মহাসমুদ্র এবং মানবসভ্যতা একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মহাসমুদ্র মানবসভ্যতার অস্তিত্ত্বকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয়, আবহাওয়া, জলবায়ু, অক্সিজেন উৎপাদন এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করে।
মহাসমুদ্র মানুষের জীবনকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে। এটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়, উপার্জনের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। মহাসমুদ্র তাপ শোষণ করে ও পৃথিবীর তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে সাহায্য করে।
পৃথিবীতে বর্তমানে ৫ টি মহাসমুদ্র রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, সুমেরু মহাসাগর এবং কুমেরু মহাসাগর।
এর মধ্যে আজকের আলোচনা সুমেরু মহাসাগর। চলুন জেনে নেয়া যাক কেন ফেলছে এটি বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ এর পিছনের কাহিনি।
সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ও অগভীর একটি সাগর হল সুমেরু মহাসাগর। আন্তর্জাতিক জললেখচিত্রণ সংস্থা এটিকে মহাসাগরের স্বীকৃতি দিয়েছে।
আটলান্টিক মহাসাগরের মোহনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এটিকে। সুমেরু মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের মাঝখানে উত্তর মেরু অঞ্চলকে অন্তর্ভূক্ত করে ও দক্ষিণে প্রায় ৬০° উঃ পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর মহাসাগরের প্রায় সমগ্ৰ অংশই ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত।
কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে এই মহাসাগরের অংশবিশেষ। সুমেরু মহাসাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা ঋতু অনুযায়ী পরিবর্তন হয়। এর পিছনে কারণ হল সমুদ্রের বরফের আবরণের গলন ও জমাট বাঁধা।
তুলনামূলক এই মহাসাগরের লবণাক্ততা কম। বাষ্পীভবনের নিম্নহার, বিভিন্ন নদী থেকে এসে মেশা মিষ্টি জলের প্রবাহ এবং পাশ্ববর্তী উচ্চ লবণ যুক্ত মহাসমুদ্র এর সঙ্গে সীমাবদ্ধ সংযোগ ও বহির্গমন স্রোত। এ মহাসমুদ্রে গ্ৰীষ্মকাল আসলে প্রায় ৫০% বরফ গলে যায়।
মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো আন্ড আইস ডেটা সেন্টার উপগ্ৰহ তথ্যের মাধ্যমে গড় সময়কাল ও নির্দিষ্ট পূর্ববষের সঙ্গে তুলনা করার জন্য উত্তর মহাসাগরের বরফাবরণী ও বরফ গলনের দৈনিক তথ্য রাখে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে, সুমেরুর বরফের পরিমাণ একটি নতুন রেকর্ড গড়েছে যা কিনা সর্বনিম্ন পৌঁছেছে। গড় পরিমাণের (১৯৭৯-২০০০) তুলনায় সমুদ্রের বরফ ৪৯% কমেছে।
- এখন আসা যাক কোন বিষয় গুলোর জন্য এটি চিন্তার কারণ।
বরফের গলন:
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই বরফ গলছে আর অতি দ্রুত বরফ গলন দাড় করাচ্ছে আরও অনেক সম্যস্যার।
জলবায়ু প্রতিসরণ লুপস :
গলে যাওয়া বরফের কারণে মহাসাগরের গভীরতা আরও ভয়ংকর রূপ নেয় এবং সূর্যের আলো শোষণ শুরু করে যার কারণে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়।
বন্যপ্রাণীদে উপর প্রভাব:
উত্তর মেরুর অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাদা ভাল্লুক, পেঙ্গুইন, নীল তিমি এবং আরও অনেক অজানা প্রাণী, এমনকি কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি:
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই বরফ গলছে আর এই কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে সমুদ্রের উচ্চতা। এর ফলে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে কিছু নিচু এলাকা। সম্ভাবনা বাড়ছে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের।
সমুদ্রের পরিস্থিতির পরিবর্তন:
সমুদ্রে যাতায়াতের পথে অনেক ঘন ঘন বড় ধরনের ঢেউের সম্মুখীন হতে হয় নাবিকদের। হঠাৎ ঝড় অথবা অন্য কোনো দুর্যোগ হয়ে উঠেছে যেন সাধারণ ঘটনা।
মহাসমুদ্রর এই অচেনা রূপ সামাল দিতে বিজ্ঞানীদের ভাবতে হচ্ছে অনেক উপায়।
এর মধ্যে যেসব উপায় বের করা হয়েছে তার মধ্যে কিছু হল:
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে পারলেই চলে আসবে অর্ধেক সম্যস্যার সমাধান। আর্কটিক পরিবেশের উপর প্রয়োজন অবিরত গবেষণা।
পরিবেশের নানা উপাদান, সাগরে বাস করা প্রাণীদের জীবন, খাদাভ্যাস এর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে বিস্তারিত ভাবতে হবে বিজ্ঞানীদের।
রাখতে হবে পর্যটক বাণিজ্যর উপর নিয়ন্ত্রণ। কঠিন নীতিমালা চালু করতে হবে আর্কটিক পরিবেশের কথা মাথায় রেখে। মানুষকে শিক্ষিত করতে হবে এবং পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানাতে হবে।
আর্কটিক মহাসাগরকে অনুকূলে রাখা বেশ কঠিনই বটে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন মানুষের একতা, প্রতিশ্রুতি পৃথিবীকে বাঁচানোর।
এর মধ্যে আছে জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা, মানুষের কার্যকলাপ এর উপর নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ বাঁচানোর দৃঢ় ইচ্ছা। তাহলেই বাঁচবে দেশ ও মহাদেশ। বাঁচবে সাগর, মহাসাগর। বাঁচবে বিশ্ব এবং মানবসভ্যতা।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখিকা
নাজিফা তাসনিম
ইন্টার্ণ, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE