মিস্টার বিন একটি তুমুল জনপ্রিয় চরিত্র। মানুষকে নানান অঙ্গভঙ্গি ও অভিব্যক্তি করে হাসানো মিস্টার বিনের কাজ। মিস্টার বিনে কিন্তু তেমন বার্তা আলাপ দিতে দেখা যায় নি। তবু বার্তা আলাপ অর্থাৎ কথা বলা ছাড়ায় আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে হাসিয়ে গেছে মিস্টার বিন। মিস্টার বিন দেখে যার জীবন চরম দু:খ ও হতাশা সেও বোধহয় হেসে উঠবে। মিস্টার বিন এতটাই জনপ্রিয় যে আমরা তার পেছনে যে কারিগর থাকেও চিনি মিস্টার বিন নামেই। তবে এই চরিত্রটি যিনি অভিনয় করে মিস্টার বিন নামেই জনপ্রিয় হয়েছেন তাঁর আসল নাম রোয়ান অ্যাটকিনসন। তবে রোয়ান অ্যাটকিনসন কিন্তু একদিনেই মিস্টার বিন হয়ে উঠেন নি। এই চরিত্রে অভিনয় করার পূর্বে তাঁকে করতে হয়েছিল অনেক পরিশ্রম। চলুন জেনে নেওয়া যাক, রোয়ান অ্যাটকিনসনের সফলতার গল্প।
রোয়ান অ্যাটকিনসনের সফলতার গল্প:
রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসনের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৬ই জানুয়ারি ইংল্যান্ডের ডুরহামে। তার ডাক নাম রো। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ছোটবেলার থেকেই তিনি ছিলেন খুব হাসি-খুশি। যদিও ছোটবেলায় তিনি কথা খুবই কম বলতেন। যার প্রভাব হয়তো তিনি মি.বিন চরিত্রটিতেই রেখেছেন। রোয়ান অ্যাটকিনসন ছিলেন পড়ালেখাই খুবই মনোযোগী৷ নাট্যকার, কমেডিয়ান কিংবা অভিনেতা হয়ে উঠা কোনোটিই তার জীবনের মূল্য লক্ষ্য ছিল না। যদিও নাটকের প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। তিনি স্কুল জীবনে থাকতে বিভিন্ন অভিনেতার অভিনয় নকল করতেন। সেই থেকে শুরু। এরপর তিনি কাজ করেছেন মঞ্চের বেকস্টেজে। সেখান থেকে তার প্রধান শিক্ষকের আশ্বাসে অভিনয় শুরু করেন মূল মঞ্চে। এরপর তার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তার পরিচয় হয় রিচার্ড কার্টিসের সাথে। সেখানে তারা দুজন মিলে গড়ে তুলেন নাট্যশালা। অক্সফোর্ডে পড়ার সময়ই রোয়ান অ্যাটকিনসন কমেডিক আচরণ এবং চেহারার অভিব্যক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠেন। তবে রোয়ান অ্যাটকিনসন দর্শকদের মাঝে পরিচিত হোন “নট দ্য নাইন ও ক্লক নিউজ” স্কেচ কমেডি শো বইটির মাধ্যমে। এই বইটি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে এটির জন্য তিনি ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও আন্তজার্তিক এমি অ্যাওয়ার্ড জন্য করেন।
সফলতার গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এখনো বাকি আছে আসল সফলতা অর্থাৎ মিস্টার বিন হয়ে উঠার গল্প। এই মিস্টার বিনের কারণেই রোয়ান অ্যাটকিনসন বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায় এবং তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
মিস্টার বিন ধারাবাহিক নাটকের শুরু হয় ১ জানুয়ারি, ১৯৯০ সালে। নাটকের লেখক ছিলেন রোয়ান এটকিনসন নিজেই। তার সাথে লিখতেন রিচার্ড কার্টিস ও রবিন দ্রিসকল। মিস্টার বিন ধারাবাহিক নাটকে মোট পর্বের সংখ্যা ১৫ টি। যা শেষ হয় ১৯৯৫ সালে। এছাড়া মিস্টার বিন নিয়ে ‘বিন’ এবং ‘মি. বিন’স হলিডে’ নামে ২ টি চলচ্চিত্রও রয়েছে। রোয়ান এটকিনসন মিস্টার বিন চরিত্রে শেষ অভিনয় করেন ছিল মি.বিন’স হলিডে চলচিত্রে।
মি.বিন শুরুর সাথে সাথেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে টেলিভিশনের পর্দায়। এই ধারাবাহিক চলচ্চিত্রে মি.বিন চরিত্রটি হাসায় ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাইকে। নানান রকম কমেডিক আচরণের মাধ্যমে মন জয় করেছেন দর্শকদের। রোয়ান অ্যাটকিনসন এই চরিত্রে এতটাই নিখুঁত ছিলেন যে সবাই তাঁকে রোয়ান অ্যাটকিনসন থেকে বেশি মি.বিন নামেই চিনে। মি.বিন ধারাবাহিক চরিত্রটি ১৯৯৫ সালে শেষ হলেও এগুলো এখনো ঘরে ঘরে টেলিভিশন চ্যানেলে চলে। এছাড়া ফেসবুকে মি.বিন পেইজটিতে রয়েছে ১৪১ মিলিয়ন ফলোয়ার। রোয়ান অ্যাটকিনসন মি.বিন চরিত্রটি যে শুধু সশরীরে তুলে ধরেছেন তাই নয়, তার সাথে তিনি রিচার্ড কার্টিসের সাথে তৈরি করেছেন মিস্টার বিন: এনিমেটেড সিরিজ। এই সিরিজের আত্মপ্রকাশ ২০০২ সালে। এখন পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ১৩০ টি পর্ব বের হয়েছে। এই সিরিজটি শিশুদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
মিস্টার বিন চরিত্রটি যে রোয়ান অ্যাটকিনসনকে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই চরিত্রটির জন্য রোয়ান অ্যাটকিনসন পান গোল্ডেন রোজ এবং নরওয়েজিয় কৌতুক পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কার। রোয়ান অ্যাটকিনসনের সফলতার গল্প কিন্তু শুধু মিস্টার বিন জুড়েই নয়। এছাড়া তিনি অভিনয় করেছেন নানান মুভিতে। যার মধ্যে ‘জনি ইংলিশ’ নামে মোট ৩ টি মুভি দর্শকদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়।
ছোটবেলার থেকে রোয়ান অ্যাটকিনসন ছিলেন খুব চুপচাপ স্বভাবের। কথা বলতে তার ছিল জড়তা। এছাড়া তার গঠন নায়কদের মতো না হওয়ায় তিনি হয়েছিলেন অনেক শো থেকেই বিতারিত। তবে থেমে থাকেন নি তিনি। করেছেন অমায়িক পরিশ্রম। নিজের চুপচাপ থাকাকে রূপান্তর করেছেন শক্তিতে। তৈরি করেছেন মিস্টার বিন নামক চরিত্র। যার মাধ্যমে তিনি চলে গেছেন সফলতার শীর্ষে। এই চরিত্র রোয়ান অ্যাটকিনসনকে চিরকাল আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে ‘মি.বিন’ নামে।
এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন
লেখক,
প্রত্যয় কান্তি দাশ,
ইন্টার্ন,
কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE