সাদা ঘন মেঘের রাজ্য দুই হাত বাড়িয়ে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন কে না দেখে? বাংলার অপরুপ সৌন্দর্য বরাবরই মুগ্ধ করার মতো বৈচিত্র্যময়। তাই তো বাংলা মায়ের রুপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ ফিরে আসতে চেয়েছেন কখনো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে আবার কখনো ভোরের কাক হয়ে। বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নয়ন জুড়ানো বৈচিত্র্যতা যা বরাবরই কাছে টানে পর্যটকদের।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক অমূল্য রত্ন হলো মিরিঞ্জা ভ্যালি। এটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এমন একটি স্থান যা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও প্রশান্তিময় পরিবেশের সঙ্গে এক নতুন পৃথিবীর দরজা খুলে দেয়। যারা জীবনের কোলাহল থেকে একটু মুক্তি পেতে চান এবং প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটানোর স্বপ্ন দেখেন, মিরিঞ্জা ভ্যালি হতে পারে তাদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। প্রকৃতির কোলেঘন সবুজ অরণ্যে আচ্ছাদিত এক অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত দশর্নীয় স্থান মিরিঞ্জা ভ্যালি (Mirinja Valley)। লামা শহর থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৮৬ কিলোমিটার আর চকোরিয়া থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে লামা উপজেলায় অবস্থিত মিরিঞ্জা ভ্যালি।
ঢাকা থেকে চকোরিয়ার যেকোনো বাসে করে যাওয়া যায় মিরিঞ্জা ভ্যালি। রাতের বাসে ঢাকা থেকে উঠলে খুব ভোরে পৌঁছে যাবেন চকোরিয়া। সেখান থেকে মিরিঞ্জা বাজার যেতে হবে চান্দের গাড়ি করে । সিএনজি বা বাসে করেও যাওয়া যায় তবে পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য অনুভব করতে চাইলে চান্দেদ গাড়িতে করে যাওয়ায় ভালো। মিরিঞ্জা বাজার থেকে ইয়াংছা বাজারে পৌঁছে সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে রওনা দিতে হবে ভ্যালির দিকে। আর ট্রেনে করে আসতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রাত সাড়ে ১১ টায় উঠলে সকাল ৬টায় চট্টগ্রামে পৌঁছে যাবেন। এরপর সেখান থেকে সিএনজি বা বাসে করে নতুন ব্রিজে এসে চকোরিয়ার বাসে আসতে হবে। বাস স্টান্ড থেকে চান্দের গাড়ি করে মুরুম পাড়ায় আসতে হবে। এরপর ২০ মিনিটের ট্র্র্যাকিং করে যেতে হবে মিরিঞ্জা ভ্যালি।
চান্দের গাড়ি তে করে আঁকাবাকা মেটো পথ পাড়ি দিয়ে মনোরম দৃশ্যে উপভোগ করা যায়। মিরিঞ্জা বাজার থেকে পায়ে হেটেঁ ১০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় রিজোর্টে। মিরিঞ্জা ভ্যালিতে রয়েছে মোট ১১টির মতো রিজোর্ট। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিরিঞ্জা সানসেট, মিরিঞ্জা ভ্যালি, মারাইংছা হিল, মেঘ ভেলা, ডেনঞ্জার হিল, রামা হিল স্টেশন। জুম ঘরে বসে পাহাড়ের চমৎকার দৃশ্য পরিবারের সাথে উপভোগ করতে হলে,রামা হিল স্টেশন রিজোর্ট হবে সেরা। প্রতিটি রিজোর্টের ভাড়া শুরু হয় এক রাতের জন্য ২০০০- ৩০০০টাকার এর মধ্যে। জুম ঘরে খাবার খরচ তিনবেলা জনপ্রতি ৬০০ টাকা থেকে শুরু। তবে খাবারের বাজেট যদি ৩৫০/৪০০ টাকার মধ্যে হয় সকাল-দুপুর-রাত, তাহলে রিজোর্ট থেকে মিরিঞ্জা বাজারে আসতে হবে। জুম ঘর ছাড়াও এখানে তাবুতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এবং পর্যটকরা চাইলে নিজেও রান্না করতে পারবেন।
সবুজ পাহাড়ে সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে মেঘের সাথে লুকোচুরি, সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য, মাতামুহুরি নদীর আবচ্ছা ভিউ ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে যেন অনন্য মুহূর্ত মিরিঞ্জা ভ্যালির। এতসব প্রাচুর্যে ভরপুর হওয়ার সত্বেও এখানে রয়েছে কিছু অসুবিধা। যেমন: দু-একটি রিজোর্ট বাদে এখানে বিদ্যুৎ, ভালো মানের গোসলখানা ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা নেই, গ্রামীণ সিম ছাড়া অন্যকোনো সিমের নেটওয়ার্কে সিগন্যাল পাওয়া যায় না, রাতের বেলায় পোকামাকড়ের ভয় এসব। তবে মিরিঞ্জা ভ্যালির চোখ জুড়ানো মনোরম দৃশ্যকাব্য যেন পর্যটকদের কাছে টানে এসব অসুবিধা তুচ্ছ করে। মিরিঞ্জা ভ্যালি শুধু একটি ভ্রমণস্থল নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা। এটি এমন একটি স্থান যেখানে আপনি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন এবং নিজের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা খুঁজে পাবেন। সবুজে ঘেরা পাহাড়, মেঘে ঢাকা আকাশ, আর প্রশান্তির স্পর্শে আপনার মন ভরে উঠবে এক অদ্ভুত আনন্দে।
তাহলে আর দেরি কেন? ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন মিরিঞ্জা ভ্যালির উদ্দেশ্যে। প্রকৃতির এই অবারিত সৌন্দর্য আপনার অপেক্ষায় রয়েছে।
এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন
লেখিকা
প্রিমা শীল
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE