকাশ করার একটি মূল্যবান মাধ্যম৷

সবশেষে, এটা বলা যায়, ব্লগিংয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জনের জন্য হলেও, ব্লগিং করুন নিজের চিন্তা সৃজনশীলতাকে বিকশিত করার জন্য এবং পৃথিবীর কাছে নিজের চিন্তাচেতনা প্রকাশের জন্য।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন 

Writer,

Jemi Sailuk

Intern,

Content Writing Department

YSSE.