মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর অন্যতম হলো শিক্ষা। শিক্ষা আলোর পথ। শিক্ষা জ্ঞানের আধার। কিন্তু এই জ্ঞান কী সবার মধ্যে সমভাবে বন্ঠিত হচ্ছে? নাকি, এই আলোর পথে চলার থেকে এখনো কিছু মানুষ বঞ্চিত? শিক্ষা নামক অলংকার কী সবার মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায় না? শিক্ষা কী কেবল একটিমাত্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর?
অতন্ত, দু:খের হলেও সত্যি এই যে এখনো অনেক মানুষ শিক্ষা হতে বঞ্চিত। অনেকে আবার শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পেলেও উপযুক্ত শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে, অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেক মানুষ আজও অশিক্ষিত। আবার এসব শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও শিক্ষাগত এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। এসকল দেশে দক্ষ শিক্ষক তৈরি হয় খুবই কম। এছাড়া বারবার কারিকুলামের পরিবর্তনও শিক্ষার্থীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসকল দেশে প্রযুক্তির আধিক্য নেই বলেই চলে। যার ফলে, পাঠদান কার্যক্রম শুধুমাত্র মুখস্তবিদ্যা এবং বোর্ড লিখে লিখে পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অপরদিকে, উন্নত দেশে, প্রযুক্তিগত আধিক্য এবং দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার উপস্থিতির কারণে সেই দেশসমূহ অন্যান্য দেশসমূহ থেকে অনেক এগিয়ে। যার ফলে তাদের অর্থনীতিও স্থিতিশীল। অর্থাৎ, বলা যায় অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহ তুলনামূলকভাবে বৈষম্যের শিকার।
শিক্ষাগত বৈষম্য উত্তরনের উপায় কী?
শিক্ষাগত বৈষম্য উত্তরন পুরোপুরি সম্ভব না হলেও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে এই বৈষম্য অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এইরকম কিছু পদক্ষেপ হতে পারে:
প্রশিক্ষনের মাধ্যমে শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি:
বিশ্বের বেশিরভাগ অনুন্নত দেশে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এর মান তলানিতে। এসকল দেশের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অদক্ষ। তাই তাদের দক্ষতা উন্নয়নে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সৃজনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পাঠ্যক্রম বর্হিভূত কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
সৃজনশীল পাঠক্রম গঠন:
অনুন্নত দেশের পাঠক্রমে অবাঞ্চিত পরিবর্তন এবং শুধুমাত্র অতীতের সিলেবাস ও বই যুক্ত করা শিক্ষার মান কমাতে ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে পাঠক্রম পরিবর্তন করতে হবে সৃজনশীলভাবে। নতুন নতুন তথ্য এবং বৈশ্বিক আলোচনা অবশ্যই পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত করতে হবে।
ব্যবহারিক শিক্ষার প্রাধান্য দেওয়া:
শিক্ষা যতটা বই মুখস্ত করে অর্জনে শেখা যায়, তার থেকে বেশি শেখা যায় জিনিসটি ব্যবহারিকভাবে করে। তাই পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি ব্যবহারিকভাবে শিক্ষা প্রদানে ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।
সবার জন্য সমান শিক্ষা:
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৮৭%। অর্থাৎ বিশ্বের ১৩% লোক এখনো তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। আবার ৮৭% শিক্ষিতদের মধ্যে যারা অনুন্নত দেশে বসবাসরত তারা বৈষম্যের শিকার। এসকল দেশে ভালো পাঠক্রমের ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাই এসব সমস্যা সমাধানে প্রথমত সবার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গরীবদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে হবে। বৈশ্বিক শিক্ষা উন্নয়নে বৈশ্বিক শিক্ষা সংগঠন গঠন করে সকল দেশেই শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করে সকল শিশুকে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভের সুযোগ করে দিতে হবে।
নারী শিক্ষা নিশ্চিত করা:
পৃথিবীর ৯০% পুরুষ শিক্ষিত হলেও নারী শিক্ষার হার ৮১%। অর্থাৎ শিক্ষা অর্জনের দিক থেকে নারীরা অনেক পিছিয়ে। বিশেষ করে কিছু কিছু দেশে নারী শিক্ষার হার তলানিতে। এক্ষেত্রে প্রধান কারণ নারীদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। এই প্রচলনটি আমাদের দেশেও লক্ষ্য করা যায়। এই সমস্যা উত্তরণের জন্য সকল নারীর শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। নারীদের দক্ষ করে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। পরিশেষে, নারীদের কারণ শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ শিক্ষিত মা গঠন করতে পারলেই শিক্ষিত জাতি গঠিত হতে পারবে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন:
উন্নত বিশ্বের দেশে শিক্ষা খাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করে শিক্ষা খাতে নানান ধরনের উন্নত প্রযুক্তি বিশেষ করে প্রজেক্টর, স্মার্ট বোর্ড, স্লাইড প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি ব্যবহার করছে। কিন্তু অনুন্নত দেশের প্রাথমিক পর্যায়ে তারা শিক্ষার সেই প্রাচীন রীতিই অনুসরণ করছে। উন্নত এবং অনুন্নত দেশসমূহের মধ্যে এই বৈষম্য প্রতিরোধে “প্রযুক্তি স্থানান্তর’’ এ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। উন্নত দেশের প্রযুক্তিগুলো অনুন্নত দেশে স্থানান্তর করতে হবে।
এভাবে বৈশ্বিক শিক্ষাগত অসমতা রোধ করা যায়। আর এভাবেই সবাই মিলে সুন্দর এবং শিক্ষার আলোয় আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।
আরো ব্লগ পড়তে এখানে, ক্লিক করুন
লেখক
প্রত্যয় কান্তি দাশ
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE