আমরা সকলেই নিশ্চয় ছোটবেলা থেকে বাংলাদেশ ও বিশপরিচয় বইয়ে পড়ে আসছি- বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ”। এই উক্তির মাধ্যমে আমরা বুঝতে শিখেছি বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও কৃষিক্ষেত্রে পুরুষের অবদানই আমরা বেশি শুনতে পাই, রশিদা বেগমের গল্পটি এইক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম। রশিদা বেগম একজন বাংলাদেশী নারী যিনি গ্রামীণ কৃষিকে উন্নত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, গ্রামে নারীদের ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল উদাহরণও স্থাপন করছেন তিনি।

রশিদা বেগম বরিশালের একটি ছোট গ্রামে বড় হয়েছেন। তার পরিবার আর্থিক ব্যবস্থার জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল দেখে তিনি ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি তার গ্রামের কৃষকদের সংগ্রাম দেখেছেন, কিভাবে তারা জমির অভাবে, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে এবং প্রশিক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেছেন। এই অভিজ্ঞতাগুলোই তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

শিক্ষার প্রতি রশিদার আগ্রহ ছিল চরম। তিনি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে পরবর্তীতে কৃষিবিজ্ঞানের স্নাতক পাস করেন। শিক্ষার মাধ্যমে তিনি কৃষিকাজে ব্যবহৃত আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত হন। এভাবেই তিনি সে গ্রামের কৃষিকে উন্নত করার এবং নারীদের ক্ষমতায়ন করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

পড়ালেখা শেষ করে তিনি গ্রামে ফিরে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন এবং বুঝতে পারেন যে তার একার পক্ষে কোন বড় উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয় তাই তিনি গ্রামীণ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা” নামক একটি সংগঠন স্থাপন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল এই সংস্থার মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সরবরাহ এবং নারীদের কৃষি কাজে যুক্ত করবেন।

রশিদা বেগম বিশ্বাস করতেন যে গ্রামের উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা প্রয়োজনীয়। তাই তিনি নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং তাদেরকে কৃষিকাজের আধুনিক পদ্ধতি, ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা ও মাইক্রোফিন্যান্স ব্যবস্থাপনা শেখান। এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই তাদের গ্রামের অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। অনেকেই নিজের খামার শুরু করেন, আবার অনেকেই অর্গানিক ফসল উৎপাদন শুরু করেন।

রশিদা বেগম তার পথ চলায় অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন। গ্রামীণ সমাজে নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করা এখনো ভালো দৃষ্টিতে দেখা হয় না, যা তার জন্য খুব বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। তাছাড়া তার গ্রামের কৃষকরা প্রথমে প্রযুক্তি ও আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহারে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তাদেরকে প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝাতে অনেক সময় লেগেছে। কিন্তু রশিদা বেগম কোনভাবে তার হাল ছাড়েনি। তিনি তার ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম ও অনুপ্রেরণাদায়ক নেতৃত্বে সকল বাধার সম্মুখীন হয়ে আজকে তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

কৃষি কাজে উন্নয়নের পাশাপাশি রশিদা বেগম পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারেও খুব সতর্ক ছিলেন। তিনি তার প্রকল্পগুলোতে অর্গানিক চাষাবাদ, পানি সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতির প্রচলন করেছেন। তার নেতৃত্বে গ্রামের সকলেই তাদের চাষাবাদ কেমিক্যাল মুক্ত রাখতে চেষ্টা করেন, যাতে কৃষিকাজের ফলে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি না হয়।

রশিদা বেগম সমাজের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করে রেখেছেন। ভবিষ্যতের জন্য তার লক্ষ্য হলো আশেপাশের গ্রামেগুলোতে প্রকল্পগুলো সম্প্রসারণ করা। তাছাড়াও তিনি তরুণ প্রজন্মকে কৃষি কাজে উৎসাহিত করতে চান যাতে তারা ভবিষ্যতে কৃষি কাজকে আরো সহজ এবং উন্নত করতে সক্ষম হয়। তিনি বিশ্বাস করেন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকে এমন এক স্তরে নিয়ে যাওয়া যায় যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং দারিদ্র দূর করবে।

রশিদা বেগম আমাদের কাছে একটি অনুপ্রেরণার নাম। তিনি যে শুধু কৃষি কষেত্রে কাজ করে গিয়েছেন তা নয়, তার উদ্যোগে আজ গ্রামের হাজার হাজার নার আর্থিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক মর্যাদা পেয়েছে। তার জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, সামাজিক পরিবর্তন আনতে হলে ইচ্ছা, অধ্যবসায় এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

একদিনেই কোন বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় তার জন্য প্রয়োজন হয় ধৈর্য ও দৃঢ়তা। তার জীবনের গল্প প্রত্যেক নারীকে নিজের প্রতি আস্থা রাখতে শেখায়। একজন নারী হয়েও যে সমাজের উন্নয়নে এত বড় পরিবর্তন আনা যায় তা তিনি করে দেখিয়েছেন। তার এই যাত্রা সত্যিই প্রশংসনীয় ও আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণামূলক।

এরকম আরো ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন।

লেখক
কাজী মিরানা মঈনউদ্দীন 
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE