আজকের অতিথি মুস্তাকিম বিল্লাহ মুহিত, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় যুব কমিশনের ভাইস চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যুব নেতৃত্ব, উন্নয়ন এবং স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেশের যুব সমাজের জন্য এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা। তার অভিজ্ঞতা ও কাজের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কীভাবে তিনি যুবদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন।
YSSE: প্রথমেই আপনার সম্পর্কে জানতে চাই। আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা, এবং বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে কী কী কাজ করছেন?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: আমি মুস্তাকিম বিল্লাহ মুহিত, বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় যুব কমিশনের ভাইস চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার শৈশব ও বেড়ে ওঠা খুলনার গল্লামারি এলাকায়, বিশেষ করে কাশেম নগর চার নম্বর সড়কে, যা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত।
ছোটবেলা থেকেই আমি স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি এবং আয়োজক হিসেবেও যুক্ত ছিলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো—জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড, শব্দকল্পদ্রুম, ভাষা প্রতিযোগ, ইন্টারনেট উৎসব, প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াড ইত্যাদি।
বর্তমানে আমি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন যুব সদস্য হিসেবে কাজ করছি। আমরা সরকারের ১২টি ম্যান্ডেটেড বিষয় নিয়ে কাজ করি, যার মধ্যে অন্যতম হলো সহশিক্ষা কার্যক্রম। মূলত এই ক্ষেত্রেই আমি সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।
YSSE: খুলনা জেলা ইউনিটের যুব প্রধান হিসেবে (২০২২-২৩) আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? এই দায়িত্ব পালনের সময় কোন বড় উদ্যোগ বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: খুলনা জেলা ইউনিটের যুব প্রধান হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও স্মরণীয়। আমি যুব সদস্যদের সম্পৃক্ত করতে কাজ করেছি, যাতে তারা রেড ক্রিসেন্টের মৌলিক নীতিগুলো অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
আমার নেতৃত্বে স্কুল-কলেজে রেড ক্রিসেন্ট কমিটি গঠন, শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত করা, এবং ফার্স্ট এইড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়াও আমাদের কাজের অংশ ছিল।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কোভিড-১৯ মহামারি। আমাদের জন্য কঠিন কাজ ছিল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, সংক্রমণ প্রতিরোধ করা এবং জীবন রক্ষা করা। টিকা প্রদান, জীবাণুমুক্তকরণ কার্যক্রম, ও মৃতদেহ সৎকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। সব বাধা সত্ত্বেও, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সফলভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছি।
YSSE: জাতীয় যুব কমিশনের ভাইস চেয়ার হিসেবে আপনার ভূমিকা কী? যুব নেতৃত্ব ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে আপনার কী লক্ষ্য?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: জাতীয় যুব কমিশনের ভাইস চেয়ার হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো যুব সদস্যদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কার্যক্রমে যুক্ত করা, তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করা। আমি যুব সদস্যদের যুব কেন্দ্রিক পরামর্শ দেই ও যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের সাথে সমন্বয় করি, জটিলতা সমাধানে পলিসি অনুযায়ী পরামর্শ প্রদান করি এবং সংগঠনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করি। আমার দায়িত্বের মেয়াদ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
আমার লক্ষ্য যুব নেতৃত্বকে আরও দক্ষ ও সু-শিক্ষিত করে তোলা, যাতে তারা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারে। রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা ও সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমি এই কার্যক্রমগুলো আরও কাঠামোবদ্ধভাবে পরিচালিত করতে চাই, যেন জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় হয় এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রম সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো যায়।
YSSE: NDRT (National Disaster Response Team) সদস্য হিসেবে দুর্যোগ মোকাবিলায় আপনার অভিজ্ঞতা কী? এই ধরনের উদ্যোগগুলো কীভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: NDRT-তে আমার কাজের সময় এখনো দীর্ঘ হয়নি, তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। বিশেষভাবে, ২০২২ সালে সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা এবং ২০২৪ সালে ফেনীর ফ্ল্যাশ ফ্লাড মোকাবিলায় সরাসরি কাজ করেছি। বর্তমানে নোয়াখালীতে পুনর্বাসন কার্যক্রমে নিয়োজিত আছি।
আমাদের দল সোসাইটির পক্ষ থেকে দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, ত্রাণ প্যাকেজ, ডিগনিটি কিট, সুপেয় পানি ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছে, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুর্যোগকালীন মুহূর্তে দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য NDRT-এর ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর। এই প্রশিক্ষিত দল যেকোনো সংকটের সময় উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
NDRT (National Disaster Response Team) মূলত দেশের প্রথম সারির দুর্যোগ মোকাবিলা দল। এই টিমের সদস্যরা দেশের যেকোনো দুর্যোগের সময় সর্বপ্রথম প্রতিক্রিয়া জানান এবং দ্রুত উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তারা প্রশিক্ষিত এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়শই ঘটে, তাই এই দলটির কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে NDRT-এর ভূমিকা আরও বিস্তৃত হবে, এবং আমরা আশাবাদী যে এটি দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও কার্যকর ও সুসংগঠিত ভূমিকা রাখতে পারবে।
YSSE: আপনি একজন ডিজিটাল গল্পকার এবং ডকুমেন্টারি নির্মাতা। আপনার কাজগুলো কীভাবে মানবিক বার্তা ছড়াতে সাহায্য করছে?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: তথ্য শুধু জ্ঞান নয়, এটি এক ধরনের সহায়তাও। “Information is aid”—অর্থাৎ, সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছানো সহায়তা হিসেবে কাজ করে। আমি ডিজিটাল গল্প ও ডকুমেন্টারি নির্মাণের মাধ্যমে সেই কাজটাই করছি।
আমার তৈরি ভিডিও ও ফটো ডকুমেন্টারি বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সমস্যাগুলো তুলে ধরে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে। এতে তাদের সংগ্রামের গল্প সামনে আসে, সচেতনতা তৈরি হয় এবং সহায়তার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। আমার কাজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে, যা মানবিক বার্তা ছড়ানোর কার্যকর মাধ্যম বলে আমি মনে করি।
YSSE: আপনার কাজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত ও স্বীকৃত। এই স্বীকৃতিগুলো আপনার কাজে এবং ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: আলহামদুলিল্লাহ, আমার বেশ কিছু কাজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এসব স্বীকৃতি কেবল আনন্দের নয়, বরং নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার ও শেখার সুযোগ এনে দিয়েছে।
যেহেতু বয়সের দিক থেকে আমি এখনো তুলনামূলক তরুণ, তাই এই স্বল্প সময়ে অর্জিত স্বীকৃতিগুলো আমাকে আরও উদ্যমী করেছে এবং নতুন উদ্ভাবনী কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। এগুলো আমাকে শেখাচ্ছে কীভাবে কাজের পরিধি বাড়ানো যায়, মানুষের জন্য আরও কার্যকর কিছু করা যায়।
বিশেষ করে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের স্বীকৃতি পাওয়া মানে শুধু ব্যক্তিগত গর্ব নয়, বরং এটি একটি দায়িত্বও বটে—আমাকে আরও দায়িত্বশীল ও কার্যকরভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। ভবিষ্যতে আমি চাই আমার কাজ মানুষের জীবন পরিবর্তনে আরও বড় ভূমিকা রাখুক।
YSSE: রেড ক্রিসেন্টের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করার সময় আপনি কীভাবে প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়েছেন?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুইভাবেই প্রভাব ফেলতে পারে। রেড ক্রিসেন্টে কাজ করার সময় আমি প্রযুক্তিকে মানবসেবার উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করেছি, যেন এটি সমাজ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
আমি সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সঠিক তথ্য ও জরুরি সহায়তা দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। বিশেষত, সংকটময় পরিস্থিতিতে তথ্য যাচাই, সাহায্য সমন্বয় ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি, সচেতনতামূলক ভিডিও ও তথ্যচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা করেছি। প্রযুক্তির সুচিন্তিত ব্যবহার বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
YSSE: প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন। এই কাজগুলোতে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল, এবং কীভাবে সমন্বয় সাধন করতেন?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: ২০১৯ সাল থেকে আমি বিভিন্ন দুর্যোগ, যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা এবং পুনর্বাসন ও ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও মাঠপর্যায়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। প্রতিটি দুর্যোগের সময় ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে প্রতিবারই শিখেছি কীভাবে আরও কার্যকরভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়।
পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার সময় আমার মূল চিন্তা ছিল—কাদের পুনর্বাসন সবচেয়ে জরুরি, কীভাবে বেশি সংখ্যক মানুষকে সহায়তা করা সম্ভব এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি কীভাবে স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত করা যায়। রেড ক্রিসেন্ট সবসময় গুরুত্ব দেয় সেই মানুষদের, যারা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েন। বিশেষ করে গৃহহীন পরিবার, নারী ও শিশু, প্রবীণ ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমাদের লক্ষ্য থাকে যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পন্ন করা, যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু ত্রাণ বিতরণ যথেষ্ট নয়, পুনর্বাসনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা নিশ্চিত করাই আসল চ্যালেঞ্জ। তাই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সহজ, কার্যকর ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করাই ছিল আমার প্রধান লক্ষ্য।
YSSE: আপনার মতে, বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী? এই চ্যালেঞ্জগুলোর কার্যকর সমাধানের জন্য আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সবসময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও আমি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তবে অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু মতামত দিতে পারি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ ঘটে—উত্তরাঞ্চলে বন্যা, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস এবং নদীভাঙন। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পূর্বপ্রস্তুতির অভাব, জনসচেতনতার ঘাটতি, এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা।
এই চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানে যুবসমাজকে আরও সক্রিয় হতে হবে। তারা নিজ নিজ অঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণতার বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দল হিসেবে কাজ করতে পারে। দুর্যোগের আগে, চলাকালীন এবং পরে কীভাবে দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করতে হয়, সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষিত করা দরকার।
এছাড়া, স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া উচিত। প্রত্যেক নাগরিককে প্রাথমিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে, যাতে সংকটময় পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
YSSE: আপনার কাজের অনুপ্রেরণা কে বা কী ছিল? এই অনুপ্রেরণা কীভাবে আপনার জীবন এবং নেতৃত্বে প্রতিফলিত হয়েছে?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার বাবা। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করতে হয়। আর মানবসেবার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত হলেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), যার আদর্শ আমার পথচলার প্রেরণা।
বিশেষ করে, করোনা মহামারির সময় যখন হাসপাতালে সেবাদান করছিলাম, তখন দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। এমনকি ঈদের দিনও হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মা দুশ্চিন্তায় থাকলেও, বাবা বলেছিলেন— “বাসায় থাকলেও আক্রান্ত হতে পারো, বাইরে গেলেও হতে পারো। তাই উত্তম হলো, দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা।” তার এই কথা আমার জীবন ও নেতৃত্বের দর্শন হয়ে গেছে।
YSSE: আপনার উদ্যোগ ও কাজের জন্য যদি একটি স্লোগান লিখতে বলা হয়, সেটি কী হবে?
মুস্তাকিম বিল্লাহ:
“স্বেচ্ছায় সেবা দিন, দেশ গড়তে অংশ নিন।”
YSSE: পরিশেষে, যারা স্বেচ্ছাসেবী কাজ শুরু করতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?
মুস্তাকিম বিল্লাহ: স্বেচ্ছাসেবা শুরু হয় নিজের ঘর থেকেই। যদি প্রতিটি সন্তান তার বাবা-মায়ের সেবা ও পরিবারের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করত, তাহলে সমাজে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রয়োজন কমে যেত। তাই প্রথমেই নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্য কাজ করতে হবে। যে ব্যক্তি নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে না, সে সমাজের উপকারেও আসতে পারবে না।
এছাড়া, পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অনেক স্বেচ্ছাসেবক আছেন যারা পড়াশোনাকে উপেক্ষা করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিজেকে গড়ে তুলতে না পারলে বড় পরিসরে সমাজের সেবায় কাজ করা সম্ভব নয়। তাই আত্মউন্নয়ন এবং মানবসেবার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
- Facebook ID: Mustakim Billah Muhit
- Youtube: Muhit’s Vlogs
এরকম আরও ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন।
লেখক
ফারদিন বিন আবদুল্লাহ
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE