ভাষা আন্দোলন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে কালজয়ী অথবা গৌরবের এক অধ্যায়। নিজের ভাষা, মায়ের ভাষার জন্য যে জাতি নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন নি, ইতিহাস কে সাক্ষী রেখে সকল অপশক্তি কে রুখে দিয়েছে গড়েছেন এক দৃষ্টান্ত।এই আন্দোলন শুধুমাত্র রাজপথে নয়, ছড়িয়ে পড়েছিলো সাহিত্যের পাতায় অথবা টেলিভিশনের পর্দায়। আজকের লেখা সেসকল সাহিত্যকর্ম নিয়ে,যা আমাদের ইতিহাসকে আজো বাচিয়ে রেখেছে। যা আজো আমাদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে জানতে বুঝতে এবং বুকে ধারন করতে সাহায্য করছে।
এক নজরে ভাষা আন্দোলন
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের শাষকগোষ্ঠী উর্দুকে এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার নীল নকশা করে। ভাষাপ্রেমী মানুষ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।এই প্রতিবাদ কে রুখে দিতে ১৪৪ ধারা জারি করে স্বৈরাচারী শাষকগোষ্ঠি। কিন্তু অকুতোভয় ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামলে শুরু হয় পুলিশের গুলি বর্ষন। এতে করে প্রাণ হারায় রফিক,শফিক জব্বার সহ আরো অনেকে।
ভাষা আন্দোলনে সাহিত্যের অনবদ্য ভূমিকাঃ
ভাষা আন্দোলনে ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে এসে যেমন ভাষার জন্য নিজেদের ভালবাসা প্রকাশ করেছেন। ভাষার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছেন।
তেমনি কবি সাহিত্যিকগণ নিজেদের অবস্থান থেকে বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ভাষা আন্দোলন নিয়ে রচিত হয়েছে গান,কবিতা, চলচিত্র, নাটক আরো অসংখ্য সাহিত্যকর্ম। সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু গান।
একুশের গান
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তে লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী গানটি রচনা করেন। প্রথমে আবদুল লতিফ গানটির সুর করলেও পরবর্তী তে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। গানটি প্রথমবারের মতন গাওয়া হয় ১৯৫৪ সালের প্রভাতফেরি তে।
ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়
গানটি নির্মাণ করেছিলেন আবদুল লতিফ। মাতৃভাষা আন্দোলনে ওনার অসংখ্য ভূমিকা রয়েছে। এই গান তিনি ঢাকার রাজপথের বিভিন্ন মিছিলের সামনে গাইতেন।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত চলচিত্র
- জীবন থেকে নেয়া
জহির রায়হান পরিচালিত এই চলচিত্র মুক্তি পায় ১৯৭০ সালে। তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের অত্যাচারের রুপক চিত্র ফুটয়ে তোলা হয়েছে এই চলচিত্রে।
- ফাগুন হাওয়ায়
তৌকীর আহমেদ পরিচালিত চলচিত্রটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত “বউ কথা কও” গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে কবিতা
- কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি–
ভাশাসৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা এই কবিতাটি ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা প্রথম কবিতা। তাই এটিকে একুশের প্রথম কবিতা বলা হয়।
- বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দেয়া শহীদ দের স্বরনে এই কবিতা টি লেখেন কবি শামসুর রাহমান।
- আমাকে কি মাল্য দেবে দাও
-নির্মলেন্দু গুণ
- চিঠি
কিংবদন্তি কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর লেখা কালজয়ী কবিতা এটি। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে ছেলে, তার পকেটে মায়ের চিঠি। এমন এক আবেগঘন আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কবিতাটি তে।
- স্মৃতিস্তম্ভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র আলাউদ্দীন আল আজাদ ভাষাশহিদদের স্বরনে নির্মিত শহিদ মিনার ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে এই কবিতা লেখেন।
ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তারা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন। আর যারা ভাষা আন্দোলনে কন্ঠ দিয়ে, খাতা কলমে অথবা নিজের প্রতিভাবান চিন্তাশক্তির মাধ্যমে এই ইতিহাস কে বাচিয়ে আমাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বায়ান্নর দিনগুলোর ইতিহাস পড়ে হয়ত অতীত কে নিয়ে ধারনা নেয়া যায়। তবে যখন ভাষা আন্দোলন নিয়্ব নির্মিত কোন কবিতা,চলচিত্র, নাটক অথবা গল্প পড়া হয়, তখন নিজেকে সেই সময়ের একজন মনে হয়। কবি সাহিত্যিকগণ যেই আবেগ,প্রতিবাদী মনোভাব নিয়ে লিখে গেছেন, সেই আবেগ খুব সহজেই আমাদের ছুয়ে যায়। মাতৃভাষার প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ বোধ হয়। তাই ভাষাশহিদদের পাশাপাশি সেই সকল মানুষদের প্রতি জানাই অজস্র শ্রদ্ধা, যারা আমাদের গৌরবময় ত্যাগী ইতিহাসকে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন।
এমন আরো ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন
আব্দুল্লাহ আর রাফী
কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE