বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে বাঙালির ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। 

ঢাকায় ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকের চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্রভাষা উর্দূর পরিবর্তে বাংলার দাবিতে প্রাণ হারান অনেক ছাত্র-জোয়ান।  

১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে। 

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে একাদিক্রমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। 

এ সময় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি গানের করুণ সুর বাজতে থাকে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। এদিন শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও, টেলিভিশন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশের সংবাদপত্রগুলিও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। 

বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ঢাকায় একুশে বইমেলার আয়োজন করে। বর্তমানে ভারতের বেশ কিছু বিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপিত হয়।

১৯৯৮ সালের ১৭ই নভেম্বর ১৮৮ দেশের সমর্থনে ইউনেস্কোর ৩০তম উদ্যোক্তা সাধারণ অধিবেশনে ২১শে |

ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে ২০০০ সাল থেকে। জাতিসংঘ ২০০৮ সাল থেকে মাতৃভাষা দিবস পালন করা আরম্ভ করে।

বাঙালির ঐতিহাসিক এই দিনটি ঘিরে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। 

মাতৃভাষা দিবসের আগের সন্ধ্যায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ  শরীফ একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও প্রসারের অন্যতম উৎস হলো ভাষা।

পাকিস্তানের লাহোর কলেজ ফর উইমেন ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। কলেজের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মানসম্মত শিক্ষা ও ভাষাগত বৈচিত্র্যতার জন্য মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। লাহোরের এই কলেজে একটি সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় দূতাবাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে একুশে উদযাপন শুরু হয়। দূতাবাসের অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে যথাযথ মর্যাদায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। 

২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টা থেকে একুশের প্রথম প্রহর পর্যন্ত ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

পরে বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও কলামিস্টসহ বিভিন্ন পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি উপস্থিতি উপস্থিত ছিলেন।

রাত ১২টা ১মিনিটে মিশনে স্থাপিত শহীদ মিনারে স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে মিশনের কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ফিজিতে উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশটির শিক্ষামন্ত্রী ফিজির সব স্কুলে একুশে স্মরণে কমপক্ষে এক ঘণ্টার কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

ফিজিতে সব ধরনের মাতৃভাষা  সুরক্ষা ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে ওই কর্মসূচিতে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়।

প্রত্যেক বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে নানা আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। 

অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি উদযাপনে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ১৯৫২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয় বাংলাদেশে।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো প্রত্যেক বছরের এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন

লেখিকা

রূপসানা হাসান

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE